Homeসাহিত্যমহাশূন্যতা আমাকে টানে : রাখী সরদার

মহাশূন্যতা আমাকে টানে : রাখী সরদার


সাহিত্য বিভাগের নির্ধারিত প্রশ্নে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কবি রাখী সরদার। তার জন্ম পশ্চিমবঙ্গের রজক গোহালিয়া গ্রামে। বাংলা সাহিত্য নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। পেশায় শিক্ষিকা। প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘খয়েরি কেরকেটা’, ‘শস্য ভেজা চোখের দোহাই’ এবং ‘বাদামি চুলে স্বপ্ন সনেটগুচ্ছ।’

বাংলা ট্রিবিউন: কোন বিষয় বা অনুভূতি আপনাকে কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করে?

রাখী সরদার: কবিতা কি একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে আবদ্ধ? তা তো নয়। কবিতা হলো খোলা আকাশ। কোনো নিয়মে বাঁধা নেই। আমারও কোনো নিয়ম বা বিষয় নেই। আমার চারপাশের আস্ত জীবন থেকেই লেখা আসে। ছোটোবেলাটা কেটেছে বনজ লতাগুল্মে ভরা গ্রামে। সেই সবুজের এক অমোঘ স্বতঃস্ফূর্ততা অনুভব করি ঠিকই, তবে কোনো বিষয়ের গণ্ডি নেই। যেকোনো বিষয়েই অনুপ্রাণিত হই। কোনো ভাব এলে লিখি, না এলে লিখি না।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কী ধরনের থিম বা বিষয় নিয়ে কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

রাখী সরদার: কবিতা তো একটা তীব্র ঘোর। তা যে কোন থিমে লেখা হবে বলা মুশকিল। দেখুন, কবিতার বিষয় থাকলেও কবিতার ফর্মই আসল। বিষয় সে যেকোনো কিছু হতে পারে, তবে আমার কাছে তার রূপটাই বিশেষ গুরুত্ব পায়। কোনো বিষয় লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করব বললে—বলব যখন যে বিষয় চলে আসে তা-ই লিখি। বিষয় নিয়ে আলাদা করে কোনো স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। বিষয় বলতে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু নেই। তবে মহাশূন্যতা আমাকে টানে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তাৎক্ষণিক অনুপ্রেরণায় লেখেন, নাকি ধীরে ধীরে শব্দ সাজান?

রাখী সরদার: আমার মনে হয় লেখালেখির পৃথিবীটা একেবারে নিয়ন্ত্রণহীন। কবিতা কখন কীভাবে আসবে, আমি নিজেও জানি না। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘কবিতার প্রথম লাইনটা ম্যাজিকের মতো।’ সেটা এসে যায়। কীভাবে এসে যায় জানি না। এরপর তাকে ধীরে ধীরে রূপদান করি। সবসময় যে যথাযথ রূপদান দিতে পারি, এমন নয়। তাকে স্পর্শ করার জন্য একটা আর্তি থাকেই। একটা অপেক্ষা থাকে। পারলে ভালো, না হলে খুঁজে যাই। রমেন্দ্র চৌধুরী তার একটি কবিতায় সাতাশ বছর পরেও ‘চাঁদ’ শব্দটি কেটে একটি প্রতিশব্দ বসিয়েছিলেন। এই অপেক্ষাই তো লেখার প্রাণ।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার কবিতার ভাষা ও শৈলী কীভাবে বেছে নেন?

রাখী সরদার: একজন কবি তার স্বতঃস্ফূর্ততা নিয়েই লেখেন। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। তবে যে ভাষায়, যেভাবে আমি কথা বলি কবিতায় সেভাবে সবসময় লিখি না। কারণ কবিতা লিখতে গেলে অনেকসময় আমরা সুচিন্তিতভাবে, সচেতনভাবে কিছু শব্দ ব্যবহার করি। মুখের ভাষাই সবসময়ই যে কবিতা হয়ে উঠবে তা নয়। আর শৈলীর কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম হয় না। তা কবিতার ভাব অনুযায়ী সৃষ্টি হয়। আমার কবিতার শৈলী কবিতার ভাব অনুযায়ী। সেখানে কোনো জোরজবরদস্তি নেই।

বাংলা ট্রিবিউন: কোন কোন কবির প্রভাব আপনার লেখায় আছে?

