সাহিত্য বিভাগের নির্ধারিত প্রশ্নে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কবি খালেদ চৌধুরী। তার জন্ম কুমিল্লার চড়ানলে, ৯ নভেম্বর ১৯৮৫। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর। প্রকাশিত গ্রন্থ: পাস নম্বর ৩৩ (কাব্যগ্রন্থ), লাল জিহ্বার নিচে (গল্পগ্রন্থ), +চিহ্ন (কাব্যগ্রন্থ) এবং পাঁচফুট ৯ ইঞ্চি (গল্পগ্রন্থ)।
বাংলা ট্রিবিউন: কোন বিষয় বা অনুভূতি আপনাকে কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করে?
খালেদ চৌধুরী: সাধারণত ক্ষরণ আমাকে লিখতে অনুপ্রাণিত করে। কোথাও ঠকে গেলে, অপমানিত হলে—কান্নার বেশি কিছু করার ক্ষমতা আমার নাই। কান্না করতে না-পারলে কলমে বৃষ্টি হয়ে ঝরে, এইসব সুখদুঃখ মাখা খালেদের চরিত্রে ভুলভাল অভিনয় করা খসড়া জীবনী, কিবোর্ডে খটখট করে। কৈশোরে আমি একটা নিরানন্দ পরিবেশে বড় হয়েছি। অনেকটা প্রেশারকুকারে সিদ্ধ হওয়ার মতো। সেই অনুভূতিগুচ্ছ লিখে নিজের একটা আকাশ বানানোর ভাবনা থেকে মনে মনে শব্দচাষ। ভাবনায় অস্থির হলেই কেবল লিখতে পারি।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কী ধরনের থিম বা বিষয় নিয়ে কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
খালেদ চৌধুরী: আমার নিজস্ব বোকামিগুলো মাছের রেণুর মতো খুলির অ্যাকুরিয়ামে সময়ের সাথে একটা হেঁয়ালিপূর্ণ মাড়কসা। ইদানীং সেই ভাবনাসুতো দিয়ে প্রেমাষ্পদকে ছোঁবার একটা ভং ধরেছি। রক্তমাংসের যাকে পেয়েছি সে প্রতিনিয়ত ক্ষমানন্দিনী। প্রায় সময় মনে হয়ে আমি কী শয়তান? আসতাগফিরুল্লা বলে নিজেকে শুদ্ধ করে আবার শুরু করি—সেই দৃশ্যগুলো, কল্পনাগুলো, ভাবনাগুলো, শয়তানিগুলো স্নায়ুর গিঁট পাকায়। সেগুলোকে লিখে তাহার সাথে যুক্ত হতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তাৎক্ষণিক অনুপ্রেরণায় লেখেন, নাকি ধীরে ধীরে শব্দ সাজান?
খালেদ চৌধুরী: তাৎক্ষণিক অনুপ্রেরণায় লেখা হয় না। আমার কবিতার বুনন খুব ধীর লয়ে চলে।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার কবিতার ভাষা ও শৈলী কীভাবে বেছে নেন?
খালেদ চৌধুরী: সামান্য পাঠ অভ্যাস আছে। বোধহয় অবচেতনে একটা অ্যালগরিদম তৈরি হয়েছে। যা আমি সচেতনভাবে জানি না। অন্তত আমার ক্ষেত্রে সেই অ্যালগরিদমটা ভাষা এবং শৈলী ঠিক করে দেয়। আবার কবিতা যখন দাঁড়ায়—অনেক সময় দেখি ভাষা-চিন্তা-শৈলী সব কিছুই বৃথা। হীরক উজ্জ্বল শব্দের লোভ তো আছে। আবার প্রতিনিয়ত ব্যবহার্য মুখের ভাষাকে বাদ দেই কী করে? হৃদয়ের ভাষা প্রকাশে মস্তিষ্কের নন্দনমেকাপে প্রায়ই বিভ্রান্ত হই। উৎকর্ষমণ্ডিত বলে একটা কথা আছে!
বাংলা ট্রিবিউন: কোন কোন কবির প্রভাব আপনার লেখায় আছে?
খালেদ চৌধুরী: এটা আমি বলতে বলতে পারব না। যারা আমার কবিতা পাঠ করেছে, প্রকাশ করেছে তারা বলতে পারবে। কোন জায়গা থেকে কী চয়ন করেছি বা চুরি করেছি এইসব বিষয়-আশয়। তবে সচেতনভাবে অনেকের লেখার ওপরই অনুরক্ত।
বাংলা ট্রিবিউন: কথাসাহিত্যের চর্চা করেন? এ চর্চা আপনার কবিতায় কতটুকু প্রভাব রাখে?
খালেদ চৌধুরী: কথাসাহিত্যের জন্য কবিতা চর্চা করি। ধরেন কেউ একজন বা অনেকজন হয়ত বলল, আমার কবিতা বা লেখালেখি কিছু হয় না। বা কবিতা লিখতে আমারে কে কইছে? দিনশেষে বয়ে চলা জীবনের লাশ সম্পর্কে আমাকে বলতেই হয়—লিখতে হয়। কাজেই আমার কাছে কবিতা আর কথা খুব একটা দূরত্ব বহন করে না। নিজের কথা নিজেকেই শোনাই পড়াই। দেখলাম বিষয়টা সয়ে গেছে। আমার বেলায় কবিতা চর্চা কথাসাহিত্যের জন্য দারুণ একটা ক্ষেত্র বলে মনে হয়।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনার প্রথম কবিতার বই সম্পর্কে কিছু বলুন। প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি কেমন ছিল?
খালেদ চৌধুরী: “পাস নম্বর ৩৩” আমার প্রথম কবিতার বই। আমাদের বন্ধু মোস্তাফিজ কারিগর মহাশয়ের একটা কথা আছে, “টাকা জমিয়ে প্রতি বছর নিজের লেখা একটা বই নিজেকে উপহার দেই।” কথাটা মনে ধরেছে। নিজের বই যেহেতু নিজেকে উপহার দেই বুঝতেই পারছেন আনন্দটা কীরকম। লিখতে পারলেই আনন্দ লাগে।
বাংলা ট্রিবিউন: সমকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ঘটনা কি আপনার কবিতায় প্রভাব ফেলে? যদি ফেলে, তবে কীভাবে তা প্রকাশিত হয়?
খালেদ চৌধুরী: যেহেতু সমাজ-রাজনীতি-সংস্কৃতি-ধর্ম এগুলো পরস্পর নির্ভরশীল; সমাজে বসবাস করলে এগুলো প্রভাব ফেলতে বাধ্য। অবশ্যই আমার কবিতায় গল্পে এগুলো সরাসরি প্রভাব ফেলে। ৫ আগস্টের পট-পরিবর্তনে ওই সময়ে লেখা কয়েকটা কবিতায় বিদ্রোহী রূপ প্রকাশ পেয়েছে। আবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে কয়েকটা কাজের সাথে যুক্ত ছিলাম। এর মানে সর্বান্তঃকরণে কোনো রাজশক্তির প্রশংসকও নই আবার অন্ধ-বিরোধীও নই।
বাংলা ট্রিবিউন: পাঠকদের মন্তব্য আপনার লেখায় কোনো পরিবর্তন আনে?
খালেদ চৌধুরী: আগেই বলেছি, একটা বড় বিষয় আন্দাজি শিখে গেছি—সেটা হলো নিজের জন্য লিখি। তারপর সেটা পাঠক-সম্পাদকের সাথে ভাগ করি। সাধারণত পাঠকের মন্তব্যে আমার লেখায় কোনো পরিবর্তন করি না। অবশ্য সম্পাদকের সুচিন্তিত মতামতকে সম্মান করি অনেক সময় তা গ্রহণ করে লেখায় পরিবর্তন করি।
বাংলা ট্রিবিউন: ভবিষ্যতে কী ধরনের কবিতা লিখতে চান? নতুন কোনো ধারা বা শৈলীতে কাজ করার ইচ্ছা আছে কি?
খালেদ চৌধুরী: ভবিষ্যতে আর কবিতা লিখতে চাই না। মনে হয় একই কবিতা বারবার লিখছি। উপন্যাস লিখতে চাই। ধারা বা শৈলীতে ব্যাপক পরিবর্তনের ইচ্ছা আছে। দেখা যাক কী হয়।