Homeমতামতলাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতারঃ শুমার করিয়া দেখিল পৌনে এক হাজার

লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতারঃ শুমার করিয়া দেখিল পৌনে এক হাজার

আআলি শরিয়তিলি শরিয়তি

আলি শরিয়তি

গত ২১ ডিসেম্বর সরকারের গঠিত ‘গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ ৮৫৮ জন নিহত এবং ১১৫৫১ জন আহত ব্যক্তির প্রাথমিক খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে ।

এই প্রতিবেদন নিয়ে আলি শরিয়তির বিশ্লেষণ এখানে তুলে ধরা হল,”লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতারঃ শুমার করিয়া দেখিল পৌনে এক হাজার”

এই তালিকায় উল্লেখিতদের একটি বড় অংশেরই পেশার কথা উল্লেখ নেই। নিহতের মধ্যে ২০০ জনকে শিক্ষার্থী বলা হয়েছে। সেই হিসাবে নিহতের ২৩ শতাংশই শিক্ষার্থী। ইতিপূর্বে ইসলামী ছাত্রশিবির জানিয়েছিল তাদের ৮৭ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছে (১৯ আগস্ট, https://rb.gy/v20wft)। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জানিয়েছিল, তাদের ৪৯ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছে (২১ আগস্ট, ২০২৪ https://rb.gy/zb2cbj)। তাহলে ২০০ জনের মধ্যে (৮৭+৪৯) ১৩৬ জন দুটি দলের নেতাকর্মী। বাকী রইল ৬৪জন। এই ৬৪জনের মধ্যে হয়ত ২০জন পাওয়া যাবে, যারা পথচারী হিসেবে মারা গেছেন, যাদের আন্দোলনের সঙ্গে কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। ডজন দেড়েক পাওয়া যাবে ছাত্রলীগের কর্মী। এভাবে হয়ত সংখ্যাটা হয়ত ৩০ এর নিচে নেমে আসবে, যারা প্রকৃতই আন্দোলনে গিয়েছিল এবং নির্দলীয় ছাত্র। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই ২০০জন ছাত্রের কে কোথায় পড়াশোনা করতেন, তা উল্লেখ করা হয়নি। এতে সন্দেহ করার যথেষ্ট অবকাশ তৈরি হয়েছে যে, ২০০ জন সিলেক্ট করার ক্ষেত্রে জন্ম তারিখকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। বাস্তবতা হলো একই বয়সের একজন স্কুল-কলে-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যায়, আরেকজন মুদি দোকানে বা অন্য কোথাও শ্রম বিক্রি করতে যায়। এই চিত্র বাংলাদেশের খুব স্বাভাবিক দৃশ্যপট। তাহলে বয়সের বিচারে কে ছাত্র আর কে শ্রমিক তা নির্ধারণ করা নিতান্তই বালখিল্যতার পরিচায়ক। আর এই শহীদ ছাত্রদের নিয়ে কত ব্যবসা-বক্তব্য-বয়ান কতকিছু চলছে।

চার মাস ষোল দিন পরে এসে সরকার ঘোষণা করল শহীদের সংখ্যা ৮৫৮জন। তাও আবার একটা ‘কিন্তু’ রেখে যে, এই সংখ্যা পরিবর্তন হতে পারে। অথচ বিগত সময়গুলোতে দেখা গেছে শহীদের সংখ্যা নিয়ে নানাজনের নানান মত, নানান সংখ্যা, নানান তথ্য-উপাত্ত নিয়ে মনগড়া আলাপ করতে।

সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন আন্দোলনে ১০০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ১৬ আগস্ট, https://shorturl.at/oHl8d

আন্দোলনে বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের অন্তত ১১৭ নেতাকর্মী নিহত হয়েছে বলে দৈনিক সমকাল ১৯ আগস্ট https://rb.gy/v20wft নিউজ ছেপেছিল। ছাত্রদল বলেছে তাদের ৪৯ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। অঙ্গসংগঠন হিসেবে ছাত্রদলের ৪৯জন ছাড়া বাকী ৬৮ জন হলো বিএনপির নেতাকর্মী। মজার ব্যাপার হলো, ১৫ সেপ্টেম্বর, https://shorturl.at/dZfQl বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছিল আন্দোলনে বিএনপির ৪২২ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছে। https://shorturl.at/r4wu5

মির্জা সাহেবের মজার আলাপ এখানেই শেষ নয়, বরং শুরুটা আরও আগে থেকে। একটু ফ্ল্যাশ ব্যাকে যাওয়া যাক।

১৭ই জুলাই মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে বিএনপি জড়িত নয়।‘ ভিডিও লিংক- https://shorturl.at/vNqsc। নিউজ লিংক- https://shorturl.at/tEBC0। এরপরে ২৫শে জুলাই মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে বিএনপি অথবা বিরোধীদলের কেউ জড়িত নয়, দাবি ফখরুলের।‘ দৈনিক যুগান্তর, https://shorturl.at/KsrLY। যারা আন্দোলনে শুধু নৈতিক সমর্থন দিল, তাদের কর্মীরা কিভাবে মারা গেলেন?

অবশ্য ৫ আগস্টের পরে অবস্থা বদলে গেছে। আন্দোলনের ক্রেডিট নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়েছে।

১৬ আগস্ট https://shorturl.at/OzP0M মির্জা ফখরুল বলেনে, ‘বিএনপি আন্দোলনের ভিত গড়েছিল, ছাত্ররা বাস্তবায়ন করেছে।‘

২১ সেপ্টেম্বর https://shorturl.at/mCrYN বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘তারেক রহমান সরকার পতন আন্দোলনের মূল কারিগর।‘

১২ অক্টোবর https://shorturl.at/prtLB বিএনপি নেতা শামছুজ্জামান দুদু বলেন, ‘ছাত্র জনতার আন্দোলনের একমাত্র মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমান।‘ ২৪ অক্টোবর https://shorturl.at/hHKSo বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘তারেক রহমানই ছাত্র আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড।‘ ২৭ অক্টোবর https://shorturl.at/TlaQA বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদিন ফারুক বলেন, ‘আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমান।‘ প্রিয় পাঠক, আপনার এখন যা বোঝার বোঝে নেন এবং যা ভালো মনে করেন।

শহীদের সংখ্যা জানানো হয়েছে ৮৫৮জন। এখন এই সংখ্যা থেকে বিএনপির ৪২২ এবং জামায়াত-শিবিরের ৮৭ জন, মোট ৫০৯জন বাদ দিলে বাকী থাকে ৩৪৯জন। ছাত্র ২০০ জন মাইনাস করলে থাকে ১৪৯জন। এরাই কি তাহলে রিক্সাওয়ালা, শ্রমিক, শিশু ?

আচ্ছা, নিহত পুলিশের স্থান এই তালিকায় হলো না কেন? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামও এই তালিকায় যুক্ত হয়নি। এরা সবাই ফ্যাসিস্ট ও ফ্যাসিস্টের দোসর ?

নিহত-আহতের সংখ্যা নিয়ে পূর্বাপর কিছু কথাঃ

গত ৯ সেপ্টেম্বর https://shorturl.at/dKZtO স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বা এমআইএস শাখা থেকে জানানো হয়েছিল, আন্দোলনে ৬৩১ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ১৯২০০ জনের বেশি। ২৯ সেপ্টেম্বর https://shorturl.at/Joc9X স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বা এমআইএস শাখা থেকে প্রকাশিত তালিকায় জানানো হয়েছিল, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৭১৭ জন নিহত হয়েছে।‘ চার মাস পরে সেই সংখ্যা পরিবর্তিত হয়ে শহীদ ৮৫৮ জন এবং আহত ১১৫৫১ জন হয়েছে। অর্থাৎ, নিহত বেড়েছে কিন্তু আহত কমেছে।

১৩ সেপ্টেম্বর https://rb.gy/1y2tht মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) রিপোর্ট প্রকাশ করে জানিয়েছিল, আন্দোলনে ১৬ জুলাই থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮৭৫ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। প্রায় চার মাস পরে সেই সংখ্যাও পরিবর্তিত হয়ে নিহত এবং আহত দুটিতেই কমেছে।

২০ সেপ্টেম্বর https://shorturl.at/PF0in বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য সচিব ও সমন্বয়ক তারেকুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, আন্দোলন ঘিরে এখন পর্যন্ত ১৪২৩ জন শহীদ এবং আহত হয়েছেন প্রায় ২২ হাজার। তিন মাস পরে নিহত ও আহত সকল সংখ্যাই কমে গেছে। এই একই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২৮ সেপ্টেম্বর https://rb.gy/n6e6rw জানানো হয়েছিল, আন্দোলনে ১৫৮১ জন নিহত এবং ৩১০০০ এর বেশি ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। আন্দোলনে নিহত ও আহতদের সংখ্যা আরও বেশি বলেও তারা দাবি করেছিল সেদিন। প্রায় তিন মাস পরে সেই একই গোষ্ঠী তালিকা করলো এবং সরকারী সকল মেশিনারিজ, ম্যাকানিজম ও আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে প্রকাশিত তালিকায় দেখা যাচ্ছে সংখ্যাটা কেবলই কমেছে।

২০ অক্টোবর https://shorturl.at/Oo8tA ছাত্রনেতা সারজিস আলম পঞ্চগড়ে এক সভায় বলেছিলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনে শহীদের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি।‘ সেই সংখ্যা গেলো কোথায় ?

গত ২৭ অক্টোবর https://shorturl.at/r0q2m আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রাজধানীতে ‘সহস্রাধিক শহীদ পরিবার সদস্য নিয়ে মতবিনিময়’ সভা করেন জামায়াতে ইসলামী। সহস্রাধিক শহীদ পরিবার কোথায় পেয়েছিলেন জামায়াতে ইসলাম?

১৬ আগস্ট https://shorturl.at/30izY জেনেভা থেকে প্রকাশিত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও অস্থিরতা বিষয়ে প্রাথমিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষোভ ও পরবর্তী সহিংসতায় কমপক্ষে ৬৫০ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন।

২৪ আগস্ট https://shorturl.at/3GLek দৈনিক প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ছাত্র–জনতার আন্দোলন: মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, এখন পর্যন্ত ৭৫৭জন।

২১ ডিসেম্বরে সরকারের অর্থ শ্রাদ্ধ করে তৈরি তালিকায় দেখা যাচ্ছে অতীতের সকল হিসাব নিকাষ উলটে গেছে, খোদ জাতিসংঘের হিসাবও।

খুব শীঘ্রই দেখা যাবে, ইতিপূর্বে উল্লেখিত নিহত-আহতের তালিকা নিয়ে প্রকাশিত নিউজগুলো সরকারের নির্দেশে সরিয়ে ফেলা হবে। প্রমাণ হিসেবে এটুকুও উল্লেখ করে রাখলাম।

#আলিশরিয়তি

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত