Homeলিড নিউজ১৯৭১ সালের এই দিনে কি কি ঘটেছিল...

১৯৭১ সালের এই দিনে কি কি ঘটেছিল…

১৬ই ডিসেম্বর, বিজয় দিবস। দীর্ঘ সাড়ে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর অনেক ত্যাগের বিনিময়ে এলো বিজয়। কি হয়েছিল ১৯৭১ সালের এই দিনে? কি কি ঘটেছিল সেদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণকে ঘিরে?

ভোর ৫ টা থেকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যুদ্ধবিরতি শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ নিয়াজির নির্দেশে এই যুদ্ধ বিরতি হয়।

সকাল ৯ টায় ভারত বাংলাদেশের যৌথ কমান্ডের ডিভিশনাল কমান্ডার মেজর জেনারেল জি সি নাগরা সিং এর বার্তা নিয়ে তার এডিসি ক্যাপ্টেন হিতেশ ও ২ প্যারা ব্যাটালিয়নের কমান্ডার ক্যাপ্টেন নির্ভয় শর্মা সাদা পতাকা উড়িয়ে মিরপুর ব্রিজের উত্তরপার থেকে নিয়াজির হেডকোয়ার্টার এর দিকে রওনা দেন।

বার্তায় ইংরেজিতে লেখা ছিল,

প্রিয় আব্দুল্লাহ,
আমরা এখন এখানে আছি। আমরা আপনাকে ঘিরে রেখেছি। আপনার খেলা শেষ। আত্মসমর্পণ অথবা ধ্বংস-যেকোন একটি বেছে নিন। আমরা আপনাকে আশ্বস্ত করছি আপনি আত্মসমর্পণ করলে আমরা আপনার সঙ্গে জেনেভা চুক্তি অনুসারে ব্যবহার করবো। আমি আপনাকে ব্যক্তিগত ভাবেও আশ্বস্ত করছি আপনার জীবনের ভয় নেই।

ইতি
মেজর জেনারেল জি সি নাগরা

পরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজির চিঠি নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ৩৬ ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জামশেদ গাবতলী ব্রিজের পাশে জেনারেল জি সি নাগরার সাথে সাক্ষাৎ করেন।

দুপুর ৮ টার দিকে কোলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন ভারতীয় মিত্র বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার চীফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব।

এরপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার হেডকোয়ার্টারে চলে আত্মসমর্পণের দলিল তৈরির বৈঠক। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ নিয়াজি, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ও মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জামশেদ। যৌথ বাহিনীর পক্ষে ছিলেন মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব, মেজর জেনারেল জি সি নাগরা।

বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল:

আত্মসমর্পণের দলিলে সই করা হবে।

সই করবেন ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার ও যৌথ বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ নিয়াজি।

আত্মসমর্পণ করলেও তখনই অস্ত্র সমর্পণ করবেনা পাকিস্তানি বাহিনী।

১৬ই ডিসেম্বর কোলকাতায় অবস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চীফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার কে ডেকে ঢাকায় আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে থাকার নির্দেশ দেন

বিকেল সাড়ে ৩ টায় কোলকাতা থেকে পৌছান এ কে খন্দকার।

এদিন বিকেল ৪ টায়, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ নিয়াজি রেসকোর্স ময়দানে পৌছালে তাকে দুই পক্ষের সেনারা গার্ড অব অনার প্রদান করেন। নিয়াজি এবং অরোরা এগিয়ে যান রেসকোর্স ময়দানে রাখা একটি টেবিলের দিকে। টেবিলের একপাশে দুটি চেয়ার। অরোরা বসেন ডানদিকের চেয়ারে, বায়ে নিয়াজি। অরোরা স্বাক্ষর করার জন্যে দলিল এগিয়ে দেন নিয়াজির দিকে। নিয়াজির কাছে কলম ছিলনা।

ভারতীয় এক কর্মকর্তা কলম এগিয়ে দিলে পরাজয়ের দলিলে স্বাক্ষর করেন নিয়াজি।

পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম একটি নিয়মিত সেনাবাহিনী জনসাধারণের সামনে আত্মসমর্পণ করে। দলিলে স্বাক্ষর করে নিয়াজি আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকার করে নেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র কে। আত্মসমর্পণের দলিল অনুযায়ী তখন সময় বিকেল ৪টা ৩১ মিনিট।

আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন এ কে খন্দকার। তিনি এসময় স্বাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। স্বাক্ষী হিসেবে আরো ছিলেন ভারতের ৪র্থ কোরের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাগত সিং, পূর্বাঞ্চলীয় বিমান বাহিনীর কমান্ডার এয়ার মার্শাল হরিচাদ দেওয়ান এবং ভারতীয় পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব।

এই আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়েই বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ।

তবে এবারের ১৬ই ডিসেম্বর ২০২৪ টা সম্পূর্ন ভিন্ন বিগত ৫২ বছর থেকে। সেই পুরোনো শকুন খামচে ধরেছে আমাদের লাল সবুজের স্বাধীন পতাকা এবং আমাদের ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন মানচিত্রকে। এ যেন এক প্রেতপুরী। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির জনগনের বিপুল ভোটে নির্বাচিত সরকারকে মেটিকুলাসলি ডিজাইন করে সরিয়ে এই দেশের ক্ষমতা জবর দখল করা হয়েছে। চারিদিকে খুন,গুম,চাদাবাজি,লুটতরাজ,ধর্ষন,ছিনতাই এখন নিত্যদিনের স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। হায়রে আমার বাংলাদেশ। একি আমার সেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ। এ যেন এক জ্বলন্ত শ্মশান। নেই বঙ্গবন্ধু,এদেশ আর তোমার সেই সপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ নেই। এটা এখন এক ধ্বংসস্তূপে পরিনত করেছে সেই একাত্তরের পরাজিত শক্তি রাজাকার,আলবদর,আলশামস সহ তাদের রেখে যাওয়া বীজরা। তুমি কে,আমি কে,রাজাকার রাজাকার বলে যারা স্লোগান দেয় এই আমার স্বাধীন মাতৃভূমিতে জামাত,শিবির এবং মেধাবী নামক একদল কথিত সমন্বয়করা! আজ আমার সারা বাংলায় উড়ছে জঙ্গি ও মৌলবাদীদের নিশান,ঢাকা পড়ে গিয়েছে আমার এক সাগর রক্তের বিনিময়ে কেনা লাল সবুজের পতাকা এবং মানচিত্রটি!

সকলের প্রতি রইলো বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত