চিনি খেলে শিশুদের হাইপারঅ্যাকটিভিটি বা অস্থিরতা দেখা দেয়—এমন ধারণা অনেকের। কিন্তু আসলেই কি চিনি খেলে শিশুদের মধ্যে অস্থিরভাব দেখা দেয়? চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে ২০২৪ সালের ২১ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাবা–মায়েরা শিশুদের অতিরিক্ত চঞ্চলতার মতো আচরণের জন্য চিনি বা চিনি জাতীয় খাবার খাওয়াকে দায়ী করে আসছেন। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, এর কোনো সত্যতা নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ সায়েন্সেস সেন্টারের ডিভলপমেন্টাল অ্যান্ড বিহেভিওরাল পেডিয়েট্রিক্সের চিকিৎসক অধ্যাপক মার্ক ওলরাইচ বলেন, ‘চিনি খেলে শিশুদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়, এই বিষয়টি শুধুই একটি ধারণা।’
মার্ক ওলরাইচ ১৯৯০–এর দশকে এ বিষয়ে একটি গবেষণা করেছেন। চিনি খেলে শিশুদের মধ্যে অস্বাভাবিক চঞ্চলতা দেখা দেয়, এই ধারণাটিকে মিথ্যা প্রমাণ করেন মার্ক ওলরাইচ। ডাবল–ব্লাইন্ড র্যান্ডমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়াল পদ্ধতিতে গবেষণায় তিনি দেখেন, চিনি বা কৃত্রিম মিষ্টি কোনোটিই শিশুদের আচরণ বা বৃদ্ধিবৃত্তিক কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে না।
শিশুদের আচরণে চিনির প্রভাব সম্পর্কিত পূর্ববর্তী গবেষণার তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জেএএমএ নেটওয়ার্ক ওপেন জার্নালে প্রকাশিত ১৯৯৫ সালের একটি গবেষণাপত্রের ফলাফল থেকে জানা যায়, চিনি শিশুদের আচরণ বা বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মক্ষমতার ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না।
ন্যাশনালজিওগ্রাফিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স কমিটি অন নিউট্রিশনের চেয়ারম্যান মার্ক কর্কিন্সের এবিষয়ে একটি মন্তব্য পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘চিনি খেলে শিশুদের মধ্যে অতিমাত্রায় চঞ্চলতা তৈরি হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের লোমা লিন্ডা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের ওয়েবসাইটের একটি প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক সাবিহা কাঞ্চওয়ালার এ বিষয়ে মন্তব্য পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘চিনি খেলে শিশুদের মধ্যে অতিরিক্ত চঞ্চলতা দেখা দেওয়ার ধারণাটি একটি প্রচলিত বিশ্বাসমাত্র।’
সাবিহা কাঞ্চওয়ালা আরও বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের হাইপারঅ্যাকটিভিটি বা অতিরিক্ত চঞ্চলতা পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার কারণে হয়। প্রাপ্তবয়স্করা পর্যাপ্ত না ঘুমালে যেমন তাঁরা সারাদিন ক্লান্ত বোধ করেন এবং তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে, তেমনি শিশুদের ক্ষেত্রে হাইপার অ্যাকটিভিটি বা অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।’
শিশুদের পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করার জন্য ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার পরামর্শ দেন তিনি।