Homeসাহিত্যলেখকদের রঙ্গ-রসিকতা

লেখকদের রঙ্গ-রসিকতা


লেখকদের ঘিরে মজার ঘটনা কম সূচিত হয় না। কিছু ঘটনা লেখক নিজে ঘটান, আবার কিছুটা ঘটে তাদের পরিপার্শ্বকে কেন্দ্র করে, বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে। যেভাবেই ঘটুক, মজাদার ঘটনাগুলো তেমন আলোচিত হয় না বললেই চলে। আড়ালেই থেকে যায়। এই শূন্যস্থানে আমরা বরং কিছু একটা বাতচিতের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টাই করি!

হুমায়ুন আজাদের সঙ্গে আহমদ ছফার সম্পর্ক ছিল সাপে-নেউলে। সুযোগ পেলেই পরস্পরকে ঘায়েল করার চেষ্টা করতেন। একবার বইমেলায় হুমায়ুন আজাদের স্ত্রী লতিফা কোহিনূরের পা ছুঁয়ে সালাম করলেন আহমদ ছফা। কারণ ব্যাখ্যা করে বললেন— ‘এমন একজন মানুষের (হুমায়ুন আজাদ) সঙ্গে সংসার করতে পারেন যিনি, তিনি অবশ্যই সালাম পাওয়ার যোগ্য!’
হুমায়ূনকে আহমেদ হেয় করে হুমায়ুন আজাদ বলতেন তিনি অপন্যাসিক। উপন্যাস রচনা করেন না, যা হয় সেটা মূলত ‘অপন্যাস’!

হুমায়ূন আহমেদ ও ইমদাদুল হক মিলনকে যৌথভাবে কাব্যগ্রন্থ উৎসর্গ করেছিলেন হুমায়ুন আজাদ। বইটির নাম ‘সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’। হুমায়ূন-মিলন দুজনেই মনে করলেন ‘বাণিজ্যিক ধারা’র ঔপন্যাসিক হিসেবে তারা দুজনই ‘নষ্ট’, এমন সূক্ষ্ম ইঙ্গিত রয়েছে উৎসর্গটিতে। ইমদাদুল হক মিলন প্রতিশোধ(!) নেওয়ার জন্য হুমায়ুন আজাদকে পাল্টা একটি বই উৎসর্গ করলেন। উপন্যাসটির নাম ‘বনমানুষ’। হুমায়ূন আজাদ এই ঘটনায় বিরক্ত হলেও হুমায়ূন আহমেদ মজা পেয়েছিলেন।
২০০৮ সালের দিকে ইন্টারনেট এতটা সহজলভ্য ছিল না। তাই অনেককেই ই-মেইল করার জন্য ছুটতে হতো সাইবার ক্যাফেতে। লিটল ম্যাগাজিন ‘খেয়া’ সম্পাদক, কবি পুলক হাসান আজিজ সুপার মার্কেটে গিয়েছেন ই-মেইল করতে। দোকানদারের দিকে পেনড্রাইভ বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘একটা ওয়ার্ড ফাইল মেইল করে পাঠাতে হবে।’
দোকানদার বললেন, ‘ই-মেইল অ্যাড্রেস বলেন।’
‘ই-মেইল না তো, আমার জিমেইল।’
‘জিমেইল বুঝেছি, আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেসটা তো বলবেন!’
‘আরে বাবা কতবার বলব— ই-মেইল নয়, আমার জিমেইল আছে!’ 
শেষপর্যন্ত কালজয়ী কম্পিউটার্সের ফারুক খানের মধ্যস্থতায় জিমেইল থেকেই ইমেইলটা করা গেল!
সম্প্রতি আরেকটা মজার ঘটনা বললেন পুলক হাসান। শীর্ষস্থানীয় একটি ওয়েব পোর্টালে নিয়মিত লেখেন তিনি। বিল জমতে জমতে পঁচিশ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। সেদিন সাক্ষাতে এ বিষয়ে বললেন, ‘আগামীকাল বিলটুর কাছে যাব। টাকা আনতে।’ 
‘কোন বিলটু?’
‘ডট কম অফিসের অ্যাকাউনটেন্ট।’
‘যাওয়ার আগেই নাম জানলেন কীভাবে!’
‘সহজ হিসাব। ইরষষ বিল দেয় যে, সেই তো বিলটু!’ 
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ উপন্যাস হাতে করে বাংলা একাডেমিতে গিয়েছেন দীপংকর গৌতম। সেখানে দেখা হলো ইংরেজি সাহিত্যের একজন অধ্যাপকের সঙ্গে। তিনি অবাক হয়ে দীপংকর গৌতমকে বললেন, ‘আপনাকে তো বিজ্ঞানমনস্ক ভেবেছিলাম!’

ঘটনাটা অন্তত দুই যুগ আগের। কোনো এক ঈদের পরে প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠার প্রথম (সিঙ্গেল) কলামে প্রকাশিত হয় টুকরো সংবাদটি। প্রকৃতিবিষয়ক ও কথাসাহিত্যিক আলম শাইনের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। ঈদের আগে বাড়ি যাওয়ার সময় বাসে পকেটমার তার পকেট কাটে। পরে পকেটমার ঠিকই লেখকের বাড়ি খুঁজে বের করে মানিব্যাগটি ফেরত দিতে এসেছিল। কারণ হিসেবে জানিয়েছিল— ‘আমার ওস্তাদ বলেছিলেন কখনো কোনো লেখকের পকেট কাটবি না!’

বর্তমানে সমাজে লেখকদের সম্মান নেই যারা বলেন, তারা অন্তত এখান থেকে সান্ত্বনা নিতে পারেন! পকেটমার শ্রেণির একজন অন্তত লেখকদের একটু সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন!

প্রতি বছর একুশে বইমেলা এলেই অপ্রত্যাশিতভাবে অনেকের বই বেরোয়। এমন একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন লেখক-নাট্যকার শাকুর মজিদ। একদিন গৃহকর্মী মহিলা জানালেন, ‘দুইডা বই বাইর করছি!’ 
অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘কোন প্রকাশনী থেকে?’
‘খাটের নিচ থিকা!’

গত বছর বেড়াতে গিয়েছিলাম ঝিনাইদহের শৈলকূপায়। পরদিন ভোরে আমার হোস্ট বঙ্গ রাখাল পাবনার উদ্দেশে রওনা হলেন। ওখানে তার অফিস। তবে আমি কী করব পইপই করে সেই নির্দেশনাও দিয়ে গেছেন। চড়িয়ার বিল-শেখপাড়া বাজার পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে যাব। এর পেছনের অংশ শান্তিডাঙ্গা গ্রামে থাকেন লোককবি আকছারুল ইসলাম। সেখানে গিয়ে তার সাক্ষাৎকার নেব। এসব শেষ হলে যাব শৈলকূপায়। তরুণ কবি বায়েজিদ চাষাকে গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গ রাখাল বলে রেখেছেন আমাকে সময় দিতে হবে। শৈলকূপায় গেলাম। বায়েজিদ চাষা চারপাশে ঘুরিয়ে দেখালেন। একসময় টিউশনিতে যেতে হবে বলে বিদায় নিলেন। তবে একা ছাড়লেন না, তার স্থলাভিষিক্ত হলেন কমরেড সুজন বিপ্লব। আমার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা শুনে সুজন বিপ্লব রসিকতা করে বললেন, ‘তাহলে রাখাল দিয়ে গেছে চাষার কাছে!’ বঙ্গ রাখালের এটা বানানো নাম, বায়েজিদ চাষার অবস্থা জানি না।

নিজের কথা যখন চলেই এলো, আরেকটা গল্প বলি। হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করলাম ঢাকা শহর ছেয়ে গেছে ‘স্বপ্নছোঁয়া’ চলচ্চিত্রের পোস্টারে। পোস্টার থেকে উঁকি দিচ্ছে নায়িকা ববি, নায়ক সাইমন সাদিক, ভিলেন মিশা সওদাগর প্রমুখের বদনখানি। পরিচালকের নাম আমার নামে— শফিক হাসান। একটু আশ্চর্য হলেও নিজেকে সামলে নিলাম। কমন নামের বিড়ম্বনার কারণেই তো নামে কিঞ্চিৎ সংস্কার আনলাম, তারপরও এমনটি ঘটল! তখনো বুঝতে পারিনি, নিজের বদনখানি আরও কত মলিন হবে। লেখক-প্রকাশকসহ বেশ কয়েকজন কল দিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে বললেন, ‘ভাই, আপনি সিনেমা বানালেন! আর আমরা রোল পেলাম না! নায়ক না হই অন্তত ভিলেন তো হতে পারতাম!’ 
নারীরা তো আর নায়ক হতে পারবে না, তাদের আবদার নায়িকা বানানো হয়নি কেন! সেটা করা না গেলে নায়িকার বান্ধবীর চরিত্রটাও কি দেওয়া যেত না?

