ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গণহত্যা চলছেই। গতকাল রোববার একদিনে প্রায় ৫০ জন নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভের তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একজন মন্ত্রী ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে বলায় সেখানে উপস্থিত একজন মুসলিম সাংবাদিক সেই মন্ত্রীকে আক্রমণ করেন—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে প্রায় একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে। ২৪ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে ডেস্কে বসা একজন নারীকে লিখিত বক্তব্য দিতে দেখা যায়। হঠাৎ করে সামনের দিক থেকে এক ব্যক্তিকে লাফিয়ে সেই নারীকে আক্রমণ করে।
‘CNTV CTG’ নামে ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল রোববার বিকেল ৩টা ৪৪ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘আমেরিকান মন্ত্রী ফিলিস্তিনের সবাইকে হ’ত্যা করতে হ্যাঁ বলেছেন, সাথে সাথে ফিলিস্তিনি মুসলিম সাংবাদিক আ’ক্রা’ন্ত করে সিংহের মতো লাফিয়ে।’ (বানান অপরিবর্তিত)
আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভিডিওটি ২ লাখ ১৩ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং পোস্টটিতে ৮ হাজার ৩০০ রিঅ্যাকশন পড়েছে, ৪৬৫টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ২ হাজার ২০০। পোস্টে কেউ কেউ এই ভিডিওটি পুরোনো উল্লেখ করে কমেন্ট করেছেন। আবার অনেকে সত্য মনে করেও মন্তব্য করেছেন।
MD Parvez Khan নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘সাংবাদিক ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ,, মাশাআল্লাহ।’ (বানান অপরিবর্তিত) Rita Javed লিখেছে, ‘উচিৎ বিচার হইছে।’ (বানান অপরিবর্তিত)
Sofiullah Fuad, Tanvir Fahim ও MD Salah Uddin নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।
ভিডিওটির কিছু কি–ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারি প্রকাশিত। এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ভিডিওর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের ভিডিওর সঙ্গে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে থাকা নারীর চেহারা, পেছনের দেওয়াল, পতাকা, ডান দিকে থাকা বসে থাকা ব্যক্তির অবস্থানের সাদৃশ্য রয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্টের নেভাডা অঙ্গরাজ্যের লাস ভেগাস শহরের ক্লার্ক কাউন্টি আদালতের বিচারক মেরি কে হোলথাস রেডেন নামে এক যুবকের সাজা ঘোষণা করছিলেন। এ সময় ওই যুবক বিচারকের ওপর হামলা করে। সেই ঘটনারই দৃশ্য এটি।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্যে ওই হামলার ভিডিও পাওয়া যায়।
এ ছাড়া, ২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারি একই তথ্যে সংবাদ মাধ্যম এনবিসি নিউজ, সিবিএস নিউজ ও ফক্স ১১ নিউজে ওই ঘটনার প্রতিবেদনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর দৃশ্য পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রী ফিলিস্তিনিদের হত্যা করতে বলায় মুসলিম সাংবাদিক তাঁকে আক্রমণ করেছেন— এমন তথ্য গুগলে সার্চ করলে আন্তর্জাতিক কোনো সংবাদমাধ্যমে এমন সংবাদ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্টের নেভাডা অঙ্গরাজ্যের লাস ভেগাস শহরের কাউন্টি আদালতে সাজা ঘোষণার সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির আক্রমণের শিকার হন বিচারক। সেই ঘটনারই দৃশ্য এটি।