Homeসাহিত্যআলবারো মুতিসের কবিতা

আলবারো মুতিসের কবিতা


লাতিন আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার সাহিত্যের প্রসঙ্গ উঠলে আমাদের সকল মনোযোগের কেন্দ্রে উঠে আসে গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের নাম, কিন্তু তার প্রায় সমসময়েই আরেকজন কলম্বিয়ান সাহিত্যিকও বিশ্বজোড়া নাম কুড়িয়েছিলেন, যিনি মার্কেসের চেয়ে কয়েক বছরের বড় ছিলেন, যার নাম আলবারো মুতিস (১৯২৩-২০১৩), মার্কেস নিজে যার লেখার একজন বড় অনুরাগী ছিলেন। মুতিসের শৈশব কাটে কলম্বিয়ার বাইরে বেলজিয়ামে পিতার কর্মসূত্রে, যদিও এগারো বছর বয়সে তিনি স্বদেশে ফিরে আসেন। জাতে বোহেমিয়ান মুতিস বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ না করেই সাহিত্যচর্চা ও নানাবিধ বিচিত্র কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। ১৯৪৮ সালে বন্ধু কার্লোস পাতিনিয়োর সঙ্গে যৌথভাবে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ লা বালান্সা (দা ব্যালেন্স)। কলম্বিয়ার সামরিক স্বৈরাচারের রোষানলে পড়ে ১৯৫৬ সাল থেকে তাকে মেহিকোতে নির্বাসিতের জীবন কাটাতে হয়।

সেখানে তিনি বিখ্যাত কবি ও প্রাবন্ধিক ওক্তাবিয়ো পাসের সুদৃষ্টি ও আনুকূল্য লাভ করেন এবং আরও কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন, যাদের মধ্যে অন্যতম Summa de Maqroll el Gaviero: Poesía (1948–1997)। এই মাক্রল বস্তুত তার একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় উপন্যাসমালার প্রধান চরিত্র, যে সাতটি উপন্যাসিকা একত্রে সংকলিত হয়ে পরবর্তীকালে The Adventures and Misadventures of Maqroll নামে প্রকাশিত হয় এবং যা তাকে প্রভূত সম্মান ও জনপ্রিয়তা এনে দেয়। এই মহাগ্রন্থের জন্যই তিনি মূলত ২০০১ সালে স্পেনের সুবিখ্যাত সাহিত্যপুরস্কার Miguel de Cervantes Prize এবং তার পরের বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদাবান Neustadt International Prize for Literature এ ভূষিত হন। ২০১৩ সালে নব্বই বছর বয়সে তার জীবনাবসান ঘটে। কলম্বিয়ার সমুদ্র, অরণ্য, কৃষিখামার; তার সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ভূগোল, সর্বোপরি মুতিসের নিজস্ব অস্থির, অনিকেত জীবনযাপনের প্রতিধ্বনিই শুনতে পাওয়া যায় তার প্রবলভাবে প্রতীকায়িত, চিত্রল ও পরাবাস্তব কবিতার শরীরজুড়ে।

আমেন

মৃত্যু তোমাকে গ্রহণ করে
তোমার সকল স্বপ্নসমেত।
দুরন্ত যৌবনের প্রত্যাবর্তনে,
না পাওয়া ছুটির প্রারম্ভে,
প্রথম আহ্বানেই মৃত্যু তোমাকে আলাদা করে নেবে।
তোমার চোখ উন্মীলিত হবে তার বিশাল জলরাশিতে,
তুমি তার অপর পৃথিবীর নিরন্তর হাওয়ায় নিমজ্জিত হবে।
মৃত্যুও তোমার স্বপ্নের সঙ্গে গলে পড়বে এবং সেখানে
চিনে নেবে দূর অতীতে ফেরে আসা চিহ্নসমূহ,
যেভাবে বাড়ি ফিরে-আসা শিকারি
পথের বাঁকে চিনে নেয় তার নিজেরই পদচ্ছাপ।

পুবের গান

যেকোনো মোড়েই
একজন অদৃশ্য দেবতা অপেক্ষা করেন,
আবছা কুয়াশা, ঝাপসা দৃশ্য
তোমাকে অতীতের কথা বলবে।
খাঁড়ির জলের মতো, সময়
তোমার মধ্যে খোদাই করে
দিন ও সপ্তাহের, নাম কিংবা স্মারকবিহীন
বছরের, চকিত শ্রম।
যে কোনো মোড়ে
যা তুমি কখনো ছিলে না, যে তুমি
মরে গেছে তোমার হয়ে ওঠাতেই,
তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে, অর্থহীন।
কোনো ইশারামাত্র নয়,
সামান্যতম ছায়াও তোমাকে বলে না
সেই সাক্ষাতের কী অর্থ হতে পারে। তবে সেখানে,
সেখানেই রয়ে গেছে এই পৃথিবীতে
তোমার সংক্ষিপ্ত সুখের চাবিকাঠি।

সোনাটা

আবারও সময় তোমাকে নিয়ে এসেছে
আমার শেষকৃত্যের স্বপ্নের কিনারে।
তোমার ত্বক, এক ধরনের লবণাক্ত আর্দ্রতা,
তোমার চোখ, অন্যান্য দিনের চেয়ে বিস্মিত,
তোমার স্বরের সঙ্গে এসেছে, তোমার চুলের সঙ্গে।
সময়, বালিকা, এক নেকড়ে মাতার মতো কাজ করে
যে তার শাবকদের কবর দেয়,
শিকারি হাতের মরচের মতো,
জাহাজের কিলের আগাছার মতো,
জিহ্বার মতো যে অপরের শরীরের লবণ চাটে,
খনি থেকে উঠে আসা বাতাসের মতো,
পার্বত্যভূমির রাতের ট্রেনের মতো।
তার অস্বচ্ছ কাজের মধ্য দিয়ে আমরা লালন করি
খ্রিস্টানের রুটি কিংবা বাসি মাংসের মতো,
যা বস্তি-জ্বরকে প্রশমিত করে।
সময়ের ছায়ার নিচে, বন্ধু,
জলের ক্ষীণ ধারা আমাকে ফিরিয়ে দেয়
যা আমি তোমার কাছ থেকে সংরক্ষণ করি
প্রতিটি দিনের শেষ অব্দি পৌঁছানোর জন্য।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত