দুর্বৃত্তরা হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে নির্মমভাবে যুবলীগ নেতা-কর্মীদের মারধর করছে— এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে আলাদা ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে।
এসব পোস্টের একটির ক্যাপশনে লেখা আছে, ‘মনে রাখিছ পই পই করে হিসাব নেওয়া হবে। হাসপাতালের ভিতরে গিয়ে কি নির্মম ভাবে যুবলীগ নেতাকর্মীদের মেরে হত্যা করতেছে।’ ভিডিওতে হাসপাতালসদৃশ কক্ষের ভেতরে কয়েকজন যুবককে ভিন্ন কয়েকজনকে ভেতরের সরঞ্জাম দিয়ে আঘাত করতে দেখা যায়।
‘নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ’ নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত রোববার (১৪ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১টা ৩৮ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘এ বর্বরতা কোথায় গিয়ে থামবে দেখার মত কেউ এখন নেই দেশ কোথায় আছে এখন হাসপাতালে ভিতরে কেউ হেফাজত নেই।’ (বানান অপরিবর্তিত)
আজ বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভিডিওটি ৩৯ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং পোস্টটিতে ২০০টি রিঅ্যাকশন পড়েছে, ২৭টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ৬০৪। পোস্টে কেউ কেউ এই ভিডিওটি অন্য দেশের উল্লেখ করে কমেন্ট করেছেন। আবার অনেকে বাংলাদেশের ঘটনা লিখেও মন্তব্য করেছেন।
MD Riaz Morshed নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘আহারে বাংলাদেশ।’ (বানান অপরিবর্তিত) Koyes Ahmed Watir লিখেছে, ‘আল্লাহ তুমি দেখ মাবুদ জালিমদের জুলুম তেকে রক্ষা কর দেশ কে।’ (বানান অপরিবর্তিত)
আমি সৈনিক ও রক্ষীবাহিনী শেষ ভরসা নামে অ্যাকাউন্ট থেকে আলাদা ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।
ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভারতীয় জাতীয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি গত ১৩ এপ্রিল প্রকাশিত। এর সঙ্গে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর কক্ষ, যুবকদের অবস্থান, মারধরের ভঙ্গি, সরঞ্জাম ও পোশাকের সাদৃশ্য রয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১১ এপ্রিল ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের দেরা বাসসি সিভিল হাসপাতালে মুকন্দপুর গ্রামের দুই পক্ষের পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় অভিযুক্তরা সকলেই মুকন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা। এর আগে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ালে তাঁরা আহত হয়ে একই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের সদস্যদের হাসপাতালে আবার দেখা হলে তাঁদের মধ্যে আবার সংঘর্ষ হয়।
ভারতের বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির ওয়েবসাইটে গত ১২ এপ্রিলে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। এই প্রতিবেদনের ভিডিওর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।
সুতরাং, দুর্বৃত্তরা হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে নির্মমভাবে যুবলীগ নেতা-কর্মীদের মারধর করছে দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি বাংলাদেশের ঘটনা নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের দেরা বাসসি সিভিল হাসপাতালে দুই পক্ষের পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনার।