অভিবাসী কর্মীদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে মালয়েশিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সব শ্রমবাজার শিগগিরই খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)। আজ বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনে এ আহ্বান জানিয়ে মানববন্ধন করেছে সংগঠনটি।
মানববন্ধনে বায়রার পক্ষ থেকে দুই দফা প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। প্রথমত, স্বল্প ব্যয়ে ও নিরাপদ অভিবাসনের জন্য দ্রুত সব শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সরকার যে পদ্ধতিতে গন্তব্য দেশগুলোর সঙ্গে শ্রমবাজার চালু করবে, বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি হিসেবে বায়রার সদস্যরা তা মেনে চলবে এবং কর্মী প্রেরণে সর্বোচ্চ সহায়তা করবে বলে তাঁরা প্রতিশ্রুতি দেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বায়রার সদস্যরা প্রতিবছর ১০ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে পাঠিয়ে প্রায় ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আয়ে ভূমিকা রাখছেন। সৌদি আরবের পর মালয়েশিয়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার হলেও ২০২৪ সালের ৩১ মের পর দেশটি অভ্যন্তরীণ নীতির কারণে সব সোর্স কান্ট্রি থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রেখেছে। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, বাহরাইন, কাতার, ইরাক, লিবিয়াসহ অনেক গন্তব্যে শ্রমবাজার আংশিক চালু কিংবা বন্ধ রয়েছে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার প্রক্রিয়ায় একটি সুবিধাভোগী ও নেতৃত্বলোভী গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করছে। তারা মানব পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের মিথ্যা অভিযোগ তুলে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক ও যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির সিদ্ধান্তগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। অথচ ২০২২-২৪ মেয়াদে বৈধ উপায়ে প্রেরিত কর্মীদের ক্ষেত্রে এমন কোনো অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যা মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিবেদনেও উল্লেখ আছে।
তাঁরা আরও বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় চালু হলে আগামী পাঁচ বছরে প্রতি বছর অন্তত দুই লাখ করে মোট ১০ লাখ কর্মী পাঠানো সম্ভব, যা থেকে বছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স অর্জিত হতে পারে। ২০২১-২২ অর্থবছরে মালয়েশিয়া থেকে ১.২১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যেখানে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই এসেছে ১.৫১ বিলিয়ন ডলার। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বছর শেষে তা ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, মালয়েশিয়া বর্তমানে শিল্প, সেবা, কৃষি ও প্ল্যান্টেশন খাতে বিদেশি কর্মী নিয়োগে কোটা অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বাংলাদেশ যদি এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারে, তবে জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করা যাবে। তবে শ্রমবাজার দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে বিশাল একটি সম্ভাবনা হারিয়ে যাবে।
বক্তারা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে তাঁদের প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানান এবং মানববন্ধন শেষে তাঁর কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন—বায়রার সদস্য আল-সুপ্ত ওভারসিজের ফরিদ আহমেদ মজুমদার, তাসনিম ওভারসিজের মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া, আরমান এয়ার ইন্টারন্যাশনালের অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, পূরবী ইন্টারন্যাশনালের মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, আল আকাবা অ্যাসোসিয়েটের মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বিশ্বাস, ফ্রিডম ওভারসিজের কফিল উদ্দিন মজুমদার ও আর্থ স্মার্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান প্রমুখ।