বাংলাদেশে এক হিন্দু নারী ইসলাম ধর্ম গ্রহণে রাজি না হওয়ায় ও জিযিয়া কর দিতে অস্বীকার করায় মুসলমানেরা পুরো হরিজন কলোনি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে— এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি বিভিন্ন এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় একই ক্যাপশনে ছড়ানো হয়েছে।
ভিডিওর শুরুতে দুইজন নারীকে কথা বলতে দেখা যায়। তাঁরা উভয়ই কান্নারত অবস্থায় আগুনে তাঁদের ঘরবাড়ি পুরে যাওয়ার কথা জানান। ভিডিওর ডানদিকে নিচে দেশের একটি বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার লোগো দেখা যায়।
‘Pakistan Untold’ নামে এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ১০টা ১৮ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে ইংরেজিতে লেখা, ‘ইসলামপন্থীরা একজন অসহায় দরিদ্র বাংলাদেশি হিন্দু নারীর বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। যার কারণে সেই নারী সর্বশান্ত হয়ে গিয়েছেন। তিনি হরিজন সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। ইসলামে ধর্মান্তরিত না হওয়া ও জিযিয়া কর দিতে অস্বীকার করায় তাঁদের শাস্তি হিসেবে পুরো হরিজন কলোনি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’ (বাংলায় অনূদিত)
আজ শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বেলা ১২টা পর্যন্ত ভিডিওটি ৫৩ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং পোস্টটিতে ৩ হাজার ৫০০টি রিঅ্যাকশন পড়েছে, ১২২টি কমেন্ট পড়েছে এবং রিপোস্ট (শেয়ার) হয়েছে ২ হাজার ৩০০। পোস্টে অনেজেই সত্য মনে করে কমেন্ট করেছেন।
Sisir Kumar Monia নামে এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ইংরেজিতে মন্তব্য করা হয়েছে, ‘লজ্জা, লজ্জা।’ (বাংলায় অনূদিত) Abhishek Kumar লিখেছে, ‘শুধু হিন্দুদের টার্গেট করা হয়েছে। সেটা পাকিস্তান হক, বাংলাদেশ হোক বা বেঙ্গল।’ (বাংলায় অনূদিত)
Nil ও Joy Das নামে অ্যাকাউন্ট থেকে একই দাবিতে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর ডানদিকে নিচে বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম সময় টেলিভিশনের লোগো দেখতে পাওয়া যায়। যার মানে ভিডিওটি সময় টেলিভিশন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সময় টেলিভিশনের এক্স পেজে খোঁজ করে একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) প্রকাশিত। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) চট্টগ্রামের সিআরবি গোয়ালপাড়া এলাকায় আগুন লাগার ঘটনা এটি।
একই দিনে সময় টিভিতে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৫ এপ্রিল ভোরে চট্টগ্রামের সিআরবি গোয়ালপাড়ার মালিপাড়া বস্তির একটি ঘরে আগুন লাগে। মুহূর্তেই তা আশেপাশের ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করে। এই অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১৫-২০টি ঘর পুড়ে
যায়।
বাংলাদেশের সরকারি বার্তা সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ওয়েবসাইটে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুর রাজ্জাকের বরাতে গত ১৫ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকার গোয়ালপাড়ায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট।
ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ও অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনে গত ১৫ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে একই তথ্য জানা যায়।
সুতরাং, ধর্মান্তরিত হতে রাজি না হওয়া ও ও জিযিয়া দিতে অস্বীকার করায় মুসলমানেরা হরিজন পাড়ায় আগুন দেওয়ার দাবিটি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে, এটি গত ১৫ এপ্রিল চট্টগ্রামের সিআরবি গোয়ালপাড়ার মালিপাড়া বস্তির একটি ঘরে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও।