সরদার আলী যাকের ডিউক
বাংলাদেশে মেটিকুলাস খুনের রাজনীতি চালু করেছিলো জামাত ও পাকিস্তান ১৯৭১ এ। বঙ্গবন্ধু সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা করে প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন বাঙালিকে। যার ফল স্বরূপ পরিবারসহ তাকে নির্মম মৃত্যুর পরিণতি ভোগ করতে হয়। সেই যে নৃশংসতার শুরু হয় রাজনীতিতে, তার পরিক্রমায় খুন হন বাংলাদেশের আরেক রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান। এরপর একে একে অনেকগুলো হত্যা চেষ্টা করা হয় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উপর।
তবে বাংলাদেশ পরিচ্ছন্ন রাজনীতির একটা সময় পার করে খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার আমলে। রাজনৈতিক যুদ্ধ ছিল, ছিল না প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে খুন করে ফেলার পরিকল্পনা। সেই পরিচ্ছন্ন রাজনীতিতে হঠাৎ করে এক যুবরাজের আগমন ঘটে, তিনি আবার খুনের রাজনীতি চালু করলেন। জন্ম দিলেন একুশে আগস্ট এর মত ন্যাক্কারজনক ঘটনার। মায়ের শুদ্ধ রাজনীতির ধারা থেকে সরে এসে ভয়ঙ্কর প্রতিহিংসার রাজনীতিতে নামলেন। হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে বাঘা বাঘা নেতারাও।
প্রতিপক্ষকে মাঠের রাজনীতিতে টিকতে না দেয়ার কট্টর পন্থা গুলোর সাথে পরিচিত হতে থাকলো দেশ। রাজনৈতিক সহিংসতার ভয়ংকর এক রাজনীতি শুরু হলো দেশে। নিয়ে আসলেন র্যাব। তিনি পরিচিত করে গেলেন ঠিকই এমন এক সহিংস রাজনীতির সাথে কিন্তু খুব বেশিদিন এর মাধ্যমে টিকে থাকতে পারলেন না। সেই যে শুরু হলো। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের শাসনামলে, তার এই পদ্ধতি জনপ্রিয়তা পেলো। যুবরাজ শুরু করেছিলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিপক্ষকে দমিয়ে রাখতে তা অনুসরণ করেছে। এইবার বাংলাদেশ আর এক ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট দেখলো, একজন রাষ্ট্রনায়ককে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় মেরে ফেলার যে ভয়ংকর পরিকল্পনা করা হয়েছিলো যদিও তা মহান আল্লাহতালার কৃপায় সফল হয়নি। কিন্তু তার ঠিক পর পরই যেভাবে মব জাস্টিস এর মাধ্যমে হাজারো পুলিশ হত্যা হলো, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হলো, একটি প্রজন্মের একটি অংশকে বেয়াদবির চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হলো। এর শেষ কোথায়, কে জানে?
শুধুমাত্র দলীয় শ্লোগান লিখার কারণে গতকাল দুজনকে হত্যা করা হলো।চাঁপাইয়ের নাচোলে জয় বাংলা দেয়ালে লেখায় ছাত্রলীগ নেতা মাসুদকে। পলিটেকনিক সভাপতি রায়হান নামে আরো একজন ছাত্রলীগের ছেলেকে হত্যা করা হলো। জুলাই থেকে হয়ে আসা সবগুলো মৃত্যু এবং তার পরবর্তী মৃত্যু গুলোর দায়ভার কার উপর বর্তায়? রাজনীতির গুরুজনেরা কি একবারও ভেবে দেখেছেন এর শেষ কোথায় হবে?
আপনারা যদি দেশকেই ভালবাসতেন তবে এই রক্তাক্ততা, এই হানাহানি আপনারা চাইলে অচিরেই বন্ধ করতে পারতেন। পৃথিবী কখনোই এক জায়গায় আটকে থাকে না। পৃথিবী ঘুরবেই, সময় ঘুরবেই, একজনের দিন ফেরত গিয়ে আরেকজনের দিন ফেরত আসবে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী যেমন নয়, কারো দুঃসময় ও চিরস্থায়ী নয়। নিজেদের সন্তানকে আপনারা যেভাবে ভালবাসেন তার কিঞ্চিৎ অন্যের সন্তান কেও ভালোবাসতে শিখুন। এই হানাহানি ও সহিংসতার অবসান ঘটান। দেশের রাজনীতি থেকে দেশদ্রোহীদের চিরতরে বিদায় করুন।
এই দেশ সৎ, অসৎ, যোগ্য, অযোগ্য, চোর, বাটপার সহ সমস্ত আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সহ সকল রাজনৈতিক দলের জন্য হোক, এই দেশ শুধুমাত্র জামাত, হিজবুত ও দেশদ্রোহীর না হোক। সে তরুনের নাম বাংলাদেশ। তার মায়ের ভাষা ছিল ‘জয়বাংলা’। মায়ের ভাষা উচ্চারণের পর সে শহীদ হল নাচোলে। সে তরুনের নাম ছিল বাংলাদেশ। সে শুধু শিখেছিলো লিখতে দুটো মাত্র শব্দ। তার বুক খোদাই করে লিখেছিলো দুটো মাত্র অক্ষর। সমস্ত রাজত্ব ও কুর্নিশ থেকে উঁচু. সকল কৃষ্ণরঙ থেকে একান্ত জ্বলজলে। তারপর ঘাতক খঞ্জর চালিয়ে দিলো তার বুকেতে খোদিত ‘জয় বাংলা ‘ বরাবর। চাঁপাইনবাবগঞ্জ এর মাসুদ এবং রায়হান- গতকাল যারা জয় বাংলা স্লোগানে আলোকিত করেছিলো আমাদের! হাসপাতাল থেকে তাদের বাড়ি যাওয়ার এই পথ অনন্ত অসীমে মিশে গেলো। আমরা তোমাদের নাম হৃদয়ে লিখে নিলাম।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
বাস্তবতা ভিত্তিক এবং অসাধারন লেখনি
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু ❤️❤️
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু ❤️