রাখী সরদার: অনেক কবির কবিতাই পড়েছি। পড়ে চলেছি। অনুপ্রাণিত হয়েছি। যেকোনো সৃষ্টিকর্মের মূলেই থাকে অনুপ্রেরণা। কিন্তু আমার কবিতায় কোন কোন কবির প্রভাব আছে তা পাঠক বিচার করবেন। আমার লেখায় কার প্রভাব আছে তা পাঠক বিচার করবেন। পাঠক আবিষ্কার করবেন। আমি ঠিক উপলব্ধি করতে পারি না। কোনো প্রভাব আছে, না নেই বলতে পারব না।

বাংলা ট্রিবিউন: কথাসাহিত্যের চর্চা করেন? এ চর্চা আপনার কবিতায় কতটুকু প্রভাব রাখে?

রাখী সরদার: হ্যাঁ, কথাসাহিত্য চর্চা করি। কিছু গল্প বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। একটি উপন্যাসও লেখা শেষ করেছি। কিছু গদ্য ধারাবাহিকভাবে লিখছি। পড়িও। এই চর্চা অর্থাৎ কথাসাহিত্য আমার কবিতাকে প্রভাবিত করে না, বরং কবিতা কথাসাহিত্যকে প্রভাবিত করে। তার কারণ কবিতা লিখতে গিয়ে আমার যে পরিমিতিবোধ, আমার যে শব্দ নির্বাচন, আমি যে রূপ তৈরি করতে চেষ্টা করি তা গদ্য লিখতে গিয়ে আমাকে সাহায্য করে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার প্রথম কবিতার বই সম্পর্কে কিছু বলুন। প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি কেমন ছিল?

রাখী সরদার: আমার কাছে প্রথম কবিতার বই অর্থ একটি বিস্ময়কর ব্যাপার! বইটি বের হয় ২০১৮ সালে। নাম ‘খয়েরি কেরকেটা’। প্রথম কাব্যগ্রন্থ যখন হাতে এলো, মনে হলো মুদ্রিত অক্ষরে এক অনাস্বাদিত আনন্দ আমার কাছে উপহারস্বরূপ এসেছে। এই প্রথম কাব্যগ্রন্থ আমার বেঁচে থাকার চাবিকাঠিটিও এনে দিয়েছিল।

বাংলা ট্রিবিউন: সমকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ঘটনা কি আপনার কবিতায় প্রভাব ফেলে? যদি ফেলে, তবে কীভাবে তা প্রকাশিত হয়?

রাখী সরদার: কবি যেহেতু একজন মানুষ এবং অনেকবেশি একজন সংবেদনশীল মানুষ, তাকে সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ঘটনা বিচলিত করবে এটাই স্বাভাবিক। আমার ক্ষেত্রেও তা ঘটে। কিন্তু কবিতার ধর্ম সমকালীনতাকে অতিক্রম করে চিরকালীনতায় পৌঁছানো। সমকালীনতা আমাকে স্পর্শ করে ঠিকই, তবে চেষ্টা করি তাকে অতিক্রম করার। এখন কতটুকু করতে পারছি তা পাঠক বলবেন।

বাংলা ট্রিবিউন: পাঠকদের মন্তব্য আপনার লেখায় কোনো পরিবর্তন আনে?

রাখী সরদার: পাঠকের মন্তব্য অবশ্যই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পাঠক হলেন ঈশ্বর। তবে পাঠকের মন্তব্য বিবেচনাধীন।

বাংলা ট্রিবিউন: ভবিষ্যতে কী ধরনের কবিতা লিখতে চান? নতুন কোনো ধারা বা শৈলীতে কাজ করার ইচ্ছা আছে কি?

রাখী সরদার: আমি কবিতাকে সবসময় স্বতন্ত্রভাবে লেখার চেষ্টা করব। নিজের কবিতা লিখব। আগামীদিনেও স্বতন্ত্রভাবে চেষ্টা করব। ভবিষ্যতে কী ধারা এসে দাঁড়াবে সেটা পাঠক বলবেন। নতুন করে ভাবি প্রতিনিয়ত। আগামীতে পাঠক সন্ধান করবেন আমার লেখায় কোনও ধারা আনতে পেরেছি কিনা।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত