Homeসাহিত্যকবিতা অনেকটা ঐশীবাণী : কালাচাঁদ মৃত্যু

কবিতা অনেকটা ঐশীবাণী : কালাচাঁদ মৃত্যু


সাহিত্য বিভাগের আয়োজনে নির্ধারিত প্রশ্নে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কবি  কালাচাঁদ মৃত্যু। তিনি ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া উপজেলার পশ্চিমপাড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পেয়েছেন ‘নজরুল স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার’।

বাংলা ট্রিবিউন: কোন বিষয় বা অনুভূতি আপনাকে কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করে?

কালাচাঁদ মৃত্যু: মানবমূল্যের অবক্ষয়, অপসংস্কৃতি, কুসংস্কার, নির্মম সভ্যতার ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অস্থিরতা, ঐতিহ্য, মা-মাটির লাঞ্ছনা, স্বদেশচেতনা, যেকোনো আদর্শ ও বেড়াজাল থেকে মুক্তির স্বপ্ন, হঠাৎ হৃদয়ে জাগ্রত অপরিণত প্রেমানুভূতি, অভিমান এবং কিছু অপ্রকাশিত অনুরণন আমাকে কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করে। 

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কী ধরনের থিম বা বিষয় নিয়ে কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

কালাচাঁদ মৃত্যু: কবিতার আবার থিম! গবেষকের কাজ! প্রকৃতির আয়োজনে গতিময় স্রোত যার দিকে দৃষ্টি ছুটে, সে-ই হয়ে উঠতে পারে আমার কবিতার থিম—সে অনির্দিষ্ট বাতায়ন!

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তাৎক্ষণিক অনুপ্রেরণায় লেখেন, নাকি ধীরে ধীরে শব্দ সাজান?

কালাচাঁদ মৃত্যু: কবিতা অনেকটা ঐশীবাণী; এক ক্ষণস্থায়ী সঞ্চারীভাব; যা মগজে অবতরণমাত্র তাৎক্ষণিকভাবেই বর্ণে দৃশ্যমান করতে হয়। কারণ, কোনোরকম কালক্ষেপণ করলে ভাবনাটি কর্পূরে ভর করে। বাকি থাকল ‘ধীরে ধীরে’! না, অমন ধীরতার ধৈর্য আমার অন্তত নেই।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার কবিতার ভাষা ও শৈলী কীভাবে বেছে নেন?

কালাচাঁদ মৃত্যু: আমার ভাষা-শৈলী কিছুটা নিজস্বতায় নির্মিত। অনেক সময় পাঠককে বলতে শুনি, আপনার লেখার ভাষা অন্য লেখকদের থেকে কিছুটা ভিন্ন—পাঠমাত্রই বোঝা যায় লেখাটি কার। এটাকে বোধহয় ভাষাবলয় বলা হয়। যা আমি নিজে টেরই পাই না!

বাংলা ট্রিবিউন: কোন কোন কবির প্রভাব আপনার লেখায় আছে?

কালাচাঁদ মৃত্যু: জানা নেই। এটা গবেষক-পাঠকমহল আবিষ্কার করবেন।

বাংলা ট্রিবিউন: কথাসাহিত্যের চর্চা করেন? এ চর্চা আপনার কবিতায় কতটুকু প্রভাব রাখে?

কালাচাঁদ মৃত্যু: কেন নয়? কথাসাহিত্যের চর্চা না করলে হয়? তবে কবিতার প্রভাব একদমই আমার কথাসাহিত্যে পড়ে না। এর রহস্য অন্যত্র; কথাসাহিত্যে যখন ডুব দেই, তখন আমি কবিই তো থাকি না!

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার প্রথম কবিতার বই সম্পর্কে কিছু বলুন। প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি কেমন ছিল?

কালাচাঁদ মৃত্যু: প্রথম কবিতার বই “চেতনার বাণ” প্রকাশ হয়েছিল এক বিস্ময়কর ঘটনার মধ্য দিয়ে। কাজী রফিকুল ইসলাম, তার সাথে ফেসবুকে হঠাৎ পরিচয়। তিনি একজন আমেরিকান সিটিজেন ও সাহিত্য-বিশ্লেষক। তার ভাষ্যমতে, দীর্ঘ তিন-চার বছর ধরে তিনি অনলাইনের তরুণ কবিদের উপর জরিপ করছিলেন, তার দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ কবি নির্বাচনের জন্য। এই জরিপের পেছনে ছিল নিভৃত এক মহৎ পরিকল্পনা, তার শ্রেষ্ঠ কবিকে তিনি বই প্রকাশের জন্য ১ লক্ষ টাকা দেবেন। সেই নির্বাচনের তালিকায় উঠে আসে ‘কালাচাঁদ মৃত্যু’ নামটি। একটি অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে। তিনি বলছেন, “আপনি যদি কিছু মনে না করেন, আমি আপনাকে ১ লক্ষ টাকা দিতে চাই, আপনার কবিতার বই প্রকাশের জন্য। আপনি আমার দৃষ্টিতে সর্বশ্রেষ্ঠ তরুণ কবি।” কথাগুলো শুনে নির্বাক; বিশ্বাস হচ্ছিল না যে লোকটি কী বলছে! হ্যাঁ, ঠিক তাই ঘটলো। উনি আমার নাম্বারে ১ লক্ষ টাকা পাঠালেন মুহূর্তের মধ্যে। “চেতনার বাণ” প্রকাশিত হলো। কাব্যখানি উনাকে উৎসর্গও করলাম। কিন্তু সবচেয়ে বড়ো কষ্ট, ওনাকে আর খুঁজে পাইনি! একটা বই ওনাকে দিতে পারিনি। আজও আমি অনলাইনে ওনাকে খুঁজে বেড়াই আর দুঃখবোধে হৃদয় ভাঙি।

এই কাব্যে ঠাঁই পেয়েছে নিজস্ব গবেষণা ও অভিনব কৌশলে সৃষ্টি কবিতা। যেমন: ম্রৈত্যুয়িকী, পরিবেষ্টন, দশপ্তকেন্দু, ত্রিপঞ্চকী, ষটষ্টাদশী, সনেটের বিভিন্ন নিরীক্ষাধর্মী কবিতা, স্বদেশ চেতনার কবিতা, মুক্তক অমিত্রাক্ষরসহ নানা ধরনের কবিতা। সব বয়সের পাঠকের জন্য লেখা হয়েছে গ্রন্থখানি।

একদিকে আনন্দ ও অন্যদিকে বিস্ময় এই দুই অনুভূতির মধ্য দিয়েই “চেতনার বাণ” কাব্যের জন্ম ঘটেছিল।

বাংলা ট্রিবিউন: সমকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ঘটনা কি আপনার কবিতায় প্রভাব ফেলে? যদি ফেলে, তবে কীভাবে তা প্রকাশিত হয়?

কালাচাঁদ মৃত্যু: অবশ্যই প্রভাব ফেলে। রূপকের আশ্রয়ে কিছু স্পর্শকাতর বিষয় কবিতায় ধরা পড়ে। অনেক সময় সরাসরিও প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে কলম।

বাংলা ট্রিবিউন: পাঠকদের মন্তব্য আপনার লেখায় কোনো পরিবর্তন আনে?

কালাচাঁদ মৃত্যু: বিশেষ করে না। আমার একান্ত অনুভূতি নিজের মতো করেই প্রকাশ করি। একটি শিক্ষা আমার আছে—সেটা হলো, কারো মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে খেলনা গড়া আমি একদম পছন্দ করি না। পাঠক আমাকে যা করতে বলবে, সেটা করা আমার পক্ষে একদম অসম্ভব। এটাই আমার ব্যক্তিত্ব।

বাংলা ট্রিবিউন: ভবিষ্যতে কী ধরনের কবিতা লিখতে চান? নতুন কোনো ধারা বা শৈলীতে কাজ করার ইচ্ছা আছে কি?

কালাচাঁদ মৃত্যু: সাহিত্য-সময় যেদিকে টেনে নেবে, স্রোতের মতো সেদিকেই ছুটব, তবে ব্যক্তিত্ব খর্ব করে নয়। আর আমি নতুন ধারা বা শৈলীর চর্চাই মূলত বেশি করার চেষ্টায় থাকি। ইতোমধ্যে কবিতার ছন্দের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়েই এগিয়ে চলছি। বাংলা ছন্দের বৈজ্ঞানিক নামকরণের সাথে সাথে কিছু নতুন ছন্দসহ শব্দবৃত্তের উপর কাজ করছি বর্তমানে। দেশ-বিদেশের হরেক ছন্দধারাকে বাংলায় চর্চা করছি ও করাচ্ছি। যা করেছি, করেছি; আরও নতুন কিছু করার দায়ও আমার আছে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত