Homeজাতীয়'বাংলাদেশে গবেষকদের অবস্থা কাজের লোকের মত’

‘বাংলাদেশে গবেষকদের অবস্থা কাজের লোকের মত’

 বাংলাদেশে গবেষকদের সাথে কাজের লোকের মত ব্যবহার করা হয়। দরদাম করা হয় সর্বনিম্ন মজুরি দেওয়ার বিষয়ে। গবেষণার ক্ষেত্রে এত কম খরচ করলে ফলাফল ভাল আশা করা যায় না। এখানে রিসার্চারদের দাম দেওয়া হয় না। গবেষকদের অবস্থা এখানে কাজের লোকের মত।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর লালমাটিয়ায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল রিসার্চ (বিআইএসআর) ট্রাস্টের অফিসে আয়োজিত ‘মানসম্পন্ন প্রকাশকদের সাথে গবেষণা প্রকাশনা: সুযোগ, চ্যালেঞ্জ এবং অগ্রগতির পথ’ শীর্ষক বিশেষ সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম রেজাউল ইসলাম এই মন্তব্য করেন।

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নন-ওয়েস্টার্ন হিসেবে আমাদের দেশের গবেষকরা অনেক ক্ষেত্রেই প্রান্তিক (মার্জিনালাইজড) গবেষক হিসেবে গণ্য হন। এই গণ্য করাটা জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে, দেশের ওপর ভিত্তি করে মার্জিনালাইজড।

তিনি বাস্তবতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, দেশ থেকে অনেকেই বিদেশে যান গবেষণার কাজ করতে। যেমন: বুয়েট, ঢাবির অনেক গবেষকদের জাপান নিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের কম খরচে নেওয়া যায়। এরপর সারা দিন ল্যাবে থেকে তাঁরা কাজ করেন। তাঁদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় এভাবেই শেষ হয়ে যায়। লেখা বা প্রকাশনার সময় থাকে না। পশ্চিমা দেশের কাউকে আনুক দেখি!

কেন বাংলাদেশীদের পেপার প্রকাশিত হয় না?

প্রকাশনার ক্ষেত্রে কোন দেশের লেখককে কম গুরুত্ব দেওয়া (কান্ট্রি বায়াস), জিয়োগ্রাফিকাল বায়াসনেসও দেখা যায়। আবার অনেক রিভিউয়ারের বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানের ওপর কাজ না থাকার কারণে তাঁরা রিভিউ করার ক্ষেত্রে মানা করে দেন (ডিক্লাইন)। এক্ষেত্রেও অনেক পেপার পড়ে থাকে, জানান ড. রেজাউল।

আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, পশ্চিমা জার্নাগুলোর আসলেই বাংলাদেশী অথরের প্রতি কম গুরুত্ব দেওয়ার বিষয় আছে। তাছাড়া, দূর্ভাগ্যবশত অনেক মানসম্পন্ন (কোয়ালিটি) পেপারও ছাপা হয় না। এক্ষেত্রে দেখা যায় রিভিউয়ার বৈষম্য করেন। পেপার প্রকাশের বিষয়ে ধৈর্য্য ধরে লেগে থাকতে হবে। বিষয়টি বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের মত বলেও মন্তব্য করেন, ঢাবি’র প্রাতিষ্ঠানিক গুণগতমান নিশ্চিতকরণ সেল বা ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) – এর পরিচালক ড. রেজাউল ইসলাম।

পেশাগত জীবন উজ্জ্বল (ক্যারিয়ার শাইন) করবে এমন কোন কিউ-ওয়ান জার্নালে প্রকাশনা করতে গেলে, অন্তত ৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে থেকে টাকা দিয়ে পাবলিলেশনের প্রয়োজন মনে করি না। এগুলোর বাইরে অনেক ভাল ভাল জার্নাল আছে বলেও মনে করেন তিনি।

৩ প্লাটফর্মে রেজিস্টার্ড না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নয়

আইকিউএসি’র উদ্যোগে ঢাবির ৯৬ টি বিভাগে (১৪ টি ইনস্টিটিউট সহ) শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে যে কিভাবে একটি লেখাকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা যায়।

এছাড়াও গবেষণায় আগ্রহীদের প্রাথমিক অবস্থাতেই অর্কিড আইডি খোলা, গুগল স্কলার এবং সবচেয়ে বড় ইন্ডেক্সিং এর প্লাটফর্ম স্কোপাস-এ রেজিস্ট্রেশন করার পরামর্শ দেন ড. রেজাউল। ঢাবি আইকিউএসি’র পরিচালক আরও জানান, এই তিনটি প্লাটফর্মে রেজিস্টার্ড না থাকলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে না বলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলাপ চলছে। আমি জোর দিয়ে বলেছি এটি বাস্তবায়ন করার বিষয়ে।

গবেষণায় উদাসীনতা

গবেষণার বিষয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উদাসীনতার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এখনি যদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, স্কোপাস রেটিং না থাকলে পদোন্নতি হবে না, শিক্ষকরা ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে দিবে। ঢাবির উচিত প্রতি বিভাগে একজন সিনিয়র শিক্ষক বাইরে থেকে নিয়োগ দেওয়া। তাতে গবেষণার ক্ষেত্রে পরামর্শ পেতে পারে নতুনরা।

সেমিনারের মডারেটর বিআইএসআর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. এম. খুরশিদ আলম বলেন, লেখালেখির ক্ষেত্রে আমাদের অনেকেরই উদাসীনতা আছে। পত্রিকায় লেখার ক্ষেত্রেও অনেক বলার পরও লিখে উঠতে পারছেন না তারা। আর্টিকুলেশন শিখতে চাচ্ছে না। মনে করছে একেবারেই বিদেশী কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাবে সেখানে গিয়ে লিখবে। পৃথিবীবিখ্যাত জার্নালে লেখার ক্ষেত্রেও তো একটা অনুশীলন দরকার। তেত্রিশ পেয়ে পাশের মানসিকতার বিষটি সমাজের সকল স্তরের মানুষকে নৈতিকভাবে অধ:পতনের দিকে নিয়ে গেছে।

জার্নালের সাইটেশনের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। অনেক জার্নালে সহজে এক্সেস পাওয়া যায়না। এছাড়াও আমাদের লেখকদের সাইট করার ক্ষেত্রেও করতেও কার্পণ্য করেন অন্য অনেক লেখক। ড. আলম দাবি জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রকাশিত লেখার বইগুলো সংরক্ষণ করা হয়।

অ্যাবস্ট্রাক লেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) -এর রিসার্চ ফেলো ড. আজরীন করিমের মতে একটি গবেষণা পত্রের সারাংশ (অ্যাবস্ট্রাক্ট) খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারা এখনও পেপার পাবলিশ করেনি তাদের জন্যে শুরুটা গুরুত্বপূর্ণ।অ্যাবস্ট্রাক্ট লিখতে হবে খুবই আকর্ষনীয়ভাবে, যেটা শুরুতেই আকর্ষণ করবে। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করতে করতে এগুলো আয়ত্ত করতে হবে। রিসার্চ পেপার শেষ করে সেখান থেকে সংক্ষেপে অ্যাবস্ট্রাক্ট লেখার অভ্যাস করতে হবে।

গ্রীন ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন গবেষণার বিষয়ে নমুনা সংগ্রহ (স্যাম্পলিং) ও সেই বিষয়ে আর্টিকেল প্রকাশের সময় গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় নিয়ে আলোচন করেন।  

এছাড়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক এ.বি.এম শাহিনুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জের সহকারী অধ্যাপক সানজিদা পারভিন, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির প্রভাষক ড. খান শরীফুজ্জামান, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ইন্দার কুমার জিদুয়ার, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক জামিমা জাহান মীম, খুলনার সরকারি হাজী মোহাম্মদ মুহসিন কলেজের প্রভাষক মো. শাকিলুর রহমান সহ গবেষণায় আগ্রহী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও অন্যান্য গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত