যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে আগ্রহী রাশিয়া, তবে এর জন্য প্রথম পদক্ষেপটি ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) তিনি এই মন্তব্য করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। রাশিয়ার আশা, ট্রাম্প প্রশাসন এই সম্পর্কের বরফ গলাতে উদ্যোগী হবে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
নিজেকে চুক্তি সম্পাদনে দক্ষ কারিগর হিসেবে তুলে ধরা ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত সমাপ্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে, তিনি কীভাবে এটি করবেন, তা এখনও স্পষ্ট করেননি। তার পরিকল্পনার মূল উপাদান হলো রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আলোচনার টেবিলে বসানো।
ট্রাম্পের মনোনীত ইউক্রেন-বিষয়ক দূত অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিথ কেলগ ১৮ ডিসেম্বর ফক্স নিউজকে জানিয়েছেন, উভয় পক্ষ শান্তি আলোচনার জন্য প্রস্তুত। তার মতে, ট্রাম্প এই যুদ্ধ বন্ধে চুক্তি করার জন্য আদর্শ অবস্থানে রয়েছেন।
ল্যাভরভ সাংবাদিকদের বলেছেন, যদি ওয়াশিংটন থেকে যে সংকেতগুলো আসছে তা সংলাপ পুনরুদ্ধারের জন্য আন্তরিক হয়, তবে আমরা অবশ্যই সাড়া দেব।
তবে তিনি বলেছেন, মার্কিনিরাই প্রথম এই সংলাপ বন্ধ করেছিল, তাই তাদেরই প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে।
রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ১৯৬২ সালের কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে। রাশিয়ার ২০২২ সালের আক্রমণ হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে, লাখ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং মস্কো-পশ্চিমা সম্পর্ককে চরম উত্তেজনায় ঠেলে দিয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা রাশিয়াকে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ও মার্কিন নাগরিকদের মিথ্যা অভিযোগে কারাগারে পাঠানো এবং মিত্র দেশগুলোর বিরুদ্ধে নাশকতা চালানোর অভিযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
অন্যদিকে, রাশিয়া বলছে, যুক্তরাষ্ট্র একটি পতনশীল শক্তি যা ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে রাশিয়ার স্বার্থকে উপেক্ষা করে এসেছে। তারা আরও অভিযোগ করে আসছে যে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার অভ্যন্তরে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে এবং এর মাধ্যমে নিজের স্বার্থ রক্ষা করছে।
রয়টার্স গত মাসে জানিয়েছিল, পুতিন ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক। তবে তিনি কোনও বড় ধরনের ভূখণ্ড ছাড় দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি দেননি এবং কিয়েভকে ন্যাটোতে যোগদানের ইচ্ছা পরিত্যাগ করতে বলেছেন। বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে।
ল্যাভরভ বলেছেন, রাশিয়া সাময়িক যুদ্ধবিরতির কোনও উদ্দেশ্য দেখছে না। বরং মস্কো একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তি চায়, যা রাশিয়া এবং তার প্রতিবেশীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
তিনি বলেন, একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি কোথাও নিয়ে যাবে না। আমাদের একটি আইনি চুক্তি প্রয়োজন, যা এই অঞ্চলের নিরাপত্তার শর্তগুলো স্থায়ীভাবে নির্ধারণ করবে।
পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমারা সোভিয়েত পরবর্তী সময়ে রাশিয়ার স্বার্থ উপেক্ষা করেছে এবং ইউক্রেনকে ২০১৪ সাল থেকে তাদের প্রভাব বলয়ে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এর পরপরই রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে এবং পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থি বিদ্রোহীদের সমর্থন দিতে শুরু করে।
পশ্চিমারা বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ একটি সাম্রাজ্যবাদী ভূমি দখলের প্রচেষ্টা। তবে এই আক্রমণ ন্যাটোকে শক্তিশালী করেছে এবং রাশিয়াকে দুর্বল করেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্প্রতি বলেছেন, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ অর্জন সম্ভব। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য আমাদের পশ্চিমা মিত্রদের রাজি করাতে লড়াই করতে হবে।