Homeদেশের গণমাধ্যমেকুমিল্লায় বিপৎসীমার ওপরে গোমতীর পানি, চরাঞ্চলে চরম ভোগান্তি

কুমিল্লায় বিপৎসীমার ওপরে গোমতীর পানি, চরাঞ্চলে চরম ভোগান্তি


গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে ক্রমেই বাড়ছে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি। অব্যাহত বর্ষণে নদীতে বৃদ্ধি পাওয়া পানি ইতোমধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গোমতীর চরাঞ্চলের মানুষ। 

বুধবার (২১ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে কুমিল্লা নগরীর ভাটপাড়া এলাকাসহ আশপাশের নদীর চরের বাসিন্দাদের বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। 

এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হতে থাকে। এ সময় নদীর বাঁধ ঝুঁকির মুখে পড়ায় পর্যবেক্ষণে বের হন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। তারা কামাড়খাড়া ও বাবুবাজার এলাকাবাসীর কাছে বাঁধে ফাটলের খবর পেলে সেখানে ফাটল রোধে বালুর বস্তা সরবরাহ করে বলে জানায় স্থানীয়রা। 

নদীর পাড়ের মানুষজনকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। নদীর চরাঞ্চলের মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন।

এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। ফেনী ও কুমিল্লাতে পানি প্রবল আকারে বাড়ার কারণ হিসেবে এটাকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

তবে পানি বেড়ে যাওয়ায় উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন নদীর চরাঞ্চলের কৃষকরাও। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় চর ডুবে যাওয়ায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নিচু এলাকার বাড়িঘরে প্রবেশ করছে পানি। বিভিন্ন জায়গায় গোমতীর আইলে ফাটল দেখা দিচ্ছে। এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অঘটন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন। 

জানা যায়, এসব কৃষকরা নদীর চরে চাষাবাদ করেই মূলত জীবিকা নির্বাহ করেন। গোমতীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে অনেক কৃষকের লাউ, ঢেঁড়স, ঝিঙ্গা, মূলা, লাল শাক, পানিতে ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা নদীর চরের কাছে দাঁড়িয়ে হা-হুতাশ করছেন। কেবল চরের ফসল নয়, চর এলাকায় বসবাস করা অনেকের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় মালামাল সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন লোকজন। 

দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের কৃষক আবদুল জলিল আক্ষেপ করে বলেন, কত আশা নিয়ে কয়েক রকমের সবজি চাষ করছিলাম। সব পানির নিচে চলে গেছে। আল্লাহ জানে, আমার কি হবে। দেনা শোধ করবো কিভাবে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান বলেন, কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমা হচ্ছে ১১.৭৫ মিটার। ইতিমধ্যেই তা ১২ মিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ৩০ বছরে এমন পানি হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক টিম বাঁধ পর্যবেক্ষণে আছে। আমরা গোমতী পাড়ের মানুষজনকে বলেছি, তারা কোথাও কোন বাঁধে ফাটল বা ঝুঁকি দেখলে যেন পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সাথে সাথে জানায়। তাছাড়া, স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগীতা করতে বলেছি। 

ত্রিপুরাতে বাঁধ খুলে দেওয়া প্রসঙ্গে ওয়ালিউজ্জামান বলেন, বাঁধ খুলে দিলেও ভারতের কর্তৃপক্ষ কখনো সেটা পূর্বে জানিয়ে দেয় না। তারা তাদের এলাকায় মাইকিং করছে, সেটা আমরা বিভিন্ন ভিডিওতে দেখেছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় জানতে পেরেছি বাঁধ খুলে দিয়েছে। তবে অফিসিয়ালভাবে নিশ্চিত নই। 

এই বিষয়ে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা বলেন, গোমতী নদীর পানি উত্তর পাশে পালপাড়া অংশে বাঁধ থেকে গড়ে ৩ দশমিক ৫ থেকে চার দশমিক ফুট নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গোমতী নদীর দক্ষিণ অংশে অর্থাৎ শহরের পাশে বাঁধ থেকে গড়ে ৬ থেকে ৭ ফুট নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও বিগত ৬ ঘণ্টায় প্রায় ১২ থেকে ১৫ ইঞ্চি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। আমরাও চরাঞ্চলের মানুষদেরকে সতর্ক স্থানে সরাতে পদক্ষেপ নিচ্ছি।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত