Homeবিনোদনপ্রবীর মিত্রের প্রয়াণে শোকের ছায়া

প্রবীর মিত্রের প্রয়াণে শোকের ছায়া


রোববার রাতে চলে গেলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা প্রবীর মিত্র। রাজধানীর একটি হাসপাতালে জীবনের শেষ ১৪টি দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেন তিনি। প্রিয়জনদের কাঁদিয়ে চলে গেলেন ওপারে।

১৯৪১ সালের ১৮ আগস্ট চাঁদপুরের নতুন বাজারের গুয়াখোলায় মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন প্রবীর মিত্র। পুরান ঢাকায় বড় হওয়া প্রবীর মিত্র স্কুলজীবনেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন।

অজান্তা মিত্রকে বিয়ের সময় মুসলমান হয়েছিলেন প্রবীর মিত্র। তাই ইসলামের রীতি অনুযায়ী মৃত্যুর পর জানাজা শেষে দাফন করা হয় তাঁকে। গতকাল দুপুরে বাদ জোহর বিএফডিসিতে প্রথম জানাজা শেষে চ্যানেলে আই প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় তাঁর। এরপর ঢাকায় আজিমপুর কবরস্থানে প্রবীর মিত্রের দাফন সম্পন্ন হয়।

প্রিয় অভিনেতার প্রয়াণে দেশের শিল্পাঙ্গনে নেমেছে শোকের ছায়া। অভিনেতা, শিল্পী, সুরকার থেকে শুরু করে ভক্ত ও প্রিয়জনেরা তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত। প্রবীর মিত্রের প্রয়াণে শোক প্রকাশ করে অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘তাঁর মতো একজন অভিনয়শিল্পীর চলে যাওয়াটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত সজ্জন। ভালোবেসে বিয়ে করার সময় মুসলমান হয়েছেন। ভাবিকে উনি প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। শেষ বয়সেও তিনি ধর্মচর্চা করেছেন, নামাজ আদায় করেছেন, কোরআন তিলাওয়াত করেছেন। আমরা সকলেই যেন তাঁর জন্য দোয়া করি, আল্লাহ যেন তাঁর ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেন।’

মিশা সওদাগর বলেন, ‘প্রবীর মিত্রদা বরাবরই পরিচ্ছন্ন ও নিয়ন্ত্রিত জীবন কাটিয়েছেন। কখনো অনিয়ম করতে দেখিনি। উনার সঙ্গে আমি বহু সিনেমায় কাজ করেছি। তিনি এমন একজন শিল্পী, যাঁকে নিয়ে কেউ একটা কটু কথা বলতে পারেনি। ভাবির জন্য, ভালোবাসার জন্য উনি কতটা করেছেন, তা আমরা জানি। এ যুগের লাইলি-মজনু যদি বলেন, তাহলে উনি সেই মজনু।’

অভিনেতা সুব্রত বলেন, ‘ধীরে ধীরে যখন তাঁর বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা বেড়ে গেল, হুইলচেয়ার ছাড়া চলতে কষ্ট হতো, তখনো তিনি বলতেন, আমাকে ডাকে না কেন? হুইলচেয়ারে আছি তো কী হইছে? এমন একটা ক্যারেক্টার তৈরি করব! এই যে অভিনয় করার বাসনা, এটা তাঁর শেষ সময় পর্যন্ত ছিল। তাঁর এই চলে যাওয়া সত্যিই কষ্টের।’

অভিনেত্রী আনোয়ারার মেয়ে অভিনেত্রী মুক্তি বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সঙ্গে উনার (প্রবীর মিত্রের) খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। উনার এই চলে যাওয়া যতটা কষ্টের, তার চেয়ে আমার কাছে কষ্টের, আমার মাকে জানাতে পারছি না। বলতে পারছি না, উনার আপন মানুষগুলো এভাবে একে একে চলে যাচ্ছেন।’

জায়েদ খান তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘প্রবীর মিত্র দাদা আর নেই। স্রষ্টা তাঁকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, আমাদের শোক সইবার ক্ষমতা দাও।’

