রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বাকির টাকা চাওয়ায় চায়ের দোকানিকে ছাত্রদল নেতা ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে প্রায় একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, গলির রাস্তার পাশে একটি চায়ের দোকান। দোকানের গলির দিকের অংশ থেকে দোকানিকে টাকা দিচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। এ সময় দোকানের ভেতর থেকে এক যুবক বেরিয়ে তাঁকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। দোকানি কিছুটা ধাতস্থ হয়ে দৌড়ে গিয়ে হামলাকারী যুবটিকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে সাদা শার্ট পরা এক যুবককে এসে মারামারিতে যোগ দিতে দেখা যায়। দোকানি তাঁকেও প্রতিহত করেন। এর মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তিকে রাস্তায় লুটিয়ে পড়তে দেখা যায়।
‘Umme Honey’ নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বিকাল ৫টা ৫৩ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘চায়ের দোকানে বাকি টাকাকে কেন্দ্র করে পাওনাদের হাতে খুন দোকানদার। দোকানে বাকী টাকা না দিয়ে ছাত্রদল নেতা বলে টাকা খুঁজলি কেন বলে ছু/ড়ি দিয়ে কুপিয়ে হ/ত্যা করছে দোকানদারকে।’ (বানান অপরিবর্তিত)
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ৬ লাখ ১৮ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং পোস্টটিতে ১ হাজার ৬০০ রিঅ্যাকশন পড়েছে, ৩১২টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ৪ হাজার ১০০। এসব কমেন্টে কেউ কেউ দাবিটি সত্য বলে মন্তব্য করেছেন।
Md Ibrahim নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘বিএনপির নেতাদের আচরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে এরা আসলেই সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজ বাহিনী।’ (বানান অপরিবর্তিত)
Md Jahangir Hossain লিখেছে, ‘বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে যা দেখছেন তার থেকে আর দ্বিগুণ দ্বিগুণ হবে তার থেকেও খারাপ হবে দেশটা, এটাই হচ্ছে আমাদের কোন আইন নাই।’ (বানান অপরিবর্তিত)
Voice of Public নামে ফেসবুক পেজ, ইবনে সিনওয়ার ও Juwel Ahmed নামে অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।
ভিডিওটির কিছু কি–ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে, বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ টুয়েন্টিফোরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের ছবির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি গত ৪ এপ্রিল প্রকাশিত। এর সঙ্গে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর চায়ের দোকান, হামলাকারী ও আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থান, মারধরের ভঙ্গি, পোশাকের সাদৃশ্য রয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকার খিলগাঁওয়ে ত্রিমোহনী এলাকার একটি দোকানে চা পান করার পর মো. মইজউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি দোকানিকে টাকা দিচ্ছিলেন। সেই সময় মনির নামে এক যুবক তাঁর চায়ের দামটাও মইজউদ্দিনকে দিতে বলেন। মইজউদ্দিন চায়ের বিল দিতে রজি না হওয়ায় মনিরসহ আরও দুইজন যুবক তাঁকে মারধর করেন। ঘটনাস্থলেই মইজউদ্দিন মারা যান। এই হামলায় অভিযুক্তরা হলেন— মনির, সুজন ও জনি। তাঁরা সবাই মাদক ব্যবসা জড়িত।
এছাড়া গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংবাদমাধ্যম দৈনিক কালের কণ্ঠে, গত ২১ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আমাদের সময়ে এবং গত ৭ এপ্রিলে ঢাকা মেইলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে একই তথ্য পাওয়া যায়। তবে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত মনির, সুজন ও জনির ছাত্রদলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্য এসব প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।
অভিযুক্তরা ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন কিনা তা নিশ্চিত হতে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের পক্ষ থেকে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাউদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁর কাছে ওই ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি অরাজনৈতিক ঘটনা। এর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের কেউ জড়িত নন। অভিযুক্তরা ছাত্রদলের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্যটি মিথ্যা। এরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী।’ অভিযুক্ত তিন জনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান ওসি।