সুমন মজুমদারসহ কেউ কেউ ফেসবুকে চলচ্চিত্র পরিচালক শফিক হাসান বলে ‘অপতথ্য’ ছড়াতেও কসুর করেননি। আগামীতেও নিশ্চয়ই তারা নামসংক্রান্ত এমন যন্ত্রণা দিয়ে যাবেন!

সেকালে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নামে দুজন লেখক ছিলেন। একদিন দুজনের দেখা হলে কম পরিচিত শরৎচন্দ্র বললেন, ‘আপনি নিশ্চয়ই চরিত্রহীন শরৎচন্দ্র?’

এই শরৎচন্দ্র ঘায়েল করার জন্য ‘চরিত্রবান’ শরৎচন্দ্রের একটি বইয়ের নাম বলে পাল্টা প্রশ্ন করলেন।
একই নামে দুজন লেখক থাকলে একটু খিটিমিটি লাগেই! সম্প্রতি একটি পাঠ-উন্মোচন অনুষ্ঠানের দাওয়াত কার্ড হাতে নিয়ে দ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম। উপন্যাসের নাম ‘উদ্বাস্তু’, লেখক আবদুল মান্নান সরকার। ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে বইটি নিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আলোচনা করবেন সরকার আবদুল মান্নান। লেখক আর আলোচক একই ব্যক্তি নাকি! খটকা দূর করার জন্য প্রশ্ন করলে প্রকাশক আবু এম ইউসুফ জানালেন তাদের দুজনেরই অভিন্ন নাম। একজন নামটাকে আগ-পিছ করিয়ে নিয়েছেন ভিন্নতা বোঝানোর জন্য!

একই নামে দুজন লেখক দেশে কম নেই। একইভাবে শামসুদ্দীন আবুল কালাম ও আবুল কালাম শামসুদ্দীনের নামও অভিন্ন। সম্পর্কে তারা নাকি মামা-ভাগ্নে। তো মামা-ভাগ্নেও পাঠককে বিভ্রান্ত করবেন বলে সমঝোতায় এলেন!

বাংলা কবিতার সুপরিচিত নাম টাঙ্গাইলের মাহমুদ কামাল। তার বিপরীত নামের আরেকজন লেখকও আছেন— কামাল মাহমুদ। একদিন মাহমুদ কামাল কল করলেন তার ‘বৈরী’ মিতাকে। ওই প্রান্ত থেকে কামাল মাহমুদ ‘কে বলছেন’ প্রশ্ন করলে মাহমুদ কামাল বললেন, ‘আপনি যা, আমি তার উল্টোটা। আপনি কামাল মাহমুদ আর আমি মাহমুদ কামাল!’

কী মজার আলাপচারিতা। লেখালেখির শুরুর দিকে এমন আমার সঙ্গে একটি মজা করতেন সুমন্ত আসলাম। কল করে ‘শফিক হাসান বলছি’ বললে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করতেন ‘কখন বললেন’!

কলকাতার ‘দেশ’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে আমাদের সাংবাদিক ও নাট্যকার ইমন চৌধুরীর গল্প। বন্ধুর গল্প, আগ্রহ নিয়েই পত্রিকা কিনলাম। পড়া শেষ করার আগেই ইমন চৌধুরী কল করে জানালেন তাজ্জব বিষয়টার কথা। ‘দেশ’ দপ্তর থেকে যোগাযোগ পরবর্তী বিলও পরিশোধ হয়ে গেছে। এমন অবস্থায় আবিষ্কার করলেন এই ইমন চৌধুরী তিনি নন, অন্য কেউ। কলকাতা বা আশপাশের অন্য কোনো অঙ্গরাজ্যে আরেকজন লেখক ইমন চৌধুরী আছেন! হয়তো এপারের ইমন চৌধুরীর গল্পটা প্রকাশিত হয়ে গেছে অন্য কোনো সংখ্যায়, কিংবা হয়নি। নিছক নামে নামে ভুল বোঝাবুঝির চিত্রনাট্য!