(ওপরে বাঁ থেকে) ইলিয়াস কাঞ্চন, মিশা সওদাগর, সুব্রত (নিচে বাঁ থেকে) মুক্তি, ইমন সাহা ও সাজ্জাদ হোসেন দোদুল

(ওপরে বাঁ থেকে) ইলিয়াস কাঞ্চন, মিশা সওদাগর, সুব্রত (নিচে বাঁ থেকে) মুক্তি, ইমন সাহা ও সাজ্জাদ হোসেন দোদুল

কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী শোক জানিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘চলচ্চিত্রে আমাদের আবেগের জায়গাজুড়ে ছিলেন প্রবীর মিত্র। অভিনয়ের বাইরে তিনি ছিলেন একান্ত নিভৃতচারী। তিনি চলচিত্রে সব সময় সৎ ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করতেন। আজ তিনিও চলে গেলেন জীবন থেকে পরপারে। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি।’

সুরকার ইমন সাহা লিখেছেন, ‘কী হচ্ছে কে জানে! ঈশ্বর কী চান, তা একমাত্র তিনিই জানেন। কয়েক দিন ধরে শুধু আপন মানুষ হারানোর বার্তাই দিয়ে যাচ্ছি। প্রবীর মিত্র কাকু আমাদের পরিবারের অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন। আমাদের চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি সিনেমায় তাঁর উপস্থিতি ছিল। তাঁর মতো ভালো মানুষ এ জগতে বিরল। জীবনে কারও সঙ্গে উচ্চ স্বরে কথা বলেছেন বলে আমার চোখে পড়েনি। হাসিমুখ ছাড়া কোনো দিন দেখিনি। দীর্ঘদিনের অসুস্থতা জানার পরও এই চলে যাওয়া মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুন।’

অভিনেতা ও নির্মাতা সাজ্জাদ হোসেন দোদুল বলেছেন, ‘প্রিয় প্রবীর চাচার এই চলে যাওয়া সত্যিই কষ্টের। কিন্তু ঈশ্বরের বিধান আমরা মেনে নিতে বাধ্য। আমার বাবা আমজা­দ হোসেনের প্রায় সব সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। তাঁর জন্য বাবা আলাদাভাবে যত্ন নিয়ে চরিত্র তৈরি করতেন। আমার পরিচালনাতেও অভিনয় করেছেন তিনি। প্রবীর মিত্র যে কত বড় মাপের, কত বড় মানের অভিনয়শিল্পী ছিলেন, এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। আমি তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।’

একনজরে

জন্ম: ১৮ আগস্ট ১৯৪১, চাঁদপুরে মামার বাড়িতে

পারিবারিক পরিচয়: তাঁর ঠাকুরদা হরিপ্রসন্ন মিত্র ছিলেন কেরানীগঞ্জের তৎকালীন জমিদার। বাবা গোপেন্দ্র নারায়ণ মিত্র, মা অমিয় বালা।

শিক্ষাজীবন: সেন্ট গ্রেগরি মিশনারি হাইস্কুল, পোগোজ হাইস্কুল থেকে ১৯৬২ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৬৪ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট, ১৯৬৬ সালে বিএ পাস করেন।

অভিনয় শুরু: স্কুলজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটক দিয়ে। এরপর মঞ্চে নাটক করেছেন বেশ কিছুদিন।

অভিষেক সিনেমা: এইচ আকবরের ‘জলছবি’।

অভিনয় ক্যারিয়ার: ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘চাদর’, ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’সহ তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

জাতীয় পুরস্কার: ‘বড় ভালো লোক ছিল’ সিনেমার জন্য ১৯৮২ সালে সেরা পার্শ্ব-অভিনেতার পুরস্কার পান।

ক্রীড়াজীবন: ষাটের দশকে খেলেছেন ঢাকা ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেট। এ ছাড়া হকি ও ফুটবলেও সুনাম ছিল তাঁর।

মৃত্যু: ৫ জানুয়ারি ২০২৫, ঢাকা।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত