Homeদেশের গণমাধ্যমেআল্লাহর দয়া ও নেয়ামত উঠে যায় যেভাবে

আল্লাহর দয়া ও নেয়ামত উঠে যায় যেভাবে


পৃথিবীতে মানুষ যত নেয়ামত ভোগ করে এর সব আল্লাহর দেওয়া। তিনি অসংখ্য নেয়ামত দিয়ে আমাদের জীবনকে কানায় কানায় ভরে রেখেছেন। বান্দা যদি আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত ভোগ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তাহলে তিনি নেয়ামত আরও বাড়িয়ে দেন। পক্ষান্তরে যদি সে অকৃতজ্ঞ হয়ে তার নাফরমানিতে লিপ্ত হয়ে যায়, তাহলে তিনি নেয়ামত ছিনিয়ে নেন এবং কঠিন শাস্তিতে নিপতিত করেন। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘এবং সেই সময়টাও স্মরণ করো যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেছিলেন, তোমরা সত্যিকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে আমি তোমাদের আরও বেশি দেব আর যদি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো তবে নিশ্চিত জেনো, আমার শাস্তি অতি কঠিন।’ (সুরা ইব্রাহিম: ৭)

অধীনরা অবাধ্য হয়ে যায়: পাপের মাধ্যমে বান্দা মহান আল্লাহর অবাধ্যাচার করে। এর প্রভাব পড়ে তারও জীবনে। পাপী তার অধীনদের থেকে অবাধ্যতা পায়। সন্তান পিতাকে মান্য করে না। স্ত্রী স্বামীকে মানতে চায় না। শিষ্য গুরুর কথা শোনে না। কর্মচারী বসের কথা মানে না। লোকেরা তাকে ঘৃণা করতে শুরু করে। মন থেকে তার প্রতি উঠে যায় শ্রদ্ধাবোধ। হজরত ফুজাইল ইবনে ইয়াজ (রহ.) বলেছেন, ‘আমি আল্লাহর অবাধ্য হলে তার প্রতিক্রিয়া আমার গাধা ও খাদেমের আচরণের মধ্যে দেখতে পাই।’ তথা অধীনরা অবাধ্য হয়ে যায়। (হিলইয়াতু আবু নাঈম: ৮/১০৯)

রিজিক সংকীর্ণ হয়: পাপী ধারণাতীতভাবে নানা সংকট, বিপর্যয়ে ও বিপদের সম্মুখীন হয়। সংকীর্ণ হয়ে পড়ে রিজিক, জীবিকা ও জীবনোপকরণ। রকমারি সংকট, দুঃখ-বেদনা ও কষ্ট-যাতনা তার লেগেই থাকে। তালা লাগিয়ে দেয় তার সুখের ঘরে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে আমার উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন হবে বড় সংকটময়।’ (সুরা তাহা: ১২৪)। সাওবান (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সৎকর্ম ছাড়া অন্য কিছু আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ছাড়া অন্য কিছুতে তাকদির রদ হয় না। মানুষ তার পাপ কাজের দরুন রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়।’ (ইবনে মাজা: ৪০২২)। তাইতো দেখা যায়, যারা অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জন করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে, সুদ-ঘুষের নোংরা টাকায় ব্যাংক ব্যালান্স সমৃদ্ধ করে, তাদের কাঁড়ি কাঁড়ি টাকায় কোনো বরকত থাকে না। ঠুনকো কারণে লাখ লাখ টাকা ব্যয় হয়ে যায়। ঘরে বাহারি খাবারের আয়োজন থাকলেও ডাক্তারি বাধ্যবাধকতায় দুয়েক পদের খাবারই তারা গিলতে পারে।

আত্মিক প্রশান্তি হারিয়ে যায়: গুনাহের ফলে মানুষের আলোকিত আত্মা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। ফলে সে ডিপ্রেশন ও দুশ্চিন্তায় ভোগে। হতাশা ও বিষণ্নতা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জাপটে ধরে। আবু হুরাইরা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে। অতঃপর যখন সে গুনাহ পরিহার করে, ক্ষমাপ্রার্থনা করে এবং তওবা করে, তখন তার অন্তর পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং (ক্রমান্বয়ে) তার পুরো অন্তর কালো দাগে দেখে যায়। এটাই সেই মরিচা আল্লাহতায়ালা যার বর্ণনা করেছেন, ‘তাদের কৃতকর্মই তাদের অন্তরে জং (মরিচা) ধরিয়েছে’।” (সুরা মুতাফফিফিন: ১৪; তিরমিজি: ৩৩৩৪)।

তাইতো দেখা যায়, অনেক সেলিব্রেটি সুইসাইড করে নিজের জীবন শেষ করে দেয়। আত্মহত্যার মতো কুৎসিত কদাকার ও জঘন্য পাপে পা বাড়ায়। যাদের অভাব নেই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ও ব্যাংক ব্যালান্সের। খ্যাতি ও জনপ্রিয়তায়ও থাকে সবার শীর্ষে। কিন্তু তারা পাপে লিপ্ত থাকার দরুন মরীচিকার সোনার হরিণের পেছনে দৌড়ে শান্তি খুঁজে পায় না। প্রকৃত শান্তি পাওয়া যায় শুধু আল্লাহতায়ালার ইবাদতে, একনিষ্ঠ আনুগত্যে, দয়াময়ের জিকিরে, রবের স্মরণে। পবিত্র কোরআনের হৃদয় ছোঁয়া বাণী, ‘স্মরণ রেখো, শুধু আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমেই অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়।’ (সুরা রাদ: ২৮)

অনেক গুনাহ জন্ম দেয়: কেউ যখন একটি গুনাহ করে তখন তা আরও অনেক গুনাহকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। যেমন যদি কেউ লোভাতুর দৃষ্টিতে পরনারীর দিকে তাকায়, তখন সে তাকে নিয়ে কল্পনার নগ্ন রাজ্যে হারিয়ে যায়। ফলে সে ব্যভিচারের দিকে ধাবিত হয়। অনেক সময় ধর্ষণের পর নিজেকে বাঁচাতে ধর্ষিতাকে হত্যা করে বসে। পাপাচারের ভেলায় ভাসতে ভাসতে একসময় সে গুনাহকে গুনাই মনে করে না। পাপ ও অপরাধ তার কাছে মনে হয় হালকা বিষয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘মুমিন নিজের গুনাহগুলোকে এরূপ ভারী মনে করে, যেন সে কোনো পাহাড়ের নিচে বসে আছে, যা তার ওপর ধসে পড়ার সে আশঙ্কা করছে। পক্ষান্তরে পাপিষ্ঠ ব্যক্তি নিজের গুনাহগুলোকে মাছির মতো মনে করে, যা তার নাকে বসে চলে যায়। এ কথাটি আবু শিহাব (রহ.) নিজ নাকে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলেন।’ (বোখারি: ৬৩০৮)

গুনাহের শারীরিক ক্ষতি: কিছু কিছু গুনাহ এমন রয়েছে, যেগুলো আত্মিক ক্ষতিকর হওয়ার পাশাপাশি শারীরিকভাবেও মারাত্মক ক্ষতিকর। যেমন ব্রেনের কার্যকারিতা দুর্বল হয়ে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া, যৌন দুর্বলতা ও ক্ষয়ের সৃষ্টি হওয়া, চেহারার লাবণ্যতা হারিয়ে ফেলা, মুখের স্নিগ্ধ প্রভা বিলীন হয়ে ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া। ক্যান্সার ও যক্ষ্মার মতো ধ্বংসাত্মক রোগ জন্ম নেওয়া, স্বাভাবিক রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হওয়া, হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যাবলিতে গোলযোগ দেখা দেওয়া, ফুসফুস আক্রান্ত হওয়া। অথচ দয়াময় আল্লাহ মানুষ নিজেকে ধ্বংসের ফেলার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বলেছেন, ‘এবং নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসে নিক্ষেপ কোরো না।’ (সুরা বাকারা: ১৯৫)।

আল্লাহ সবাইকে পাপাচার ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা করুন।

লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত