ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের গত ৫ আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। পরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত ২০ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসম্মান করায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসহ মোট ২০ জনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র—সম্প্রতি এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, গ্রুপ ও পেজ থেকে প্রায় একই ক্যাপশনে ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছে। ভিডিওটিতে দুজন নিউজ প্রেজেন্টারের আলাদা দুটি সংবাদ পাঠের ক্লিপ দেখা যায়। প্রথম ক্লিপটিতে নিউজ প্রেজেন্টারকে বলতে শোনা যায়, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ২০ জনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘দ্বিতীয় ক্লিপটিতে নিউজ প্রেজেন্টারকে বলতে শোনা যায়, ‘বাংলাদেশে সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ করতে যাচ্ছে মার্কিন সহায়তা সংস্থা ইউএসআইডি।’
‘মো. জাহিদ হোসেন (Md Jahid Hosen)’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে প্রকাশিত পোস্টটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘আলহামদুলিল্লাহ। ড ইউনূসকে রাষ্ট্রদ্রোহী ঘোষণা দিল যুক্তরাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে অবমাননা করায় নিষেধাজ্ঞা।’ (বানান অপরিবর্তিত)
শনিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ওই ভিডিওটি এক লাখ বার দেখা হয়েছে এবং পোস্টটিতে ৪ হাজার এক শত রিঅ্যাকশন পড়েছে। পোস্টটিতে ৫২০টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে এক হাজার এক শত। পোস্টে অনেকে এ তথ্যটি সত্য কি না, তা কমেন্টে জানতে চেয়েছেন। আবার এটি সত্য মনে করে কমেন্ট করেছেন।
রানা বাবু (Rana Babu) নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে এই পোস্টের লেখা হয়েছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ জয় বাংলা’ (বানান অপরিবর্তিত) মোহাম্মদ নুরুল আবছার লিখেছেন, ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। ‘রাইহান কবির (Raihan Kabir) লিখেছে, ‘সবাই পড়ি আলহামদুলিল্লাহ।’
বাংলাদেশ. আওয়ামী যুবলীগ., জামাল আহমেদ (Jamal Ahmed) এবং সিমু সিকদার নামে অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।
ভিডিওটিতে থাকা দুটি নিউজ প্রেজেন্টারের ক্লিপগুলোকে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ আলাদা আলাদাভাবে যাচাই করে।
প্রথম ক্লিপে বলা নিউজ প্রেজেন্টারের ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ২০ জনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প’ এই কথা গুগলে সার্চ করে এটিএন নিউজের ইউটিউব চ্যানেলের একটি প্রতিবেদনে দৃশ্যটি পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়।
এই প্রতিবেদনের শুরু থেকে ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত নিউজ প্রেজেন্টরকে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ২০ জনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প—এমনি একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টচেক রিউমর স্ক্যানার। কী জানা গেল এই অনুসন্ধানে! বিস্তারিত লিমা সায়ন্তনির প্রতিবেদনে।’
অর্থাৎ, এটিএন নিউজের এই প্রতিবেদনের নিউজ প্রেজেন্টারের তথ্যের একটি অংশ কাট করে প্রচার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশের বরাত দিয়ে একই বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া তথ্যটি মিথ্যা বলে জানানো হয়।
দ্বিতীয় ক্লিপে বলা নিউজ প্রেজেন্টারের ‘বাংলাদেশে সব ধরনের সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ করতে যাচ্ছে মার্কিন সহায়তা সংস্থা ইউএসআইডি’ এ কথা গুগলে সার্চ করে যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলের একটি সংবাদ বুলেটিনের ৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে দৃশ্যটি পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি গত ২৬ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়।
এই প্রতিবেদন থেকে মার্কিন সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে বাংলাদেশে বাস্তবায়নাধীন সব প্রকল্প ও কর্মসূচির ব্যয় অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশনার বিষয়ে জানা যায়। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ২০ জনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার বিষয়ে এই প্রতিবেদনসহ পুরো বুলেটিনে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্র ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ২০ জনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কি না—এ বিষয়ে সত্যতা জানতে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের ওয়েবসাইটে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা আরোপের তালিকায় সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বা অন্যান্য কারও নাম পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া দেশের ও বৈশ্বিক কোনো গণমাধ্যমে এ বিষয়টির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ২০ জনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার দাবিটি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে, এটিএন নিউজ এবং যমুনা টেলিভিশনের আলাদা দুটি সংবাদের নিউজ প্রেজেন্টারদের পড়া সংবাদের দৃশ্য কাট করে এই দাবিতে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।