গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ ও তাঁর স্ত্রী-কন্যাসহ পাঁচজনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একই সঙ্গে তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব স্থগিত রাখতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিও হিসাব স্থগিত করা ব্যক্তিরা হলেন—গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, তাঁর স্ত্রী তাহমিনা রহমান লাভলি, মেয়ে আজমিরী রহমান স্বর্ণা ও আজমাইন রহমান অঙ্কন এবং জামাতা শেহরিন বিনতে হাশেম।
বিএফআইইউর নির্দেশনা অনুযায়ী, ওই ব্যক্তিদের বিও হিসাব এবং ব্যবসায়িক হিসাবে সব ধরনের লেনদেন আগামী ৩০ দিন বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে লেনদেন স্থগিত করার সময় বাড়ানো হবে।
বিএফআইইউর এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই পাঁচজনের ব্যাংক হিসাব ও বিও হিসাবে সন্দেহজনক লেনদেন খতিয়ে দেখতে সেগুলো জব্দ করা হয়েছে।
লেনদেন স্থগিত করার এ নির্দেশের ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালার সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে বলে বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে আসাদুর রহমান কিরণ, তাহমিনা রহমান লাভলি, আজমিরী রহমান স্বর্ণা, আজমাইন রহমান অঙ্কন এবং শেহরিন বিনতে হাশেমের নাম, পিতা-মাতার নাম এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেওয়া হয়েছে।
বিএফআইইউর নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, যেসব হিসাব স্থগিত করা হয়েছে, সেগুলোর সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল, যেমন—হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ফরম ও হিসাব খোলার তারিখ থেকে হালনাগাদ লেনদেন বিবরণী পাঁচ দিনের মধ্যে বিএফআইইউতে পাঠাতে হবে।
২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন আসাদুর রহমান কিরণ। পরবর্তীতে সেই সময়ের মেয়র অধ্যাপক মান্নান সাময়িক বরখাস্ত হলে প্যানেল মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। প্রথম মেয়াদে ২৭ মাস ১৩ দিন দায়িত্ব পালন করেন।
এরপর ২০১৮ সালের গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়লাভ করেন জাহাঙ্গীর আলম। সেবারও টঙ্গী ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন কিরণ। নির্বাচনের তিন বছর পর জাহাঙ্গীরকে সাময়িক বরখাস্ত করার পর ২০২১ সালের নভেম্বরে ভারপ্রাপ্ত মেয়র নির্বাচিত হন কিরণ। ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম সফিউল আজমের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে মেয়র পদ ছাড়েন কিরণ। ফলে দুই মেয়াদে ৪ বছর ১৩ দিন তিনি গাজীপুরের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন আসাদুর রহমান কিরণ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র আন্দোলনে বাধা, হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি তিনি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর গত ১৯ নভেম্বর ভারতে পালানোর চেষ্টা করেন হিরণ। এ সময় যশোরের শার্শা সীমান্ত থেকে তাঁকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।