Homeসাহিত্যআমার যাপনই কবিতার বিষয় : জুয়েইরিযাহ মউ

আমার যাপনই কবিতার বিষয় : জুয়েইরিযাহ মউ


সাহিত্য বিভাগের আয়োজনে নির্ধারিত প্রশ্নে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কবি জুয়েইরিযাহ মউ। তিনি কবি ও কথাসাহিত্যিক। প্রকাশিত হয়েছে শিশুতোষ উপন্যাস: টিলাগড়ের রহস্য; গল্পগ্রন্থ: সোনাপুরের মিলা, অস্তিত্বে কুহেলিকা কিংবা টুকরো টুকরো প্রাণের কথকতা। কাব্যগ্রন্থ: তাসেরা বুকমার্ক।

বাংলা ট্রিবিউন: কোন বিষয় বা অনুভূতি আপনাকে কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করে?

জুয়েইরিযাহ মউ: আমার যাপনই কবিতার মূল বিষয়। সেই যাপনে রাজনীতি-আদর্শ-প্রেম-যৌনতা-স্মৃতিকাতরতা-শহর সমস্তই থাকে। কবিতা তো আমার কাছে নিংড়ে নেওয়া রস। এক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার চেয়ে অনুভূতির নিঃসরণ যথার্থ বেশি বলে মনে হয়।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কী ধরনের থিম বা বিষয় নিয়ে কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

জুয়েইরিযাহ মউ: এই ‘থিম’ বিষয়টা নির্দিষ্ট নয়। আমার ‘তাসেরা বুকমার্ক’-এর কবিতাগুলো এই শহরকেন্দ্রিক ছিল, আড্ডা—শহুরে জীবন, যে শহরে আমার বেড়ে ওঠা। এ বছর যে বই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে, ‘খুলিতে হাসপাতাল’, তাতে শৈশব-কৈশোরের জীবন, অনুভূতি, প্রেম এবং নারীজীবনের কিছু দিক এসেছে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তাৎক্ষণিক অনুপ্রেরণায় লেখেন, নাকি ধীরে ধীরে শব্দ সাজান?

জুয়েইরিযাহ মউ: সব কবিতা একরকমভাবে লেখা হয় না। তাৎক্ষণিক অনুভূতিতেও লেখা হয়েছে। কখনো কখনো কেবল একটা লাইন লিখে রেখেছি, পরে সেই ভাবনা থেকে কবিতা লিখেছি এমনও হয়।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার কবিতার ভাষা ও শৈলী কীভাবে বেছে নেন?

জুয়েইরিযাহ মউ: আমার মনে হয় ভাষা কিংবা লেখার ধরন কবিতার মুডের ওপর অনেকটা নির্ভর করে। এটা আমার ক্ষেত্রে এখন স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আসে।

বাংলা ট্রিবিউন: কোন কোন কবির প্রভাব আপনার লেখায় আছে?

জুয়েইরিযাহ মউ:  আমার মনে হয় না আমার কবিতায় কোনো নির্দিষ্ট কবির প্রভাব আছে। আর এই উত্তর পাঠক ভালো দিতে পারবেন।

বাংলা ট্রিবিউন: কথাসাহিত্যের চর্চা করেন? এ চর্চা আপনার কবিতায় কতটুকু প্রভাব রাখে?

জুয়েইরিযাহ মউ:  হ্যাঁ, আমি গদ্য লিখি। কথাসাহিত্যে কবিতার একটা প্রভাব পড়ে বলে মনে হয়। কিংবা অন্যভাবে বলতে গেলে আমি কবিতা লিখি বলেই আমার গদ্য লেখার ধরন এমন—এইরকম একটা কথা আমার মনে হয়।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার প্রথম কবিতার বই সম্পর্কে কিছু বলুন। প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি কেমন ছিল?

জুয়েইরিযাহ মউ:  ‘তাসেরা বুকমার্ক’ আমার প্রথম কবিতার বই, ২০১৬ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছিল। আমি বই প্রকাশের ক্ষেত্রে সবসময়ই প্রচ্ছদ, বাঁধাইসহ সবকিছুকেই গুরুত্ব দেই। বই প্রকাশের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিলাম। লেখার ক্ষেত্রে তো আমি একটা নির্দিষ্ট সিরিজে লিখতে থাকি, আমি যখন একটা কবিতার সিরিজ লেখা শুরু করি, তখনই জানি, এই বইটা এই সিরিজের হবে। পরে বই প্রকাশের আগে বাছাই করি কবিতাগুলো। অনুভূতি তাই একেক কবিতার ক্ষেত্রে কেমন তা বলা যায় না। সামগ্রিকভাবে বইয়ের কবিতা যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে লিখে যাই, তাই সেটা পৃথকভাবে বলা ডিফিকাল্ট।

বাংলা ট্রিবিউন: সমকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ঘটনা কি আপনার কবিতায় প্রভাব ফেলে? যদি ফেলে, তবে কীভাবে তা প্রকাশিত হয়?

জুয়েইরিযাহ মউ:  আমার একটা কবিতা আছে ‘খুলিতে হাসপাতাল’ সিরিজের—

‘ধর্মকে একটা ইমেজের মধ্যে শান্ত স্নিগ্ধ লাগে যার ভেতর ভোর হবে হবে এমন মৃদু আলোতে আম্মু ঝুঁকে ঝুঁকে কোরান পড়েন।
রক্তের ভেতর জেগে উঠে মনে হয়, আম্মু নিশ্চয়ই যিশু বা কৃষ্ণকেও সূরা পড়ে-টড়ে ফুঁ দিয়ে দিতেন ঘর থেকে বেরোনোর আগে।
তাহলে তোমরা তাদের কিংবা তারা তোমাদের মেরে ফেলো কী করে!! তাও!!’

এই কবিতা ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইসচার্চে মসজিদে হামলা নিয়ে লেখা।

গত ১৯ সেপ্টেম্বরে লেখা একটা কবিতা—

‘মানুষ মেরে ফেলতেসে মানুষরে
ভাত খাওয়ায়া, পানি না দিয়া
যত্র তত্র কলার ধইরা টাইনা
মাস্টাররে মারতেসে বাচ্চারা।

আমার গইলা যাওয়া চউখ
হাতে নিয়া বন্ধুরা করতেসে
হাহুতাশ!
তবু গেলাসে গেলাস ঠুইকা
তারা কইরতেসে ঝগড়া
মাজার থাকবো না ভাঙবো
এইটা নিয়া।

শুধু দীঘিনালা
খানিক পইড়া গেছে দূরে।
পাহাড়ি-বাঙালি
একটু কমন ব্যাপার বইলা।

(আমার গইলা যাওয়া চউখ)”

তো এরকমভাবেই ইমেজগুলো আসে কবিতায়।

বাংলা ট্রিবিউন: পাঠকদের মন্তব্য আপনার লেখায় কোনো পরিবর্তন আনে?

জুয়েইরিযাহ মউ:  না। পাঠক কীভাবে রিড করছে সেটা দেখার আগ্রহ জন্মায়, তবে লেখায় কোনো প্রভাব পড়ে না।

বাংলা ট্রিবিউন: ভবিষ্যতে কী ধরনের কবিতা লিখতে চান? নতুন কোনো ধারা বা শৈলীতে কাজ করার ইচ্ছা আছে কি?

জুয়েইরিযাহ মউ:   সেরকম নির্দিষ্ট করে কবিতা লেখার অনুভূতিকে মনস্তাত্বিকভাবে বেঁধে ফেলতে আমি আগ্রহী নই। এতে নিজের উপর নিজের এক অযাচিত শাসন জারি করা হয়ে যায়। তবে নারীর অন্তর্গত কিছু বোধ আছে, যা বলা এবং লেখার তাগিদ জন্মায় আমার মাঝে। বিশেষত, ফ্রয়েডীয় তত্ত্ব নারীজীবনে কী রূপে উপস্থিত তা কবিতায়, মুক্তগদ্যে, সিনেমায় এবং উপন্যাসে নিয়ে আসার ইচ্ছে আছে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত