শূন্যে কেমন দেখ
শূন্যে কেমন দেখ চেয়ে আছে আমাদের পূর্বপুরুষরা।
যখন বিবাগী আমি রাত্রিকালে,
এই হাতে কত বাঞ্ছার মৃত্যু থেকেছে জেগে,
তখন এমনই ঘুরি যেন কোনো শিকারেতে আছি।
করছি শিকার আমি পরিচিত প্রতি তারকায়।
কেননা, আদি পিতামাতাদের লোহু সেও আমার শরীরে আছে
আকাশের বরাভয় উদ্যত কালপুরুষের মতোই।
তাই তো হন্যে হই, নিয়তই ব্যাকুল হয়ে
আমার হাড়ের ফলা জ্যান্ত শরীর থেকে ছুড়ে মারি আকাশের দিকে,
তাছাড়া নাড়ীর রজ্জু বাঁধা তার সেই প্রান্তসীমায়।
এভাবেই সশস্ত্র হাত হতে অমোঘ সে ঘাই
গিয়ে লাগে ঠিক ঠিক অভিজিৎ নক্ষত্রটির বুকে;
তখন রক্তে রক্তে ভরে যায় খগোলমণ্ডল,
তখন আমারই বাঞ্ছার সাথে সাথে হয় সেও শবদেহ।
তবুও তো নিতি নিতি সান্ত্বনা মেলে,
শূন্য হতে,
আমাদের আদি পিতা-মাতাদের হতে
আসে শান্তি, আশীর্বাদ।
হত্যার প্রচণ্ড বেদনা বুঝি—তার আনন্দ অগাধ বলেই।
সেইবার নদী থেকে ঢেউ
সেইবার নদী থেকে ঢেউ, নদীর হাওয়াতে
তার জল-বুক ছেড়ে,
ইতস্তত চলে আসে নদীটির তটে।
আর আমি সেই তীরে একা বসে বসে
দুই চোখে দিনমান দেখি এক ঢেউ।
কখনো ইচ্ছা করে এই দুই হাতে
সেই ঢেউ পান করি অমৃতেরই মতো।
কেননা, সেই ঢেউয়ে দেখি আমি তারকার ছায়া,
আমার পুরোনো ছবি—পূর্বকালের।
(আর কতদিনে জানি সেই আলো পাই)
তাছাড়া চাঁদের ছবিও সেই প্রিয় ঢেউখানি
নিয়ে আসে সুদূরের রোহিণীর সাথে।
অভিশাপ, আহা ঘোর অভিশাপ কী যে!
তবুও রোহিণী-ঘোর লেগে থাকে সে নদীর ঢেউয়ে।
এভাবেই সব স্মৃতি ছুঁয়ে তারপর,
তবু বলি, ঢেউ তুমি যাও প্রিয় নদীটিরই বুকে।
তখনই অমৃত-ঢেউ তাকায় না ফিরে,
চলে যায় স্বাভাবিক সময়ের স্রোতে;
যেই কালে জীবনের নির্জলা মুখে,
মরণের সুস্বাদ টের পাই আমি।
অহল্যার প্রতি
অহল্যা,
একদিন মশকীর বাঞ্চার মতো তুমি
বিবশ দেহে যে তাকে দিয়েছিলে ধরা,
সহজ-সাহসে; বল, সে কি অজানিতে ছিল?
ফলত ব্রহ্মাণ্ড-সংসার, তপস্যীর ছদ্মবস্ত্র, আর তার রঙ
চিড়ে এলো রতিমুখ তোমার মুখোশে—নির্দ্বিধায়।
অতঃপর, জেনেছ পৃথিবীর সেই চিরায়ত চক্র—
ঘুরে কাল থেকে কালান্তরে।
আর ঝেড়ে ফেলে পূর্বজের গোপন রক্তরস
পেলে পাথরের অভিশাপ তুমি,
হলো ভবিতব্যও স্থির—
তেমনই পুরুষ এক আসন্ন উদ্ধারে, কোনো নারী নয়।
আর তাই বুঝি দিঘল প্রতীক্ষা তোমার,
হংসীর কবোষ্ণ পাখার তল যে নীরব, নিষ্ঠুর
তেমনই যেন।
তেমনই অহল্যা তোমাকে বলি, শোনো—
নীলাভ পৃথিবী আর এ স্তব্ধ চরাচরে
তুমিই সমগ্র এই জাতি-বনে গেছো।