Homeজাতীয়উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পরীক্ষার মাধ্যমে

উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পরীক্ষার মাধ্যমে


সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ে উপসচিব এবং যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। চাকরিতে নিয়োগসহ বিভিন্ন কাজে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিষয়টি তুলে দেওয়ার সুপারিশও করা হবে।

এ ছাড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডার বিলুপ্ত করে এই ক্যাডারের কর্মকর্তাদের আলাদা সার্ভিসের অধীনে নেওয়ার, কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ ঘোষণা করার এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন করার সুপারিশ করবে এই কমিশন।

সচিবালয় বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার মতবিনিময় সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং কমিশনের সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এসব তথ্য জানান। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এই মতবিনিময় সভা হয়।

দলীয় বিবেচনায় ক্যাডার পদে পদোন্নতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, পরীক্ষা ছাড়া আর কেউ পদোন্নতি পাবেন না। পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) পরীক্ষা নেবে এবং ৭০ নম্বর না পেলে পদোন্নতি পাবেন না।

উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে এটি হবে না। উপসচিব এবং যুগ্ম সচিব—এই দুই পর্যায়ে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি হবে। এরপরের পর্যায়ে সরকার পদোন্নতি দিতে পারবে। তিনি বলেন, পরীক্ষায় যদি কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তা সবচেয়ে বেশি নম্বর পান, তিনি তালিকায় এক নম্বরে চলে আসবেন। উপসচিবের তালিকায় তিনি এক নম্বরে আসবেন।

উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করা হবে বলে জানান কমিশনের প্রধান। বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডার বিলুপ্তির প্রস্তাব করা হবে

শিক্ষক ও চিকিৎসকদের মর্যাদার বিষয়টি মাথার রেখে তাঁদের ক্যাডার সার্ভিস থেকে বের করে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো আলাদা কমিশনের অধীনে নেওয়ার প্রস্তাব করবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, ‘স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডার নিয়ে আমরা সুপারিশ দিচ্ছি, এটা আর এভাবে ক্যাডার করে রাখা যাবে না। এই দুই ক্যাডারকে আলাদা করে বিশেষায়িত বিভাগ করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘এই দুটিকে ক্যাডার করা অযৌক্তিক হয়েছে। এগুলোকে আলাদা করতে হবে। স্পেশালাইজ ডিপার্টমেন্ট হিসেবে বেতন বাড়িয়ে দিতে হবে। এই দুই ডিপার্টমেন্ট ছাড়া বাকি সব ক্যাডার থাকতে পারবে। এটা আমাদের ধারণা, এখন আমরা এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করব।’

এ বিষয়ে জনপ্রশাসনসচিব বলেন, ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে বেরিয়ে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন আলাদা হয়েছে। সেভাবে আমরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে আলাদা করার পরামর্শ দেব। এতে একটা বিরাট সেগমেন্টেশন হয়ে যাবে। অন্য ক্যাডারগুলোকে নিয়ে পাঁচটি গুচ্ছ হবে।’

পুলিশ ভেরিফিকেশন উঠিয়ে দেওয়ার পক্ষে কমিশন

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘চাকরিতে নিয়োগসহ বিভিন্ন ব্যাপারে পুলিশের ভেরিফিকেশন একটি বাধ্যতামূলক বিষয়। আমরা সুপারিশ করছি, কোথাও এটা থাকবে না। আপনি নাগরিক, পাসপোর্ট নেবেন, আপনার নাগরিক অধিকার। আপনাকে পুলিশ ভেরিফিকেশন কেন করতে হবে? ইংল্যান্ডে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে পোস্ট অফিসে পাসপোর্ট চলে আসে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটা কমিশন আছে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী জানি না। কিন্তু আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বা আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি হলো এটা।’

বিভাগ হবে কুমিল্লা ও ফরিদপুর

জনপ্রশাসনসচিব বলেন, কমিশনের প্রধান সুপারিশগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ করা। ওই এলাকার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন দুটি বিভাগ করার পরামর্শ দিচ্ছে। এই দুটি বিভাগ করতে গেলে দু-একটি জেলা এই বিভাগ থেকে ওই বিভাগে দিতে হবে। সেটা তাঁরা ম্যাপ করে দিয়েছেন। নতুন দুই বিভাগ করতে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোকে এদিক-সেদিক করার সুপারিশ করবে কমিশন।

ছাত্র প্রতিনিধির বক্তব্য নিয়ে হট্টগোল

মতবিনিময় সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসানের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে হট্টগোল হয়। মেহেদী হাসান সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি একটি বিষয়ে খুব আশাহত হয়েছি। আপনারা (সাংবাদিক) অনেক কষ্ট করেছেন, অনেক জায়গা থেকে কথা বলেছেন, অনেক ভালো কথা বলেছেন। জনপ্রশাসন সম্পর্কে আপনাদের কিছু বিষয় একটু চিন্তাভাবনা করে পড়াশোনা করে আসার দরকার ছিল। সেই জায়গায় একটু ঘাটতি দেখা গেছে।’

সাংবাদিকেরা জানতে চান, তাঁর কাছে কী ঘাটতি মনে হয়েছে? এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও তর্কে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, যিনি ওই কথা বলেছেন, তিনি এখনো ছাত্র। তাঁর সার্বিক পরিস্থিতি জানা সম্ভব নয়। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়।

সরকারি কর্মকর্তাদের স্যার ডাকার নিয়ম আর নেই

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর সরকারি কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ ডাকার নিয়ম আর নেই বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। সচিবালয়ে গতকাল এক অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের ভাই ও আপা ডাকা যাবে।’

সচিবালয় বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিকালে এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, ‘বিগত সরকার জেন্ডার চেঞ্জ করে দিয়েছিল। পুরুষ-মহিলা সবাইকে বাধ্যতামূলক স্যার ডাকতে হতো। আপনারা জানেন, গত ৫ আগস্টের (গণ-অভ্যুত্থানের সরকার পতনের) পর থেকে এটা শেষ। এখন পুরুষ অফিসারদের জনাব বা মিস্টার, নারী অফিসারদের মিস অথবা ম্যাডাম বা এমএস লিখতে পারেন, কোনো অসুবিধা নেই।’

বিদেশে প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্টকে তাঁদের নাম ধরে ডাকা হয় জানিয়ে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, ‘আমাদের দেশে বাইনেমে ডাকার কালচার নাই। ভাই তো ডাকতেই পারে। আমাকে যদি এসে কেউ ভাই বলে, সচিব হিসেবেই, আই নেভারমাইন্ড। এসি ল্যান্ড, ইউএনও, ডিসি হিসেবে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা তো সমাজের অংশ, তাঁরা আসলে ভাইবোন। মাঠে এখন নারী কর্মকর্তা বেশি, তাঁরা ভালো করছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভাই ডাকা মানে অসম্মান করা নয়, ভাই ডাকা মানে আপন হওয়া।’ আর মেয়েদের ব্যাপারে বলি, ‘ম্যাডাম ডাকলেও খুশি, আপা ডাকলেও খুশি, সবচেয়ে খুশি হয় আপু ডাকলে।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত