চাঁদা না দেওয়ায় দোকানিকে কয়েকজন মিলে মারধর—এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে প্রায় একই ক্যাপশনে ছড়ানো হচ্ছে। ভিডিওতে দোকানে এক ব্যক্তিকে তিন–চার মিলে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারতে দেখা যায়।
‘Razon Khan’ নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ৩৭ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘পুরো দেশ এখন চাঁদাবাজদের দখলে,, সত্যি আমার খুব মায়া হচ্ছে ভাইটির এই অবস্থা দেখে,, ভাইটির কাছে চাঁদা দাবি করেছিলো ১ লাখ টাকা,, দেয় নি বলে দোকানের এসে এলোপাতাড়ি হাম*লা।’ (বানান অপরিবর্তিত)
আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বেলা ১১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ভিডিওটি ৩ লাখ ৪১ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং পোস্টটিতে ১ হাজার ৩০০টি রিঅ্যাকশন পড়েছে, ৫৪৪টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ৭ হাজার ৪০০। পোস্টে কেউ কেউ এই ভিডিওটি ভারতের উল্লেখ করে কমেন্ট করেছেন। আবার অনেকে বাংলাদেশের ঘটনা লিখেও মন্তব্য করেছেন।
Tapan Roy নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘কি অসাধারণ সুন্দর নতুন বাংলাদেশ।’ (বানান অপরিবর্তিত) Md Sumon লিখেছে, ‘কোথায় আছে না সুখে থাকতে ভুতে কিলায় বাঙালি অবস্থা এখন তাই ২৪শে স্বাধীনতা ভোগ কর বাংলাদেশের জনগণ।’ (বানান অপরিবর্তিত)
Sheikh Saruar, আমি সৈনিক ও MA Rahman নামে অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।
ভিডিওটির কিছু কি–ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে গতকাল সোমবার (১৪ এপ্রিল) ভাস্কর নামে একটি হিন্দি দৈনিকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ভাস্কর বা দৈনিক (Bhaskar) পত্রিকাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের ভোপাল ভিত্তিক একটি জাতীয় দৈনিক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর প্রদেশ রাজ্যের লখিমপুরে পূবশত্রুতার জেরে এক হোটেল মালিককে পিটিয়েছে কিছু দুর্বৃত্ত। সিসিটিভি ক্যামেরায় সেই দৃশ্য ধরা পড়েছে। প্রতিবেদনে ভিডিওটি ফুটেজও যুক্ত করা হয়েছে। এই ফুটেজের সঙ্গে বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ফুটেজের মিল রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোটেল মালিক জগদীশ কুমার তাঁর দোকানে ছিলেন। এমন সময় রাজেশ ভার্মা, তাঁর ছেলে অনুজ ভার্মা এবং রোহিতসহ কয়েকজন ব্যক্তি এসে আকস্মিকভাবে তাঁকে মারতে থাকেন। পুলিশ জানিয়েছে, ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের আটকের চেষ্টা চলছে।
এ ছাড়া Latestly নামে ইংরেজি ভাষার একটি ভারতীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়।
সুতরাং, চাঁদা না দেওয়ায় দোকানিকে মারধর করা হয়েছে দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি বাংলাদেশের ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের লখিমপুর খেরি জেলার ঘটনা।