Homeদেশের গণমাধ্যমেনতুন পাঠ্যবইয়ে স্বাধীনতার ঘোষণার অংশে পরিমার্জন

নতুন পাঠ্যবইয়ে স্বাধীনতার ঘোষণার অংশে পরিমার্জন


বছরের প্রথম দিন পাঠ্যবই পায়নি বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। তবে অনলাইনে আপলোড করা হয়েছে ৪৪১টি বই। নতুন বছর ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা হয়েছে।

পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ অধ্যায়ে পরিমার্জন করা হয়েছে। প্রথমেই ব্যবহার করা হয়েছে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষাণীর ছবি। তারপর বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার ছবি।

এই অধ্যয়ের ‘পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা’ অংশে লেখা হয়েছে, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন মেজর জিয়ারউর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন কিনা তা নেই নতুন বইয়ে।

নতুন বইয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার নির্দেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানা ইপিআর সদর দফতর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও শিক্ষকদের বাসভবনসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে একযোগে আক্রমণ করে। এ সময় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের পুলিশ সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু হানাদার বাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের আক্রমণে তারা টিকে থাকতে পারেননি। সেই ভয়াল রাতে হানাদার বাহিনী দেশের অন্যান্য বড় বড় শহরেও আক্রমণ করে। তারা শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পুলিশ ও ইপিআর সদস্যসহ অসংখ্য নিরীহ বাঙালি জনগণকে হত্যা করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই আক্রমণের নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’। ওই রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। ২৬ মার্চ তারিখে মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর তিনি ২৭ মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আবারও স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ মানুষ শহীদ হন। এক কোটির বেশি মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে প্রাণের ভয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বাংলাদেশে নির্মম গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে প্রতিবছর ২৫শে মার্চ ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ পালন করা হয়।

পুরোনো বইয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা

আগের বছরের পাঠ্যবইয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা অংশে ছিল—১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার নির্দেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানা ইপিআর সদর দফতর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও শিক্ষকদের বাসভবনসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে একযোগে আক্রমণ করে। এ সময় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের পুলিশ সদস্যরা তাদের থ্রি-নট থ্রি রাইফেল দিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু হানাদার বাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের আক্রমণে তারা টিকে থাকতে পারেননি। সেই ভয়াল রাতে হানাদার বাহিনী দেশের অন্যান্য বড় বড় শহরেও আক্রমণ করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পুলিশ ও ইপিআর সদস্যসহ অসংখ্য নিরীহ বাঙালি জনগণকে হত্যা করে। এটি বিশ্বের বুকে নৃশংসতম গণহত্যা ও ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের এক ঘৃণিত উদাহরণ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর এই আক্রমণের নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’। ওই রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ বাঙালি শহীদ হন। এক কোটির বেশি মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে প্রাণের ভয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে সংঘটিত নির্মম গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে প্রতিবছর ২৫শে মার্চ ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ পালন করা হয়।

চতুর্থ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের মুক্তিযুদ্ধ অংশে পরিমার্জন

চতুর্থ শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ পাঠ্যবইয়ের ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ’ অধ্যায়ে পরিমার্জন করা হয়েছে একইভাবে। ২৬ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ২৭ মার্চ আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

এই অংধ্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের ছবির পাশাপাশি জিয়াউর রহমানের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত

বিগত সময় প্রাথমিকের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা পাঠ্যবইয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও পতাকা নির্মাণের নিয়মাবলি এবং জাতীয় সংগীত বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদের পরের পৃষ্ঠায় ছিল। এবার বইয়ের শেষ প্রচ্ছদের আগের পৃষ্ঠায় নেওয়া হয়েছে।

যুক্ত হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের বিষয়

পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ে ছয়টি প্রবন্ধ, কবিতা বা ছড়া নতুন করে যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ শীর্ষক প্রবন্ধে শহীদ তিতুমীর, ইলামিত্র, আসাদুজ্জামান, মফিজুর রহমান মল্লিক, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক, ড. মুহম্মদ শামসুজ্জোহাসহ ৯ জন শহীদের সঙ্গে যুক্ত করা হয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ছবি ও অবদান।

সব বইয়ের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অংশে একই পরিমার্জন

নবম ও দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা পাঠ্যবইয়ের ২৫ মার্চের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ অংশে স্বাধীনতার ঘেষণার জায়গায় পরিমার্জন করা হয়েছে। অন্যান্য বইয়ের মতোই এখানেও লেখা হয়েছে ‘২৬ শে মার্চ তারিখে মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর তিনি ২৭শে মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আবারও স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।’

এই অংশে গণহত্যার ছবি এবং মেজর জিয়াউর রহমানের ছবি সংযুক্ত করা হয়।

পাঠ্যবইয়ের পেছনে যুক্ত হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের দেয়াল লিখন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, ৫২ থেকে ২৪ ইতিহাস এভাবেই ফিরে আসে’সহ বিভিন্ন নীতিকথাও যুক্ত করা হয়েছে বিভিন্ন বইয়ে। বইয়ের শেষ মলাটে পেছনে শেখ হাসিনার ছবি ছিল, তা বাদ দেওয়া হয়েছে। 





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত