Homeদেশের গণমাধ্যমেমিমার সিনান | কালবেলা

মিমার সিনান | কালবেলা


মিমার সিনান ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্থপতি। তিনি প্রায় ৫০ বছর ধরে অটোমান সাম্রাজ্যের প্রধান স্থপতি ছিলেন। তার জীবনের মধ্য দিয়ে অটোমান স্থাপত্যশৈলী পরিপক্বতা ও চূড়ান্ত মহিমায় পৌঁছে, যা পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে পুরো মুসলিম দুনিয়ার স্থাপত্যকে প্রভাবিত করে। তার স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল জ্যামিতিক সৌন্দর্য, গম্বুজকেন্দ্রিক ভারসাম্য, আলোক ব্যবস্থাপনা ও ইসলামী শিল্পরীতির চমৎকার উপস্থাপন।

মিমার সিনান জন্মগ্রহণ করেন তুরস্কের আনাতোলিয়ার কায়সেরি প্রদেশের একটি খ্রিষ্টান আর্মেনীয় বা গ্রিক পরিবারে। ২৯ মে, ১৪৮৯ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার বাবা ইসলাম গ্রহণ করে ‘আবদুল্লাহ’ নাম ধারণ করেন এবং তিনিও পরিবারের সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করেন। অল্প বয়সেই তিনি ‘দেভশিরমে’ নামে পরিচিত অটোমান সাম্রাজ্যের এক প্রথার আওতায় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তাকে ইস্তাম্বুলে নিয়ে গিয়ে জেনিসারি বাহিনীতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এখানে তিনি নির্মাণশিল্প ও প্রকৌশলে দক্ষতা অর্জন করেন।

সিনান একাধারে ছিলেন প্রকৌশলী, স্থপতি ও সেনাপতি। তিনি পারস্য, সিরিয়া, মিশর, হাঙ্গেরি ও ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। এসব অভিযানে বিভিন্ন সভ্যতার নির্মাণশৈলীর অভিজ্ঞতা তাকে স্থপতিরূপে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যুদ্ধক্ষেত্রে কাঠের সেতু, দুর্গ, স্নানাগার নির্মাণ করে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেন। ১৫৩৯ সালে সুলতান সুলেমান ‘আল-কানুনি’ (সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট) তাকে অটোমান সাম্রাজ্যের প্রধান স্থপতি নিযুক্ত করেন। এরপর তিনি সুলতান সুলেমান, সেলিম দ্বিতীয় ও মুরাদ তৃতীয়ের শাসনামলে রাজপ্রাসাদ, মসজিদ, মাদ্রাসা, সেতু, মাজারসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের দায়িত্ব পান।

মিমার সিনান প্রায় ৪৭৭টি স্থাপত্য নির্মাণে অংশগ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রধান মসজিদসমূহ—

১. সুলেমানিয়া মসজিদ (ইস্তাম্বুল, ১৫৫০-১৫৫৭): সুলতান সুলেমানের নির্দেশে নির্মিত এই বিশাল মসজিদে বাইজেন্টাইন ও ইসলামী স্থাপত্যের সংমিশ্রণ দেখা যায়।

২. সেলিমিয়া মসজিদ (এডিরনে, ১৫৬৮-১৫৭৫): এটি ছিল সিনানের পরিণত শৈলীর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। নিজেই বলেছিলেন, ‘এটাই আমার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।’ এর কেন্দ্রীয় গম্বুজ হায়া সোফিয়ার থেকেও উচ্চতর।

৩. শেহজাদে মসজিদ (ইস্তাম্বুল, ১৫৪৩-৪৮): প্রিন্স মেহমেদের স্মরণে নির্মিত। এটি তার প্রারম্ভিক কাজগুলোর অন্যতম।

এ ছাড়া তার আরও কিছু বিখ্যাত স্থাপত্য নিদর্শন হচ্ছে—রুস্তম পাশা মসজিদ, মিহরিমা সুলতান মসজিদ, মিমার সিনান সেতু, হাম্মাম (স্নানাগার) ও তাকিয়া (ইবাদতের কক্ষ), ইস্তাম্বুলের বহু জলাধার ও পুল ইত্যাদি। মিমার সিনানের নির্মিত মসজিদগুলোতে গম্বুজকেন্দ্রিক নকশা, বায়ুর চলাচল, প্রাকৃতিক আলো ব্যবহারে মুনশিয়ানা এবং ইট-পাথরের ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহার লক্ষ করা যায়। তার নির্মাণে আলংকারিক মিনার, গম্বুজ, আরবি শিলালিপি ও টালি-কাজের দৃষ্টিনন্দন ঐক্য ছিল অনন্য। তিনি শুধু নান্দনিক সৌন্দর্যের দিকেই মনোযোগ দেননি, বরং পরিবেশ, ভূকম্পপ্রবণতা ও সামাজিক প্রয়োজনীয়তার কথাও মাথায় রেখেছিলেন।

সিনান ১৫৮৮ সালের ১৭ জুলাই ইস্তাম্বুলে ইন্তেকাল করেন। তাকে সুলেমানিয়া মসজিদের কাছেই দাফন করা হয়। তার কবরের ওপর নিজ ডিজাইনে নির্মিত একটি সাধারণ অথচ শৈল্পিক সমাধি রয়েছে। তার স্থাপত্যশৈলী শুধু অটোমান নয়, বরং গোটা ইসলামী স্থাপত্যকে প্রভাবিত করেছে। তিনি ইস্তাম্বুলকে একটি স্থাপত্যশিল্পের জাদুঘরে পরিণত করেছিলেন। আজও তার নির্মিত মসজিদ ও ভবনগুলো মুসলিম-অমুসলিম উভয়ের কাছেই বিস্ময়, গর্ব ও অনুপ্রেরণার উৎস।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত