Homeসাহিত্যআচ্ছন্নতার ভেতর কবিতা বাসা বাঁধে : মুহাম্মদ ফরিদ হাসান

আচ্ছন্নতার ভেতর কবিতা বাসা বাঁধে : মুহাম্মদ ফরিদ হাসান


সাহিত্য বিভাগের আয়োজনে নির্ধারিত প্রশ্নে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কবি মুহাম্মদ ফরিদ হাসান। জন্ম ১৯৯২ সালে, চাঁদপুরে। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: ‘মিথ্যুক আবশ্যক’ (কাব্যগ্রন্থ), ‘অন্য শহরের গল্প’ (গল্পগ্রন্থ), ‘সাহিত্যের অনুষঙ্গ ও অন্যান্য প্রবন্ধ’ (প্রবন্ধগ্রন্থ)। পেয়েছেন ‘অনুপ্রাণন পাণ্ডুলিপি পুরস্কার-২০২৪’।

বাংলা ট্রিবিউন: কোন বিষয় বা অনুভূতি আপনাকে কবিতা লিখতে অনুপ্রাণিত করে?

মুহাম্মদ ফরিদ হাসান: আমাদের অনুভূতির জগৎ বিস্তৃত। একেক রকম অনুভূতি থেকে একেক রকম কবিতার জন্ম হয়। তাই সুনির্দিষ্ট বিষয় বা অনুভূতি এখানে মুখ্য নয়। আমি কবিতা লেখাকে সহজাত প্রবণতার অংশ মনে করি। আমরা যেটাকে বলি, কবি তৈরি হয় না, কবির জন্ম হয়। হয়ত রক্তের ভেতর, বোধের ভেতর, আচ্ছন্নতার ভেতর কবিতা বাসা বাঁধে। তারপর তা শব্দে বাক্যে কবিতার শরীরে রূপ নেয়। এই সহজাত অনুভব আমাকে কবিতা লিখতে প্রতিনিয়ত তাড়িত ও প্রাণিত করে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কী ধরনের থিম বা বিষয় নিয়ে কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

মুহাম্মদ ফরিদ হাসান: সময়ের সঙ্গে চিন্তার পরিবর্তন হয়। প্রথম দিকে, কিশোরকালে দেশপ্রেম ও মা বিষয়ক কবিতা লিখেছি প্রচুর। পরে প্রেম, বেদনার, সন্তাপ, চেতনার নানা রূপ হয়েছে কবিতার বিষয়। গত কয়েক বছর ধরে কবিতায় মিথ, লোকজ অনুষঙ্গ, উত্তর-আধুনিকতাকে ধারণ এবং অনুল্লিখিত যাপনের গল্প বলার চেষ্টা করেছি। আমি সরলভাবে দার্শনিক উপলব্ধি-সম্পন্ন কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্নবোধ করি। এসব লিখতে কখনও কখনও কবিতায় বেহুলা-লখিন্দর-চাঁদ সওদাগরের মতো লোকগল্পের চরিত্রগুলো এসে হাজির হয়। আমি মূলত আনন্দ নিয়ে এ ধরনের চরিত্রগুলোকে বিনির্মাণ করি।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তাৎক্ষণিক অনুপ্রেরণায় লেখেন, নাকি ধীরে ধীরে শব্দ সাজান?

মুহাম্মদ ফরিদ হাসান: আমি আগে ঠিক করে নিই, আজকের ওই সময়টায় কবিতা লিখব। মনে মনে থিমও সাজাই। কিন্তু দেখা গেল, পৃষ্ঠাজুড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাছেঁড়া করছি। কিন্তু ওই থিমে কবিতা হচ্ছে না। বরং ভাবনার বাইরের কোনো বিষয় নিয়ে হঠাৎ-ই কবিতা লেখা হয়ে যায়। প্রথমে একটানা লিখে যাই। তারপর সেগুলো পরিমার্জন করি। ভাবের ও কালের ঐক্য ঠিক আছে কিনা দেখি। তাৎক্ষণিক অনুপ্রেরণায় আমার কবিতা লেখা হয়েছে অনেক। যেমন: কবিতা লেখার জন্য আমরা বিশ-ত্রিশজন কবি কবিতা-ক্যাম্প করেছি। সেখানে তাৎক্ষণিক কবিতা লিখেছি। একবার কবিতা ক্যাম্পে গিয়ে লিখেছি আমার প্রিয় দুটি কবিতা— ‘মানুষ’ ও ‘প্রজাপতি’। তাৎক্ষণিক চিন্তা থেকে লেখার আনন্দই আলাদা।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার কবিতার ভাষা ও শৈলী কীভাবে বেছে নেন?

মুহাম্মদ ফরিদ হাসান: আমি গ্রামবাংলার পরিচিত শব্দাবলি, মিথের চরিত্র, উত্তর-আধুনিক যাপনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শব্দসমূহকে কবিতায় ব্যবহার করি। উদ্দেশ্য, অধিকাংশ পাঠক যেন সহজে কবিতার বক্তব্যটুকু বুঝতে পারেন। কবিতার বোধের সাথে পাঠকের একাত্ম হতে যেন সময় না লাগে। তবে বাক্যগুলো মেদহীন, ব্যাপৃত অর্থবোধক রাখতে চাই। আমি মূলত গদ্য কবিতা লিখি। কবিতার শেষে পাঠকের জন্য হাহাকার, বেদনা কিংবা চমক রাখতে চাই। বর্তমানে উত্তর-আধুনিক শৈলী ও চেতনাকে ধারণের চেষ্টা করছি।

বাংলা ট্রিবিউন: কোন কোন কবির প্রভাব আপনার লেখায় আছে?

মুহাম্মদ ফরিদ হাসান: আমার কবিতায় প্রত্যক্ষ কোনো কবির প্রভাব নেই। তবে পরোক্ষভাবে অনেক কবির অনুপ্রেরণা রয়েছে। যেমন : জালালুদ্দিন রুমি, হাফিজ, ওমর খৈয়াম, মির্জা গালিব। আমি প্রচুর শায়েরি শুনি। সেই ভাবধারার কিছুটা প্রভাব আমার কবিতায় কখনও কখনও পড়ে।

বাংলা ট্রিবিউন: কথাসাহিত্যের চর্চা করেন? এ চর্চা আপনার কবিতায় কতটুকু প্রভাব রাখে?

মুহাম্মদ ফরিদ হাসান: এমন অনেকবার হয়েছে, কবিতা লিখতে বসেছি। কবিতা হয়নি। কবিতার থিম থেকে হয়েছে গল্প। অন্যদিকে গল্পের কোনো কোনো বিষয় সম্পর্কে মনে হয়েছে, ওই বিষয়ে কবিতা লিখলে বরং ভালো হয়। তখন কবিতাই লিখেছি। কথাসাহিত্যের কারণে প্রচুর পড়তে হয়। এতে আমার শব্দভান্ডার বৃদ্ধি পায়। চিন্তায় বৈচিত্র্য আসে। এ সবকিছুই কবিতায় প্রভাব ফেলে। কেবল তা-ই নয়, প্রবন্ধ যখন লিখি, সেখান থেকে আত্মস্থ করা শব্দ ও চিন্তার প্রভাব কবিতায় পড়ে। একারণে চিত্রকলা নিয়ে যখন প্রবন্ধ লিখি, সে সময়ের কবিতায় অনিবার্যভাবে ভ্যান গঘ, পিকাসো কিংবা রং সংক্রান্ত বিষয়গুলো চলে আসে। আমি এড়াতে পারি না।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার প্রথম কবিতার বই সম্পর্কে কিছু বলুন। প্রথম বই প্রকাশের অনুভূতি কেমন ছিল?

মুহাম্মদ ফরিদ হাসান: আমার একমাত্র কবিতার বই ‘মিথ্যুক আবশ্যক’ (২০২২)। প্রকাশক অনুপ্রাণন পাবলিকেশন। দীর্ঘ একযুগ ধরে লেখা কবিতাগুলো থেকে বাছাই করে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। আগে আমার অনেক বই বের হলেও কবিতার বই প্রকাশের মতো আনন্দ পাইনি।

কবিতাগুলো বিভিন্ন সময়ে লেখা বলে এর বিষয়ও ভিন্ন ভিন্ন। প্রেমের সঙ্গে জীবনের সংঘাত, যাপনের সঙ্গে ক্লান্তিকর পৃথিবী, অবহেলা, অনাদর, প্রতিবাদ ইত্যাদি নিয়ে এ গ্রন্থে বেশ কিছু কবিতা রয়েছে। আসলে অনেক আনন্দ নিয়ে কবিতাগুলো লিখেছি। অনেক সময় এসব কবিতায় ব্যক্তিজীবনের ছাপ পড়েছে। কিছু কবিতা কল্পনার প্রতিধ্বনি মাত্র।

বাংলা ট্রিবিউন: সমকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ঘটনা কি আপনার কবিতায় প্রভাব ফেলে? যদি ফেলে, তবে কীভাবে তা প্রকাশিত হয়?

মুহাম্মদ ফরিদ হাসান: সমকালীন বিষয় আমার কবিতায় খুব কম প্রভাব ফেলে। তাৎক্ষণিক ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আমি কিছু কিছু কবিতা লিখেছি। তবে সেগুলোর শিল্পমান মুখ্য ছিল না, বরং সময়কে ধারণ করাই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য।

বাংলা ট্রিবিউন: পাঠকদের মন্তব্য আপনার লেখায় কোনো পরিবর্তন আনে?

মুহাম্মদ ফরিদ হাসান: পাঠকদের মন্তব্য আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে শুনি। তাদের মন্তব্য যৌক্তিক মনে হলে লেখায় পরিবর্তন আনি।

বাংলা ট্রিবিউন: ভবিষ্যতে কী ধরনের কবিতা লিখতে চান? নতুন কোনো ধারা বা শৈলীতে কাজ করার ইচ্ছা আছে কি?

মুহাম্মদ ফরিদ হাসান: সুফিবাদ আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। ভবিষ্যতে কিছু সুফি ভাবধারার কবিতা লিখব চিন্তা করেছি। শায়েরি একটি বই করার ইচ্ছে আছে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত