জার্মানির মৌলিক আইনে দেওয়া ক্ষমতায় সাংবিধানিক আদালত দেশের ‘স্বাধীন গণতান্ত্রিক ধারা’ ব্যাহত বা অবলুপ্ত করতে চায়—এমন কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করতে পারে। ১৯৫০-এর দশকে এমন ঘটনা ঘটেছে দুইবার। ১৯৫২ সালে সোশ্যালিস্ট রাইখ পার্টি নামের একটি নব্য নাৎসিবাদী দল ও ১৯৫৬ সালে জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০৩ সালে নয়া নাৎসিবাদী দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি নিষিদ্ধ করার চেষ্টা হয়, কিন্তু কৌশলগত কারণে মামলাটি আর চলেনি।
স্পষ্ট অর্থে সাংবিধানিক আদালত বাংলাদেশে নেই। সুপ্রিম কোর্টের কাছে সংবিধানের ব্যাখ্যা চাওয়ার বিধান আছে। সে মতে, আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনের ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে ধরনা দেয়। আদালত সরকারের আকাঙ্ক্ষা পূরণের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করে।
বাংলাদেশে একটি সাংবিধানিক আদালত গঠন করা প্রয়োজন। যে আদালত ক্ষমতাসীন থাকা দলকেও স্বৈরাচারে পরিণত হওয়ার পথে বাধা দিতে পারবে। কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধও করতে পারবে। যার আইনে ক্ষমতাসীনের দায়মুক্তির সুযোগ থাকবে না। উচ্চশিক্ষিত আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, সমাজবিদদের নিয়ে একটি কমিশন বা কমিটিকে এ-সংক্রান্ত আইন রচনার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করার আইন আছে। কিন্তু দলের ঘোষণাপত্র বা নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে তা করা যায় না। দল নিবন্ধন আইনটি সংশোধন ও সাংবিধানিক আদালতের মাধ্যমে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে আইন মানতে বাধ্য করা যায়।
অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আশঙ্কা হয়, যে দল ক্ষমতা পাবে, তারাই না আবার রাবণ হয়ে যায়। এটাও নিবারণ করা সম্ভব। এ জন্য সাংবিধানিক আদালতের বিচারক নিয়োগ ও আইন সংশোধনে প্রধান বিরোধী দলের সম্মতি নেওয়ার বিধান অবশ্যই থাকতে হবে। সর্বসাম্প্রতিক নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট যে দল পাবে, তাদেরকেই প্রধান বিরোধী দল বলে গণ্য করতে হবে।