Homeমতামতইউনূসের পরিণতি কি হতে পারে

ইউনূসের পরিণতি কি হতে পারে

অবৈধ দখলদার ইউনুসের ভবিষ্যৎ পরিণতি কি হতে পারে সেটা নিয়ে আলি শরিয়তি চমৎকার বিশ্লেষণ করেছেন। তার সে বিশ্লেষণ এখানে তুলে ধরা হলঃ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপাদমস্তক বণিক। মনে রাখতে হবে স্বর্ণকারের ছেলে তিনি। ফলে হিসাবের বেলায় খুব টনটনে। বামপন্থীরা যতই বলুক, ব্যক্তির চেয়ে সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু বাস্তবতা হলো ব্যক্তি ম্যাটার করে। এটা দর্শনগুরু প্লেটোও বলেছেন। ফলে কেউ যখন গুরুত্বপূর্ণ কোন দায়িত্ব পালন করেন, তখন তাঁর কর্মকাণ্ডকে বুঝতে হলে তাঁর সত্ত্বাকেও আমলে নিতে হবে, বিশ্লেষণ করতে হবে।

প্রথমত ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্রজীবনে বামপন্থী রাজনীতিতে দীক্ষিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করায় সে-দেশের আস্থাভাজন হয়েছেন। তৃতীয়ত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কমিউনিজম ঠেকাতে পশ্চিমা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এনজিও বাণিজ্যে নিয়োজিত ছিলেন। চতুর্থত পারিবারিকভাবে তিনি একজন স্বর্ণকার ব্যবসায়ীর পুত্র। পঞ্চমত ব্যক্তিজীবনে তিনি ধর্মকর্মের অনুরাগী না হয়েও ধর্মজীবী রাজনীতির নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন, ঠিক যেমনটা অতীতে দিয়েছেন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বেগম খালেদা জিয়া। পাকিস্তান আমলে জেনারেল আইয়ুব খান এবং ইয়াহিয়া খানও একইধারার প্রতিভু ছিলেন।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের কোন সাংবিধানিক ভিত্তি ছিল না। ডকট্রিন অব নেসেসিটির আলোকে হাইকোর্টের রেফারেন্সের বদৌলতে সরকার গঠিত হয়েছে। ভবিষ্যতে এটাকে হয়ত ডকট্রিন অব ফ্যাকটাম ভ্যালেটের ভিত্তিতে লেজেটিমেসি দেওয়া হবে। কিন্তু এরকম অসাংবিধানিক সরকারের পক্ষে মানসিক সংকট কাটিয়ে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব। যার প্রমাণ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। প্রশাসনে অস্থিরতা থেকে স্থবিরতার ফলে রাষ্ট্রযন্ত্র প্রায় অচল।

এই কথাগুলোর মধ্যে পরস্পর বিরোধিতা, দ্বিচারিতা এবং ব্যক্তিস্বার্থের প্রাধান্য স্পষ্ট। এই বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়েই ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিণতি বিশ্লেষণের চেষ্টা করবো।

২.

সরকার বারবার জনপ্রত্যাশার কথা বলে, জনআকাঙ্ক্ষার কথা বলে। আদতে ৫ আগস্টের আগে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে এরকম কোন রূপরেখা হাজির করা হয়নি। তারা মূলত শেখ হাসিনার চালিত ট্রেন থেকে নেমে পড়েছেন, কিন্তু কোন ট্রেনে উঠবেন, কিভাবে উঠবেন, কেন উঠবেন এবং উঠে কি করবেন, এসবের ন্যূনতম পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। ফলে রাষ্ট্র সংস্কারের নামে যা হচ্ছে, সবই মনগড়া এবং ধানক্ষেতে পাটগাছ গজানোর মতোই অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু ইউনূসের এখান থেকে ফেরার উপায় নেই।

সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হলে কমপক্ষে ৪/৫ বছর সময় লাগবে। যা অধ্যাপক রেহমান সোবহানসহ অনেকেই বলেছেন। কিন্তু বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো এতটা সময় দিবে না। অপরদিকে ছাত্রনেতাদের হাতে সংস্কার বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।

৩.

সরকারের সময়ক্ষেপনের প্রধান শক্তি ছিল আওয়ামী লীগ বিরোধিতা। প্রায় তিনমাস এই ট্যাবলেট গিলিয়েছে। কিন্তু বাঙালির কোনকিছুতে দীর্ঘদিন মজে থাকার রেওয়াজ নেই। আর আওয়ামী লীগ বিরোধিতার কার্ড তো অচল মুদ্রা ও যুক্তিহীন কার্ড। ফলে এই কার্ডের পতন ঘটেছে। এখন শুরু করেছে ভারত ও হিন্দু বিরোধী ট্রাম্প কার্ড। অনিবার্যভাবে এটাও ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতার থলে একেবারেই মাইনাসের ঘরে থিতু হয়ে গেছে। এরপরে কি?

৪.

সত্যি বলতে এরপরে আর এই সরকারের কোন ভবিষ্যৎ নেই। যারা এখনও ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন তারা অন্ধ, বধির, বোবা ও কালা রোগে আক্রান্ত। তাহলে ইউনূস সরকার কি করবে?

