Homeমতামত‘ফাউন্ডিং ফাদার্স’ !

‘ফাউন্ডিং ফাদার্স’ !

বাংলাদেশ একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ। মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। যে দেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মপ্রাণ মুসলমান। সেই দেশেই জাতি বা রাষ্ট্রের পিতা হিসেবে কয়েকজনকে নির্ধারণ করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি এমন বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি ‘ফাউন্ডিং ফাদার্স’ এর কথা উল্লেখ করেছেন।


নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, বর্তমান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক মনে করে না। এমনকি ৭ মার্চের দিবসটিও রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপনে বাতিল করা হয়েছে। ফলে এই সরকার যে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ভূমিকা নিচ্ছে সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আমার প্রশ্ন সেটা নয়। এই সরকার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা নিলেই যে মুক্তিযুদ্ধের কথা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা মানুষ ভুলে যাবে তা নয়। কারণ সাংবিধানিকভাবে এই সরকারই অবৈধ।


আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কাদের পরামর্শে একটি মুসলিম দেশে কয়েকজন জাতির জনক করার ষড়যন্ত্র চলছে? সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় এই যে, যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে ধর্মকে ব্যবহার করে এবং হিন্দু অধ্যুষিত প্রতিবেশি দেশ ভারতের বিরোধিতা করে সেই সরকারই আবার ধর্মের ১২ টা বাজানোর চক্রান্ত করছে। ধর্মকে তারা রাজনীতির ব্যবসায় কাজে লাগাতে শুরু করেছে।


এখন আসি বিশে^র কোনো মুসলিম দেশে কী জাতির পিতা একের অধিক আছে? আমার জানা মতে, নেই। বিশে^র সব দেশে আবার জাতির পিতা নেইও। অন্তত ৬৮টি দেশের নাম পাওয়া যায় যাদের জাতির পিতা একজন। এর মধ্যে সব মুসলিম দেশেই একজন জাতির পিতা বা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা আছে। অথচ বর্তমান সরকার ‘ফাউন্ডিং ফাদার্স’ এর কথা বারবার উল্লেখ করছেন। এমনকি কিছু কিছু বুদ্ধি বিক্রেতা তথাকথিত বুদ্ধিজীবীও এই শব্দগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন। ফলে বোঝাই যায় যে এরা কাদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। এরা যে দেশটিকে পশ্চিমা বিশে^র অনেক দেশের মতো অশ্লীলতার দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

এবার আসা যাক যুক্তরাষ্ট্রের কথায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা পিতা, যাদেরকে প্রায়শই ফাউন্ডিং ফাদার বা প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে উল্লেখ করা হয়। তারা ছিলেন ১৮ শতকের শেষের দিকের আমেরিকান বিপ্লবী নেতাদের একটি দল যারা ১৩টি উপনিবেশকে একত্রিত করেছিলেন, গ্রেট ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের তত্ত¡াবধান করেছিলেন, প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং নতুন জাতির জন্য সরকারের কাঠামো তৈরি করেছেন।

প্রতিষ্ঠাতা পিতাদের মধ্যে যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, কনফেডারেশনের প্রবন্ধ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠাতা নথিতে স্বাক্ষর করেছেন; এটি আমেরিকান বিপ্লবে যুদ্ধ করা সামরিক কর্মীদের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘পিতা’ হিসাবে সবচেয়ে বেশি চিহ্নিত একক ব্যক্তি হলেন জর্জ ওয়াশিংটন যিনি আমেরিকান বিপ্লবের একজন জেনারেল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট।

১৯৭৩ সালের আগে পর্যন্ত কিন্তু জর্জ ওয়াশিংটনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা পিতা ছিলেন। কিন্তু ১৯৭৩ সালে ইতিহাসবিদ রিচার্ড বি. মরিস নেতৃত্ব, দীর্ঘায়ু এবং রাষ্ট্রনায়কত্বেও ‘ট্রিপল টেস্ট’ বলে অভিহিত করার ভিত্তিতে সাত ব্যক্তিকে মূল প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন: জন অ্যাডামস, বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন, আলেকজান্ডার হ্যামিল্টন, জন জে, টমাস জেফারসন জেমস ম্যাডিসন এবং ওয়াশিংটন। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশে^র সবচেয়ে বড় সবচেয়ে আঞ্চলিক জোট। এই জোটের ফাউন্ডিং ফাদার্স বেশ কয়েকজন। এদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল, জার্মানির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কনরাড অ্যাডেনাউয়ার, ফ্রান্সের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট শুম্যান, বেলজিয়ামের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পল-হেনরি স্পাক, ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী অ্যালসিড ডি গ্যাস্পেরি, সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্নেস্ট বেভিন।


অনেকের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে যে এরা তো সভ্য দেশ। এদের দেশে এতজন প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি থাকতে পারলে বাংলাদেশে কী সমস্যা আছে? আমার জবাব, আপনি একবার ওদের সমাজ ব্যবস্থার দিকে খেয়াল করুন। তাদের সাথে আমাদের আকাশ পাতাল ব্যবধান। আমি ভাল-মন্দের বিচারে যাবো না। সেটা বিচার করবেন আপনারা। ওদের সমাজে এমন অনেক সন্তান আছেন যারা নিজের বাবার পরিচয় দিতে পারেন না। তারা বলতে পারেন না যে অমুক আমার বাবা। কোনো মাও বলতে পারেন না যে তার সন্তানের বাবা বা তার স্বামী কে? এর কারণ সেখানে বিবাহ করার বাধ্যবাধকতা নেই। তারা মেয়েরা যে কোনো পুরুষের সাথে মেলামেশা করতে পারে। পশ্চিমা বিশে^ তথা তথাকথিত সভ্য দেশে লিভ টুগেদার সম্পূর্ণরূপে বৈধ। বরং একটা নির্দিষ্ট বয়সে যৌন সম্পর্ক না করলে তাকে ঘৃণার চোখেই দেখা হয়। অথচ আমাদের মতো মুসলিম দেশের একবার চিন্তা করুন। এটা কী সম্ভব? ওরা পিতার পরিচয় দিতে পারে না বলে মায়ের পরিচয়ে সন্তানের পরিচয় দিতে প্রচারণা চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

আমরা হয়তো মনে করতে পারি যে এটা তো নারীদের স্বাধীনতা। প্রকাশ্যে হয়তো এমনই মনে হয়, কিন্তু পশ্চিমা এজেন্টদের বাস্তব উদ্দেশ্য এটা নয়, তারা যৌনতাকে মুক্ত করতে চায় এবং সমকামিতাকে বৈধতা দিতে চায়। অনেক আলেমও এ বিষয়টি নিয়ে অনেক বক্তব্য দিয়েছেন। এই নিবন্ধের নিচে এরকম ভিডিও লিংক দেওয়া আছে। আমি বোঝাতে চাই যে, রাষ্ট্রের কোনো আইন সেটা সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ধর্মের কোনো নিয়ম যেমন সমাজে প্রভাব রাখে, তেমনি এসব বিধর্মী আইনও সমাজে একসময় প্রভাব ফেলবে। তখন হয়তো আমাদের সমাজটাও পশ্চিমা বিশে^র মতো হয়ে যাবে। আমি বলছি না যে কেবল জাতির পিতা বহুজন হলেই এটা ঘটবে তা নয়। কিন্তু এটা একটা বড় কারণ হয়ে দেখা দেবে। ( https://www.youtube.com/watch?v=2Iu-DegVVuk)
ইউ জি ইউন-কলামিস্ট

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত