Homeদেশের গণমাধ্যমেবিদ্যুতের ঘাটতি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে

বিদ্যুতের ঘাটতি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে


কয়লার অভাবে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়া পর বড় দুঃসংবাদ এলো সরকারের জন্য। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ার বকেয়া না পেলে ৭ নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে। যদিও ভারতের একটি সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রকাশের পর বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে—পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা প্রস্তুত রয়েছে। তবে একসঙ্গে এতটা বিদ্যুতের ঘাটতি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, তা স্পষ্ট নয়।

নভেম্বরের শুরুতে বিদ্যুতের চাহিদা খানিকটা কমে এলেও গ্রাম পর্যায়ে লোডশেডিং এখন অসহনীয় হয়ে উঠছে। কোনও কোনও এলাকায় দিনে ও রাতের অর্ধেক সময় লোডশেডিং হচ্ছে। উৎপাদন কম হওয়ায় এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

আদানি এরইমধ্যে তাদের ১৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। বাকি একটি ইউনিট দিয়ে ৭৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। অপরদিকে এসএস পাওয়ারের ১২৩৪ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি দিন-রাতে তাদের উৎপাদন ৩৫০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াটে নামিয়ে এনেছে। রামপাল প্রতিদিন গ্রিডে ১২৩৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এটি দিনে ৩৬৬ মেগাওয়াট এবং রাতে ৬২০ মেগাওয়াট সরবরাহ করছে। কেবল পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণ ক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। বরিশাল ৩৭০ মেগাওয়াট কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রও কয়লার অভাবে বন্ধ রয়েছে। কেন্দ্রটির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে তারা কয়লা আমদানি করতে পারেন। কয়লা আমদানির বিষয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট করেছিল একটি পক্ষ। বিষয়টি সুরাহা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশের কাছে আদানির বকেয়া বিদ্যুৎ বিল সংক্রান্ত টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘৮৫০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধ না করা হলে ৭ নভেম্বরের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

আদানির বিদ্যুৎ বিল নিয়ে টানাপড়েন নতুন কিছু নয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ বিলের জন্য চাপ দিয়ে আসছে আদানি। বাংলাদেশ এর মধ্যে কিছু বকেয়া বিল পরিশোধ করলেও এখনও ৮৫০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া থাকার কথা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানিয়েছে আদানি।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবীর খান সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আদানি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করলেও ঘাটতি মোকাবিলায় তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো হবে।

তবে এতে পরিস্থিতি মোকাবিলা খুব একটা সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে না। তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় ইউনিটপ্রতি ২০ টাকার মতো। সেখানে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় ইউনিটপ্রতি ১০ টাকার আশপাশে। কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া থাকায় দ্বিগুণ দামে বিদ্যুৎ কিনতে হবে। দামের চেয়েও বড় সমস্যা হচ্ছে তেলের জোগান। হুট করে চাইলেও তেলের জোগান নিশ্চিত করা যায় না। তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বেশিমাত্রায় চালাতে হলে জ্বালানির সংস্থান করতে হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়লা চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি সংকট দূর করা এবং বিল পরিশোধে ডলারের সংস্থান নিশ্চিত করলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। আগামী জানুয়ারি থেকে সেচ মৌসুম শুরু হবে। তখন একসঙ্গে দুই হাজার মেগাওয়াটের বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হবে। নভেম্বর এবং ডিসেম্বরে লোডশেডিং সেই অর্থে কৃষিতে প্রভাব না ফেললেও জানুয়ারিতে লোডশেডিং হলে প্রধান ফসল ধান উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটাবে। এখন দেশে বিশাল অংশের কৃষি বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আদানির ঢাকা অফিসের জনসংযোগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এ ধরনের কোনও চিঠি আদানি পিডিবিকে দেয়নি। এ ধরনের প্রস্তাব বাস্তবসম্মত না। বিল পরিশোধের জন্য আদানি আলোচনা করছে এবং পিডিবিও অল্প অল্প করে বিল পরিশোধ করছে। আদানির একটি ইউনিট থেকে এখন প্রায় সাড়ে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে। কয়েক দিনের মধ্যে বন্ধ থাকা ইউনিটও চালু হয়ে যাবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে এলসি খোলা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছিল। সেটি সমাধানের জন্য আমরা পিডিবিকে জানিয়েছি।’

তবে পিডিবি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে চায়নি। তারা জানান, বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। আজ (রবিবার) দুপুরেও আদানি থেকে ৭৩২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এসেছে। প্রায় প্রতিমাসেই বিলের কিছু কিছু পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে। খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পিডিবি চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এদিকে পিডিবি জানায়, আদানির যে বকেয়া রয়েছে, তার একটা অংশ আগামীকাল সোমবার (৪ নভেম্বর) পরিশোধের পরিকল্পনা রয়েছে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত