খেলাটা শুরু করেছিল ভারত, বাংলাদেশের পলাতক স্বৈরাচারের কূটচাল বাস্তবায়নে মরিয়া দিল্লি। কোনোভাবেই বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেওয়া যাবে না, যেকোনো মূল্যে প্রিয় স্বৈরাচারকে বিচারের মুখোমুখী হওয়া থেকে বাঁচাতে হবে।
তাইতো দিল্লি একের পর এক বাংলাদেশ বিরোধী পদক্ষেপ নিচ্ছে। সম্প্রতি হঠাৎ করে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত। ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশ ভারতের ভূখন্ড ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা পেয়ে আসছিল। তবে কোন রকম সৌজন্য ছাড়াই ভারতের কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বোর্ড এক বিজ্ঞপ্তিতে সেই সুবিধা বাতিল করে।
এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেছিলেন, তৃতীয় দেশে পণ্য পাঠাতে বাংলাদেশের ট্রান্সপমেন্ট সুবিধা ২০২০ সালে বর্ধিত করা হয়। এর ফলে গত পাঁচ বছরে ভারতের বিমানবন্দরগুলোতে উল্লেখযোগ্য জট দেখা দেয়। তার দাবি, বাংলাদেশের কারণে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের পণ্য আটকে থাকছে, বিলম্ব হচ্ছে, সরবরাহ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
সে সময় বলা হয়, ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সমিতি দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল। এইপিসির চেয়ারম্যান সুধীর সেখড়ির মতে, টেক্সটাইল রপ্তানিতে বাংলাদেশ ও ভারত প্রতিদ্বন্দী। বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করায় এখন ভারতীয় বিমানবন্দরগুলোতে ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের জন্য বেশি জায়গা তৈরি হবে।
তবে এবার পাল্টা আঘাতে বেহাল দশা ভারতের, নিজেরাও খাদের কিনারায় পৌঁছে গেছে। ভারত এতদিন বাংলাদেশে পেঁয়াজে মারার যে খেলা খেলেছে, তাও ব্যর্থ হয়েছে। এবার ট্রান্সপমেন্ট ঠেকাতে গিয়ে নিজেরাই পড়েছে বিপদে।
ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করেছে ঢাকা। বেনাপোল, ভোমরা, সোনা মসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুবিধা বাতিল করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
আর এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের কপালে চিন্তার ভাঁজ, ফায়দা লোটার সব পথ দিন দিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বস্ত্রখাতের অন্যতম কাঁচামাল সুতা আমদানি বন্ধের দাবি জানায় বস্ত্র শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন। এরপর গত মার্চ মাসে এক চিঠিতে পোশাক শিল্পে দেশে তৈরি সুতার ব্যবহার বাড়াতে স্থলবন্দর দিয়ে পোশাক শিল্পের সুতা আমদানি বন্ধ করার জন্য এনবিআরকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন।
তখন ট্যারিফ কমিশন থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে, দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে সব সীমান্ত সংলগ্ন সড়ক ও রেলপথ এবং স্থলবন্দর ও কাস্টম হাউজের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসারে, সুতা কাউন্ট নির্ণয়ে যথাযথ অবকাঠামো প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত আগের মত সমুদ্রবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুপারিশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান এই সংক্রান্ত আদেশ জারি করেন।
তবে স্থলপথ ছাড়া সমুদ্রপথে বা অন্য কোনো পথে সুতা আমদানি করা যাবে। ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে উৎপাদিত সুতা কলকাতায় গুদামজাত করা হয়। এরপর সেখান থেকে সুতা বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এসব সুতা তুলনামূলক কম দামে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এ কারণে দেশি সুতার পরিবর্তে স্থলবন্দর দিয়ে আসা সুতা বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এ কারণেই দেশের বস্ত্র শিল্প কারখানাগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে দাবি করেছিল বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন।
ফলে ভারতের কাঁটা তোলার সিদ্ধান্ত এবার ভারতের গলাতেই কাঁটা হয়ে ফুটছে। বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলতে গিয়ে নিজেরাই পড়ছে বিপদে। বাংলাদেশকে ঠেকাতে গিয়ে কলকাতার ব্যবসায়ী হাসপাতাল নিঃস্ব হয়েছে, পেঁয়াজ কিংবা আলু চাষীরা সর্বস্বান্ত হয়েছে। এবার সুতা উৎপাদনকারীদেরও বেহাল দশায় ফেলেছে মোদির প্রশাসন।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=cfv_A-A8VuU