কবি জুটি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ও তসলিমা নাসরিনের বিয়ে বেশিদিন টেকসই হয়নি। ছাড়াছাড়ির পর পরস্পরকে নিয়ে পাল্টাপাল্টি কবিতা লিখেছিলেন তারা। শুরুতে লেখেন তসলিমা নাসরিন ‘দুধরাজ’ কবিতা— 

“কেউ শখ করে পাখি পোষে
কেউ-বা কুকুর
আর আমি এক-পা এগিয়ে গিয়ে
একজন কবিকে স্বগৃহে শখ করে পালন করেছি
পাখা নেই, তবু সে উড়াল দেবে
কেশরের কিচ্ছু নেই
তবু সে ঘাড়ের রোঁয়া ফুলিয়ে দাঁড়াবে
খেতে দিই
বুকের বল্কলে ঢেকে বলি
ঘুম যাও
কবি কি ঘুমায়?
বিড়াল-নরম হাত থেকে বের হয় তার ধারালো নখর
আঁচড়ে কামড়ে আমাকেই আহত করে
বাদুড়ের মতো ঝুলে থাকে আমারই পাঁজরায়
কবি কি ঘুমায়?
তারচে’ কুকুর পোষা ভালো
ধূর্ত যে শেয়াল, সে-ও পোষ মানে
দুধকলা দিয়ে আদরে-আহ্লাদে এক কবিকে পুষেছি এতকাল
আমাকে ছোবল মেরে দ্যাখো সেই কবি আজ কীভাবে পালায়।”
পশু-পাখির সঙ্গে তুলনা করে মারাত্মক সব গালি দেওয়া হলো। ‘তারচে কুকুর পোষা ভালো’ তসলিমার এমন আক্রমণে নাস্তানাবুদ রুদ্র। শুরুতে কুকুর দিয়েই লিখলেন পাল্টা কবিতা। আরও প্রাণীর সমাবেশ ঘটিয়ে ‘সামঞ্জস্য’ কবিতায় লেখেন—
“তুমি বরং কুকুর পোষো
প্রভুভক্ত খুনশুটিতে কাটবে তোমার নিবিড় সময়
তোমার জন্য বিড়ালই ঠিক
বরং তুমি বিড়াল পোষো
খাঁটি জিনিস চিনতে তোমার ভুল হয়ে যায়
খুঁজে এবার পেয়েছো ঠিক দিক ঠিকানা
লক্ষ্মী সোনা, এবার তুমি বিড়াল এবং কুকুর পোষো
শূকরগুলো তোমার সাথে খাপ খেয়ে যায়
কাদা ঘাটায় দক্ষতা বেশ সমান সমান
ঘাঁটাঘাঁটি ঘটঘটায় তোমাকে খুব তৃপ্ত দেখি
তুমি বরং ওই পুকুরেই নাইতে নামো
পঙ্ক পাবে, জলও পাবে
চুল ভেজারও তেমন কোনো আশঙ্কা নেই
ইচ্ছে মতো যেমন খুশি নাইতে পারো
ঘোলা পানির আড়াল পেলে
কে আর পাবে তোমার দ্যাখা!
মাছ শিকারেও নামতে পারো
তুমি বরং ঘোলা পানির মাছ শিকারে দ্যাখাও তোমার গভীর মেধা
তুমি তোমার স্বভাব গাছে দাঁড়িয়ে পড়ো
নিলিঝিলির স্বপ্ন নিয়ে আর কত কাল?
শুধু শুধুই মগজে এক মোহন ব্যাধি
তুমি বরং কুকুর পোষো, বিড়াল পোষো
কুকুর খুবই প্রভুভক্ত এবং বিড়াল আদর প্রিয়
তোমার জন্য এমন সামঞ্জস্য তুমি কোথায় পাবে?”

ইমন চৌধুরীর ‘৫০ হাসির গল্প’ বই প্রকাশিত হয়েছে খ্যাতনামা একটি প্রকাশনা থেকে। আরেক তরুণ লেখক সত্যজিৎ বিশ্বাস বইটি কিনে নিলেন একুশে বইমেলা থেকে। সেই রাতেই কল করলেন লেখককে। বললেন, ‘বইয়ে গল্প পেলাম ৪৯টা। কিন্তু টাকা দিলাম ৫০টার!’
হতবাক ইমন চৌধুরী গুনে দেখলেন আদতেই তাই। একটা গল্প কীভাবে যেন বাদ পড়ে গেছে। প্রকাশনীর সেই দুর্বলতা প্রকাশ না করে তিনি কৃত্রিম ঝাড়ি দিলেন, ‘আপনি আর কাজ পান না? গল্প গুনতে গেলেন কেন!’

