বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর ফেসবুক পেজে পবিত্র হাদিস পোস্ট করেছেন— এমন দাবিতে একটি পোস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
‘ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে পোস্টটি করা হয়। পোস্টে লেখা আছে, ‘একদল তরুণের আবির্ভাব ঘটবে, যারা চিন্তায় হবে অপরিণত’। তারা সুন্দর সুন্দর কথা বলবে, কিন্তু করবে সবচেয়ে ঘৃণ্য কাজ। তারা এত বেশি ধর্ম পালন করবে, যার কাছে মুসলমানদের ইবাদত তুচ্ছ বলে মনে হবে। তারা মানুষকে কোরআনের কথা বলবে, কিন্তু তা হবে কেবল তাদের মুখে মুখের কথা। অর্থাৎ, তারা এর মর্মার্থ কিছুই বুঝবে না, কেবল বেছে বেছে কিছু অংশ নিয়ে আওড়াতে থাকবে। আর এরাই হচ্ছে সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট—হযরত মুহম্মদ (স:)
[হাদিস গ্রন্থ সহিহ মুসলিম
চতুর্থ খন্ড, পৃষ্ঠা নং: ৪০৭ ]’
(বানান অপরিবর্তিত)
পোস্টটিতে আজ মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০টি রিঅ্যাকশন পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ১৯৪। এ ছাড়া পোস্টটিতে ২৯৮টি কমেন্ট পড়েছে। এই পোস্টটি ‘ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল’ করেছেন এমনটা ভেবে অনেকে কমেন্ট করেছেন।
মো. মাসুম (Md Masum) নামে অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘ওরে সুবহানাল্লাহ জাফর ইকবাল এখন হাদিসও পোস্ট করে’ (বানান অপরিবর্তিত)
আব্দুল্লাহ খান (Abdullah Khan) লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ অবশেষে ইসলাম প্রচার করা শুরু করেছেন।’ (বানান অপরিবর্তিত)
পোস্টটি কি ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের?
এই বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ে শুরুতে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ ‘ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল’ নামের ফ্যাসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করে। পেজটির ট্রান্সপারেনসি অপশনে গিয়ে দেখা যায়, এই পেজটি ২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর খোলা হয় এবং ওই সময় পেজটির নাম ছিল ‘শ্রাবণ সন্ধ্যা’। আর এতে দুইজন বাংলাদেশি অ্যাডমিন রয়েছে।
পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পেজটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘PAGE NO.67’ এবং ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট পেজটির নাম পরিবর্তন করে ‘Faruque Ahamed’ রাখা হয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর পেজটির নাম পরিবর্তন করে ‘ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল’ রাখা হয়।
অর্থাৎ, আগের ভিন্ন নামের একটি পেজের নাম পরিবর্তন করে ‘ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল’ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে ফেসবুকে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল লিখে সার্চ করলে কোনো ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বা পেজ পাওয়া যায়নি।
গুগলে এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড সার্চ করলে ডেইলি ক্যাম্পাসের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ২০২৩ সালের ১০ মার্চ প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেই সময় ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়।
ড. জাফর ইকবাল গণমাধ্যমটিকে জানান, এমনিতে তিনি সেই ফেসবুক পেজ পরিচালনা করতেন না। তাঁর নামে যাতে অন্য কেউ কোনো নকল অ্যাকাউন্ট করতে না পারে সেজন্য তাঁর শিক্ষার্থীরা তাঁর নামে একটি অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে। সেটিই হ্যাকড হয়।
এই প্রতিবেদনে উল্লিখিত হ্যাকড হওয়া ‘Muhammed Zafar Iqbal’ নামের ফেসবুক পেজটি ব্রাউজারে ওপেন করার চেষ্টা করলে পেজটি প্রদর্শিত হয়নি।
সুতরাং, বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর ফেসবুক পেজে পবিত্র হাদিস পোস্ট করেছেন এমন দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পোস্টটি ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বা তাঁর আসল ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের নামে চালু করা ভিন্ন ফেসবুক পেজ থেকে এই পোস্টটি করা হয়েছে।