অন্ধকার বাঁশঝাড়ের দিকে হেঁটে গেলে পিতামহ
হিম-ঠান্ডায় কুঁকড়ে আছে শিব
চাঁদ ওঠেনি চোখে—
মা রান্নাঘর থেকে ডাকলেন পিতাকে
আমি পিতার ঘাম থেকে খুঁটে আনি মৃত্যুর তানপুরা
দৃষ্টিসীমা থেকে সরে যায় গোধূলী
মৃত্যু কি সময়ের মতো বির্মূত ছায়া?
পাতায় লুকানো মানুষের বীজ
পাতায় লুকানো মানুষের স্বপ্ন কাজ
মানুষের ভাষা, ভাবনা, লুকানো থাকে মাটির ভাঁজে ভাঁজে
কীভাবে মানুষ তার ভাষাকে ডানা দেয়?
এখানেই ছিল—
রাতের বাসর পূর্বপুরুষের মৈথুন ক্রীড়া,
নারীর নাভিমূলে মাটির সোদা গন্ধ।
এই মাটির পাটে সময়ের ঘ্রাণ
সময়ের শরীর থেকে খসে পড়ে কল্পনার মমি
ধীরে ধীরে, ক্রমে
মানুষ জন্মাতে থাকে
মানুষ বড়ো হতে থাকে
আহা! এই মাটিতেই নিবিড় মিশে আছে স্মৃতিঘ্রাণ
পিতার মৃত্যু তবু হয় না কখনো
অথবা তার মৃত্যু হয়েছে।
তার সেসব ভাষা, স্বপ্নও কি হঠাৎ মরে যায়?
পাথরের ভাষা—মহাকাশের দূরে—অথবা
কোটি আলোকবর্ষ দূরে গ্যাসের দুরূহ আত্মা কার স্বপ্নে বিভোর?
সব কিছু নড়ে ওঠে
হেঁটে যায় হীরকখণ্ড
পাথরখণ্ড
মাটিখণ্ড
কচিকচি কলমির দল
বাবা
মধ্যরাতে বাবাকে গান শুনিয়েছিল মা
কী স্বপ্ন দেখে হরিণের দল?
হাসি-কান্না গাছেদের স্বপ্ন
কি বর্ণে লুকানো মাটির ভৌগোলিক ইতিহাস?
মৃত্যু মায়ের কোল অথবা
জীবন বিচিত্র মৃত্যুর একাকী দৃশ্যায়ন
কোটি কোটি বছর আমরা নরম ঘাস ছিলাম
পাথর ছিলাম
তখনো স্বপ্ন কান্না হাসি তামাশার গল্প
মিশেছিল পাথরের অন্তরে
অথবা তুমি যা দেখতে পাও সেসব সত্যি নয়; অথবা
ভীষণ সত্যি সন্তানের বুক
পাথরের চোখে এত বছর বসেছিলাম
অপেক্ষা ছিল না
না সূর্যের
না জলের
ভাষা স্বপ্ন নিশ্চল স্থবির
সময় কোনোদিন ছিল না
কেন তবু জন্ম হয় অলীক সময়?
মানুষ মরে না কখনো
নীরবে, খুব নিভৃতে চলে যায় গ্রহান্তরে
আর গ্রহান্তর ফিরে আসে দক্ষিণ ঘরে
জ্বলন্ত লাভার ভেতর মানুষেরা ছিল
মহাকাশের পরতে পরতে
প্রক্সিমা সেন্টারাইয়ে
আরো দূরে—মানুষের স্বপ্ন ছিল
ভাষা ছিল
চিন্তা ছিল
নারীর প্রেম
কিশোরীর অভিমান ছিল
তখনো স্বপ্নেরা জাগ্রত অথবা দিনরাত্রির বাইরে অন্যজগৎ
নারীর করতলগত বিপুল পৌরুষ
তবু তুমি কেন হাতছানি দিয়েছিলে
বৃষ্টিস্নাত বিমর্ষ সন্ধ্যায়
কেন পলাশ ফুলের ঘ্রাণ জমে থাকে পরমাণুর ঠোঁটে
মানুষ কি ফিরে পাবে তার পূর্বপুরুষের স্বপ্ন,
যারে সে ছুঁয়েছিল বকুলভেঁজা সন্ধ্যায়
চিল্কায় ভোরে
অলস দুপুরে
চিকন তারের ভেতর—আমরা ঢুকে পড়ি সেলফোন জগতে
সে অন্য জগৎ
তবু অন্যকিছু নয়—
আছে তবু দেখেনি কেউ
কী বারতা দেয় হীরক দিন
নদীপাড়ে হেঁটে যায় একাকী বাউল
কী গান মুহূর্ত গায় সে—
কী গানে ডাক দেয় কদমের গাছ
নদীর বালিহাঁস, কৌঞ্চের চুমু জমা আছে স্রোতে
পাথরের বুকে হাজার বছরের রৌদ্রের ওম
রুপালি মেঘের আভা
কিছু ক্ষয়ে যায়নি
কিছু হয়নি শেষ
সবকিছু থেকে যায়
মানুষ মরে না কখনো, থাকে—খুব ভালো করে থাকে
পাহাড়ের বুকে রাত্রির নরম হিম
ঝরনার বুকে অসম গতি
ইতিহাস আছে জানি দুরন্ত আমিতে
এমন করে মানুষেরা বেঁচে থাকে; গতি ও স্থিতিতে
একদিন দূরে—হাজার আলোকবর্ষ দূরে, কোনো এক নক্ষত্র মরে গেলে
তার স্বপ্ন পৃথিবীর কোনো রাখালের করুণ বাঁশি বাজে
আহা! তার স্বপ্ন—ব্ল্যাকহোলে যেভাবে জমা থাকে মহাকাশের সমূহ ইতিহাস
মৃত্যু আর মৃত্যুহীনতা ব্যবধান কিছু নাই
থাকা আর না থাকার ব্যবধান কিছু নাই
না থেকেও নানানভাবে থাকা যায়; চিকন তার দিয়ে কথারা হাঁটে
কথারা মিটমিটে হাসে
দাওয়ায় ঠেস দিয়ে বসে
দীর্ঘ দীর্ঘ ঘুম থেকে জেগে
কারে মনে চায়, কারে যত্নে হৃদয়ে রাখি
এত ঘুম কেন এত সোনালি গল্পের ঘুম
শুয়ে থেকে সব কথাদের সাথে কথা হয়—
কোনো মৃত্যু, মৃত্যু নয়; সর্বভূতে আমরা থেকে যাই
আমাদের কথা থাকে
স্মৃতি থাকে
ভাবনা থাকে
কাজ থাকে; ইথারে…
মানুষেরা মরে না কখনো; তোমাদের কথা শুনে কবরে হাসি
গিটারে সুর তুলি
হযরতের কথা শুনি
আদমের গান
কৃষ্ণের সুর
ইউসুফ, তুর পাহাড়, জাবালে নূর
বালির ঘাম মনে থাকে
মনে থাকে ইব্রাহীম, মুসা, বেথেলহেম