কিছুদিন পরে লেখক নিজেই আবিষ্কার করলেন একটা গল্পের অর্ধেক ছাপা হয়েছে, অর্ধেকটা নেই। ইমন চৌধুরী চেপে গেলেন এটা। সত্যজিৎ বিশ্বাস জানতে পারলে এবার হয়তো ‘অবিশ্বাস্য’ ক্ষতিপূরণ চেয়ে বসবেন! 

এবার আমরা একটি গল্প বানাই। লেখক প্রকাশক সম্বন্ধে।
গভীর মনোনিবেশে কী একটা পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা করছেন প্রকাশক। এমন সময়ে প্রবেশ করল তরুণ কবি দবির পাটোয়ারী। মৃদু শব্দ করে দৃষ্টি আকর্ষণ করল প্রকাশকের। প্রকাশক উঠে দাঁড়িয়ে সম্ভাষণ করলেন তাকে— ‘আসুন’।
কবি ইতস্তত করে বলল, ‘কবিতার একটা পাণ্ডুলিপি এনেছিলাম।’ 
‘রেখে যান। মনোনীত হলে আপনাকে কল করে জানানো হবে। তখন ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে চুক্তি হবে। মনোনীত না হলেও আমরা লেখককে জানিয়ে দিই।’
‘ইয়ে… কত হাজার টাকা লাগতে পারে? টাকাগুলো জোগাড় করতে হবে তো!’
‘এক টাকাও লাগবে না। পাঠক বই কিনলেই তো আমার বিনিয়োগ উঠে আসবে। বেশি বিক্রি হলে উলটো আপনি রয়্যালিটি পাবেন।’
‘রয়্যালিটি নয়, আমি রিয়েলিটির কথা চিন্তা করি বেশি। কবিতার বই কেউ এখন কেনে নাকি? খোদ কবিরাই কেনে না!’
‘প্রচুর কেনে। সাধারণ পাঠকও কেনে। দিন পাল্টেছে না! মানুষ আবার বইয়ে ফিরেছে!’
এটা অবশ্যই আষাঢ়ে গল্প। তবে আমরা এমন আষাঢ় দিনের প্রত্যাশায়ই আছি। বাস্তবে ঘটলে মন্দ হতো না।

বানানো গল্পের চেয়ে হিরণ্ময় হিমাংশু ওরফে তালুকদার কবির সত্য ঘটনা বয়ান করাকেই তুলনামূলক উত্তম মনে করছি। দেশে বাকস্বাধীনতা নেই, থাকলে তার গল্পগুলো ‘ফাঁস’ করে দিতে পারতাম! একবার সর্বাধুনিক কবিতা লিখলেন তিনি। সম্পাদনার ভার পড়ল আমার উপর। দুর্বোধ্য কবিতা কাটতে কাটতেও সহজ করতে পারলাম না। বিষয়টা জানিয়ে কল করলাম তালুকদার কবিকে। তিনি উদার ভঙ্গিতে বললেন, ‘আরে কাটো, কাটতে থাকো, শুধু আমার নামটা রাখো। প্রয়োজনে শিরোনামটাও ফেলে দিতে পারো।’
‘কিন্তু উপরে-নিচে কিছু নেই, শুধু কবির নামটা ছাপা হলে এটা কী অর্থ বহন করবে? সূচির কোন বিভাগে বসবে নামটা!’
‘অর্থ অনর্থ বোঝার দরকার নেই। হয়তো আমার কবিতা থাকবে, নইলে নাম। কিছু একটা তো রাখতে হবেই!’
এই হচ্ছেন তালুকদার কবি। নিজের নাম ফাটানোর জন্য তিনি প্রচলিত নিয়মকানুনও পাল্টে দিতে চান!
অবশ্য শুধু তালুকদার কবিকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। নিজের নাম ফাটানোর কবি অকবি কুকবিসহ লোকে কত কীই না করে! কত টাকাপয়সা, ডলার খরচ করে। গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগি জীবন দেয় কবির মেহমানদের উদরপূর্তির জন্য।
এদিকে আমাদের টাকা-ডলার কোনোটাই নেই। নেই বলেই এখন সাধু সাজার পাঁয়তারা করছি। তালুকদারের খুঁত খুঁজছি!





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত