সাহিত্য বিভাগের আয়োজনে নির্ধারিত প্রশ্নে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কবি স্নিগ্ধা বাউল। তার জন্ম নরসিংদী জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ: ‘মনোলগ জলজ ফুল’, ‘সভ্যতা এক আশ্চর্য খোঁয়াড়ি হাঁস’, ‘জখমি ফুলের ঘ্রাণ’ এবং ‘জখমি ফুলের ঘ্রাণ নগরের রাতে’। পেয়েছেন ‘মাহবুবুল হক সাহিত্য পুরস্কার’।
বাংলা ট্রিবিউন: কোন বিষয় বা অনুভূতি আপনাকে কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করে?
স্নিগ্ধা বাউল: আমার ব্যক্তিগত যেকোনো অনুভূতিই আমাকে কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করে। এমন নয় যে তা কেবল প্রেম বা হৃদয়ঘটিত বিষয়। সামষ্টিক অনুভূতিও আমার ব্যক্তিগত বলেই অনুভূত হয়। তারপরও আমার নিজেকে বিষাদেই অনন্য লাগে; মনে হয়, দুঃখ না থাকলে জীবন সুন্দর হয় না। আরও একটা বিষয় আছে যা আমাকে টানে, আমার ফেলে আসা শৈশব আর কৈশোরের জীবন।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কী ধরনের থিম বা বিষয় নিয়ে কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
স্নিগ্ধা বাউল: ফুল-পাখি-পাতা-লতা নিয়েই লিখতে ভালো লাগে। মানুষের হিসেব আলাদা। কোনো কোনো দিন একটা ভেজা শাড়ি নিয়েও কবিতা লিখেছি, তারপর হ্যাঙ্গারে ঝুলানো শার্ট কিংবা পবিত্র পাঞ্জাবি নিয়েও কবিতা লিখেছি। আসলে বিষয়, অনুষঙ্গ কিংবা থিম তো আলাদাই হয়ে যায় কবিতায়। বিষয় যা-ই হোক না কেন, থিম হিসেবে কবিতায় মানুষই আমার বোধে স্বাচ্ছন্দ্য আনে।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তাৎক্ষণিক অনুপ্রেরণায় লেখেন, নাকি ধীরে ধীরে শব্দ সাজান?
স্নিগ্ধা বাউল: আমার তো মনে হয় তাৎক্ষণিক প্রেরণাই কবিতা। লিখতে না পারলে অবশ্য আর লেখা হয় না। আবার এমনও হয় যে, সে ভাবনা আর পরে মনেই পড়ে না। কবিতায় শব্দ সাজানো একটা বড়ো বিষয়, তবুও আমার কেন যেন সাজানো হয়ে উঠে না। যা করা হয়, তা হয়ত পরবর্তী সময়ে কবিতাকে কিছুটা পলিশ করা হয়। এমনও হয়—নিজের কবিতা পড়ে নিজেই বুঝতে পারি না, এটা কখন লিখলাম!
শুনেছি মাইকেল অভিধান খুলে কবিতা সাজাতেন। আমি ভুল হতেও পারি। আমি তা পারি না। বরং আমার মনে কবিতায় শব্দের চেয়ে বোধের দাবি বেশি।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার কবিতার ভাষা ও শৈলী কীভাবে বেছে নেন?
স্নিগ্ধা বাউল: কবিতার ভাষা শৈলী বেছে নেয়া যায় না; মূলত তা হয়ে যায়। তারপরও আমি গদ্যছন্দে কবিতা লিখি বেশি। আর জটিলতা সেখানেই হয়। মূলত, যেখানে প্রায়োগিক ছন্দ নাই, সেখানে প্রবহমানতায় ছন্দ আনাটাই হয়ত আমার শৈলী।
বাংলা ট্রিবিউন: কোন কোন কবির প্রভাব আপনার লেখায় আছে?
স্নিগ্ধা বাউল: জীবনানন্দ দাশের প্রভাব আছে। মানে এটা আমি বোধ করি। বাকিটা তো যারা পাঠ করে তারা টের পাওয়ার কথা।
বাংলা ট্রিবিউন: কথাসাহিত্যের চর্চা করেন? এ চর্চা আপনার কবিতায় কতটুকু প্রভাব রাখে?
স্নিগ্ধা বাউল: হ্যাঁ। আমি কবিতা লিখি ঠিক, কিন্তু আমার আগ্রহ কথাসাহিত্যে। আমার গদ্য লিখতে এবং পড়তে ভালো লাগে। তবে তা অবশ্যই ভারিক্কী গদ্য, মানে টানা ন্যারেটিভের গদ্য। মানিক, তারাশঙ্কর কিংবা বিভূতির দীর্ঘ বাক্যের গদ্য আমার পছন্দ।
আমার মনে হয় গল্পের হাত ভালো, মানে অনেকেই পড়ে বলেছে, আমার এই জায়গায় মানে গদ্যে মনোযোগ দেয়া উচিত। তাই পরোক্ষ একটা প্রভাব আমার কবিতায় রয়ে যায়, কথাসাহিত্যের নিজস্ব ধরনের।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার প্রথম কবিতার বই সম্পর্কে কিছু বলুন। প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি কেমন ছিল?
স্নিগ্ধা বাউল: আমার প্রথম কবিতার বই ‘রাঙতা কাগজ’ ২০১৭ সালে নিখিল প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের অনুভূতি তো অবশ্যই ভালো। তবে খুব লজ্জা লাগছিল। কেন প্রকাশ করব, এই ভাবনায় নিজেকে নিয়ে বিব্রত ছিলাম। বিচ্ছিন্ন ভাবনার সব কবিতা ছিল রাঙতা কাগজে।
তখন লেখার অনুভূতি ভালো ছিল, মানে যা লিখতাম খুব ভালো লাগত। মনে হতো, আহ, কী লিখলাম! এখন আর তা হয় না। নিজের লেখা নিজের অপরিচিত লাগে!
বাংলা ট্রিবিউন: পাঠকদের মন্তব্য আপনার লেখায় কোনো পরিবর্তন আনে?
স্নিগ্ধা বাউল: অবশ্যই পরিবর্তন আনে। যেকোনো লেখা পাঠককে যদি ছুঁয়ে যায়, তার তো একটা রেশ আমার কাছে আসেই। সাহিত্য তো যা কিছু জীবনের সহিত সম্পর্কিত তাই। এমনটাই তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন। সুতরাং পাঠকের মন্তব্য কিছু পরিবর্তন আনে। আবার এটাও বলা যায়, পাঠকের মন্তব্যে কোনো পরিবর্তন আসেও না। কেননা পাঠক জানে না আমি কী লিখব!
বাংলা ট্রিবিউন: ভবিষ্যতে কী ধরনের কবিতা লিখতে চান? নতুন কোনো ধারা বা শৈলীতে কাজ করার ইচ্ছা আছে কি?
স্নিগ্ধা বাউল: ভবিষ্যতে আমি ভবিষ্যতের কবিতা লিখতে চাই। হা হা। আমার তেমন রকম গুছিয়ে কাজ করা হয় না, বা অভ্যাস নাই।
গল্প লিখতে এখন ভালো লাগছে। উপন্যাস লিখতে আগ্রহ বোধ করছি। অবশ্য আমার ভবিষ্যৎ বর্তমানেই নিষ্পত্তি হয়ে যায়।