ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তিনি প্রকাশ্যে আসেননি।
গত ১৬ মার্চ (রোববার) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড আড়াই দিনের সফরে ভারতে আসেন। সফরে একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কথা জানান তিনি।
এই সফরে তুলসী গ্যাবার্ডের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক হয়েছে দাবিতে একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে বাঁ পাশে তুলসী গ্যাবার্ড ও ডান পাশে শেখ হাসিনাকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। তাঁদের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পতাকা। ছবিটি বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ থেকে প্রায় একই ক্যাপশনে ছড়ানো হয়েছে।
‘স্পর্শ ছায়া’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ১৮ মিনিটে করা পোস্টটি বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। আজ বুধবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ছবিটিতে ৬১৮টি রিয়েকশন পড়েছে। এ ছাড়া ৭৮ টি কমেন্ট করা হয়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ১৩১টি। এসব কমেন্টে অনেকে ছবিটি এডিটেড বলে উল্লেখ করেছেন। আবার কেউ কেউ সত্য মনে করেছেন। Sheikh Moman নামে অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘বিজয় আবার আসবে ইনশাআল্লাহ জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।’
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা, ‘”মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান “তুলসী গ্যাবার্ড” আমাদের মমতাময়ী অভিভাবক বাংলাদেশের বৈধ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী”
(বঙ্গবন্ধুকন্যা” দেশরত্ন শেখ হাসিনা’র সাথে একান্ত বৈঠক শেষে)
“আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে “গ্যাবার্ড” ভালোবেসে বুকে জরিয়ে ধরে জানিয়েছেন”
“আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েই দেশে ফিরছেন”
“তুলশী গ্যাবার্ডের” আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এই আবেগঘন ভালোবাসা ও এক নজিরবীহিন প্রতিশ্রুতির কথা আমরা বাংলাদেশের মুক্তিকামী সাধারন জনগন সারাজীবন মনে রাখবো”
“এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট “ডোনাল্ড ট্রাম্প” প্রশাসন ও আমাদের পাশ্ববর্তী পরম বন্ধু দেশ ভারত সরকারের মাননীর প্রধানমন্ত্রী”
“নরেন্দ্র মোদিজির” সরকারের প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ থাকবো”
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ (বানান অপরিবর্তিত)
‘Rehena Begum’, ‘স্নেহের বাঁধন’ নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের পেজ’ পেজ থেকেও একই ক্যাপশনে ছবিটি পোস্ট করা হয়েছে।
অবশ্য ‘Shoma Khan Siddiqua’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা ‘স্পর্শ ছায়া’ পেজের পোস্টটির একটি স্ক্রিনশট দেশের অনেকে শেয়ার করছেন।
ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে যুক্তরাষ্টের সংবাদমাধ্যম দ্য গেজেটের একটি প্রতিবেদনে একটি ছবি পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি গতকাল মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) প্রকাশিত। এই ছবির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে থাকা তুলসী গ্যাবার্ডের বসার ধরন, পোশাক, আসবাবপত্র, পেছনের দেয়াল, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পতাকা এসব কিছুর মিল পাওয়া যায়। এই ছবিতে ডান পাশে বসা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৭ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই সময় তাঁরা নানা বিষয়ে আলোচনা করেন।
একই তথ্যে ছবিটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর এক্স অ্যাকাউন্টে গত ১৭ মার্চ পোস্ট করেন।
তুলসী গ্যাবার্ড ও শেখ হাসিনার ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চে বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে ২০২৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে একটি ছবি পাওয়া যায়। এটি শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির নয়াদিল্লিতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের ছবি।
এই ছবিতে শেখ হাসিনার বসার ধরন, পোশাক, হাতের অবস্থান, চাহনি ও মুখভঙ্গির সঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ডের সঙ্গে বৈঠক দাবিতে ছড়ানো ছবির সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
একই তথ্যে ছবিটি ২০২৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর যমুনা টেলিভিশনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে পাওয়া যায়।
এক্স হ্যান্ডলে নরেন্দ্র মোদির শেয়ার করা তুলসী গ্যাবার্ডের সঙ্গে বৈঠকের ছবি, ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকের ছবি এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার ছবি পাশাপাশি রাখলে কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ছবিটি দেখলে মনে হয়, শেখ হাসিনা পা ঝুলিয়ে চেয়ারে বসে আছেন। হাইপ্রোফাইল কোনো বৈঠকে এমন ভঙ্গিতে কারও বসা কল্পনাতীত! গভীরভাবে দেখলে বোঝা যায়, শেখ হাসিনা যে পাশে বসে আছেন সে পাশের টেবিলের প্রান্ত এবং মেঝের মধ্যে অসামঞ্জস্য রয়েছে।
স্পষ্টত ছবিটি এডিটেড। মূলত, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত সফরে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকের ছবি থেকে শুধু শেখ হাসিনার ছবিটুকু কেটে নেওয়া হয়েছে। এরপর শেখ হাসিনার ছবিটির মিরর ইমেজ নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ডের বৈঠকের ছবিটিতে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কাঁচা হাতের সম্পাদনায় অনেক ত্রুটি রয়ে গেছে, যা ছবিতে স্পষ্ট বোঝা যায়।