ক) সামনে একটি বিকল্প হলো নামকাওয়াস্তে সর্বদলীয় তথাকথিত জাতীয় সরকার গঠনের একটা বিষয় ঘটতে পারে। এতে বিএনপি রাজি হবে না, কিন্তু সরকার যদি চায় জাতীয় সরকার করে ফেলতে পারবে। তাতে বিএনপি তেমন কোন ঝামেলাও করতে পারবে না। জাতীয় সরকার মূলত ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক জাতীয় ঐক্যের মতোই সাম্প্রদায়িক জাতীয় সরকার হবে। এই জাতীয় সাম্প্রদায়িক সরকারের প্রত্যেক উপদেষ্টা হবেন একেকজন মওলানা ভাসানী, বদরুদ্দীন উমর, এনায়েতুল্লাহ খান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, শফিউল আলম প্রধান টাইপের। যাদের একমাত্র পুঁজি হবে ভারত ও আওয়ামী লীগ বিরোধিতা এবং ইসলামী জজবা চাগিয়ে তোলা। দিনশেষে এতে দেশের কোন লাভ হবে না, কিন্তু আওয়ামী লীগ বিরোধী গোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন দীর্ঘতর হবে। ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়া অগ্রসর হবে।

খ) আরেকটি বিকল্প হলো নব্বইয়ের বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের মতো সত্যিকারের অন্তর্বর্তী সরকার কায়েম করা। আচরণ যেন সকল দল, মত ও মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। এটা হবে ন্যায় ও নায্যতার ভিত্তিতে পরিচালিত একটি আইডিয়াল ইনটেরিম গভর্নমেন্ট। কিন্তু প্রতিক্রাশীল বর্তমান সরকার ও তাদের দোসরেরা এটা হতে দিবে না বলেই মনে হয়।

গ) অথবা আরেকটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চেয়ার ঠিক রেখে কিছু উপদেষ্টা পরিবর্তন এবং নতুন উপদেষ্টা যুক্ত করা। এতে মানুষের মনে কিছুটা আশা জাগতে পারে যে, এবার জনজীবনে শান্তি নেমে আসবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না। তবে আওয়ামী লীগের বিরোধী গোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন দীর্ঘতর হবে এবং ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে যাবে। ইতিমধ্যে শুনতে পেলাম অন্তত চারজন বিশিষ্ট নাগরিক উপদেষ্টা হবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাহলে এটাও বাস্তবায়ন করা কঠিন।

ঘ) সর্বশেষ বিকল্প হলো সামরিক আইন জারি এবং সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণ বা দখল। এর পরিণতি নিয়ে বলার কিছু নেই। দেখেন আপনারা যা ভালো মনে করেন।

৫.

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো ছাত্রনেতারা কি চায়? তাদের লক্ষ্য হলো আগামী সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় ক্ষমতায় বসা। সেই লক্ষে দল গঠনের কাজ চলছে। নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সারাদেশে দল গড়ার কাজ চলছে পুরোদমে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে দলের পূর্ণ কাঠামো সামনে নিয়ে আসবে। এরপরে ক্রমান্বয়ে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠান করাবে ইসিকে দিয়ে আর তারা বিজয়ী হয়ে সারাদেশে শক্ত ভিত্তি স্থাপন করবে। ইতিমধ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজও এগিয়ে যাবে অনেকখানি। সবশেষে সংসদ নির্বাচন হবে এবং তারা বিজয়ী হয়ে ক্ষমতার মসনদে স্থায়ী হবে। কিন্তু চাইলেই কি সবকিছু এত সহজে পাওয়া সম্ভব? অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো আঙ্গুল চুষবে? এটা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি সত্য হলো এই ছাত্রনেতাদের হাতে বিকল্প আর কিছুই নেই, কিচ্ছু নেই। তাদের দায়িত্ব কেউ নিবে না। ফলে তাদের নিজেদেরই রাজনৈতিক দল গঠন করে জাতীয় রাজনীতিতে আবির্ভূত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। এখন দেখার বিষয় ড. ইউনূসের মতিগতি কোনদিকে আগায়।

৬.

হযরত সোলাইমান (আঃ) যেমন লাঠিতে ভর দিয়ে জ্বিনদের দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করিয়েছিলেন, ড. ইউনূসও তেমনি অবস্থায় আছেন। ইউনূসের লাঠী হলো সামরিক বাহিনী আর ছাত্ররা হলো জ্বিন। লাঠি সরিয়ে নিলে জ্বিনেরাও পালিয়ে যাবে। দেখার বিষয় সামরিক বাহিনী কখন এই লাঠি সরিয়ে নেয়। অথবা ইউনূস নিজেই সরে যান কিনা সেটাও ভাবার বিষয়।

শেষকথা –

ড. মুহাম্মদ ইউনূস হলেন বণিক, স্বর্ণকারের ছেলে। হিসাবে পাকা। বয়সের ভারে ন্যুজ মনে হলেও মূলত সাচ্চা ব্যবসায়ী। তাঁর হিসাব পরিস্কার। বিপদ দেখলে সোজা নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে দিবেন। আগামী মার্চ-এপ্রিলেই নির্বাচন শেষ করে জামায়াত-বিএনপির হাতে ক্ষমতা দিয়ে সোজা কেটে পড়ার চেষ্টা করবেন। অবশ্যই সামরিক বাহিনীর সম্মতির বিষয়টি খুবই জরুরি। বিপদে আটকে যাবে ছাত্ররা।

এছাড়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস আর কিই-বা করতে পারে?

source: #আলিশরিয়তি

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত