Homeরাজনীতিদেশবাসী হুঁশিয়ার, মন্ত্রীসভায় রাজাকার

দেশবাসী হুঁশিয়ার, মন্ত্রীসভায় রাজাকার

আলি শরিয়তি

২০০১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার মন্ত্রীসভার সদস্যদের শপথ গ্রহণ হয়। কে কে মন্ত্রী হবেন আগে জানার উপায় ছিল না। শপথ অনুষ্ঠানে গিয়ে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা দেখলেন একাধিক রাজাকার মন্ত্রী হচ্ছে। তাই ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘দেশবাসী হুঁশিয়ার, মন্ত্রীসভায় রাজাকার’ স্লোগান দিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। এদেশে রাজাকার মন্ত্রী আগেও হয়েছে। শাহ আজিজ, আবদুল আলিম, মির্জা রুহুল আমিন চোখা মিয়া, মাওলানা মান্নান, আতাউদ্দিন খান, সৈয়দ মুহিবুল হাসান, আবদুল মতিন চৌধুরীসহ আরও অনেক নাম আছে। জিয়া-সাত্তার-এরশাদ-খালেদা সবাই রাজাকারদের পুনর্বাসন করেছেন। আবদুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতিও বানিয়েছে বিএনপি। তবে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলাম ২০০১ সালেই প্রথম মন্ত্রীসভায় যোগ দেন।

মুক্তিযুদ্ধকালে রাজাকার বাহিনী একটি স্বতন্ত্র বাহিনী হিসেবে পাকিস্তানের দোসর হিসেবে কাজ করেছে। এরকম আরও কয়েকটি বাহিনী হয়েছে, শান্তি কমিটি, আল বদর বাহিনী, আল শামস বাহিনী ইত্যাদি। কিন্তু বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতিশব্দ হিসেবে রাজাকার বহুল প্রচলিত ও প্রচারিত। এতে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের নাটকে ‘তুই রাজাকার’ শব্দযুগলের অনেক অবদান।

লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ ২০০০ সালের দিকে এক বই বের করেছিলেন। নাম ছিল ফেরেশতাদের শাসন। বিচারপতি হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি নিয়ে লেখা। বইটা এখনও আমার ঢাকার বাসায় আছে হয়ত। দেশে গেলে খুঁজতে হবে।

আলতাফ পারভেজ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনের নাম দিয়েছেন ফেরেশতাদের শাসন। এই নামকরণ সিরিয়াস নাকি ব্যঙ্গ করে দিয়েছেন, তা আর এখন মনে নেই। তবে বিশ্বাস করাই উচিত কয়েকজন ফেরেশতার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার অবশ্যই ফেরেশতা সরকার। ২০২৪ সালের সরকার অবশ্য আরও একধাপ এগিয়ে। কারণ এটা প্রচলিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার না, এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাও আবার শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নেতৃত্বে গঠিত। কাজেই এটার নাম দেয়া যায় ‘ফেরেশতাদের শান্তি-শাসন’।

সরকারের অধিকাংশ উপদেষ্টাদেরই দেশের মানুষ চেনে না। তাঁদের সম্পর্কে তেমন কিছু জানার প্রশ্নই আসে না। অনেকেই এনজিও ব্যক্তিত্ব, কেউ কেউ সাবেক সামরিক-সিভিল আমলা। পিনাকি ভট্টাচার্য নাম দিয়েছেন এঞ্জিওগ্রাম সরকার। যথার্থ বটে।

এরমধ্যে একটি ভয়ংকর তথ্য পেলাম। সরকারের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবীর খান, একাত্তরে বদর বাহিনীর সদস্য ছিলেন। আসল ঘটনা হলো, তিনি পাকিস্তান আমলে ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মী ছিলেন। চট্টগ্রামের মীর কাসেম আলীর অনুসারী। মীর কাসেম আলী বদর বাহিনীর অন্যতম প্রধান নেতা। মুক্তিযুদ্ধকালে বদর বাহিনী গঠিত হয়েছিল ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতৃত্বে। সারাদেশে বিস্তৃত এই বাহিনীতে কেবল ছাত্র সংঘের নেতাকর্মীরাই সদস্য ও নেতৃত্ব দিয়েছেন। ফাওজুল কবীরও তাই ছিলেন। সবাই নিশ্চয়ই দৃশ্যমান অপরাধ করার সুযোগ পাননি। ফাওজুল কবীর খান পেয়েছিলেন কিনা জানি না। চাকসু নেতা ও প্রয়াত সংসদ সদস্য চট্টগ্রামের নুরুল আলম চৌধুরী নাকি একাধিকবার বিভিন্ন বক্তৃতায় বলেছেন তাঁর সম্পর্কে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ১৯৭২-৭৬ সময়েও তিনি সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তখন জামায়াত ও ছাত্র সংঘ নিষিদ্ধ ছিল, তাই বিচ্ছিন্নভাবে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেবার কাজ করতেন। আইনে নিষিদ্ধ থাকলেও কার্যক্রম কি বন্ধ ছিল? এটা এক বিরাট প্রশ্ন। চবি শিক্ষক পিতার সন্তান হিসেবে ফাওজুল কবীর খান ক্যাম্পাসে কিছু সুবিধাও পেতেন। পঁচাত্তরের পরে ছাত্র সংঘ ইসলামী ছাত্র শিবির নামে যাত্রা শুরু করেছিল মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে। ফাওজুল কবীর খান এই প্রক্রিয়ার সাথেও জড়িত ছিলেন। আমাকে এই তথ্যগুলো দিয়েছেন চট্টগ্রামের একজন ভদ্রলোক। ক্রস চেক করে এটুকু নিশ্চিত হয়েছি ফাওজুল কবীর খান জামায়াতে ইসলামের লোক। প্রয়াত সচিব শাহ আবদুল হান্নানের ভাবশিষ্য। শাহ হান্নানের প্রতিষ্ঠিত জামায়াতি পাঠচক্র উইটনেস ও পাইওনিয়ারের তিনি একজন নিয়মিত বক্তা ছিলেন।

এখন এটা প্রমাণসাপেক্ষ বিষয়। তৎকালীন ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও জাসদের নেতারা ভালো বলতে পারবেন। নুরুল আলম চৌধুরী মারা গেছেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীও প্রয়াত। মাহমুদুর রহমান মান্না আছেন, তিনি ভালো বলতে পারবেন। যদি সত্য বলেন!

উপদেষ্টা পরিষদে আরেকজন আছেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তাঁর পিতা হবিগঞ্জের কুখ্যাত রাজাকার সৈয়দ মুহিবুল হাসান। আইয়ুব খানের আমলে মুসলিম লীগের এমপি, জিয়ার আমলে বিএনপির এমপি এবং এরশাদের আমলে জাতীয় পার্টির এমপি ও মন্ত্রী ছিলেন। এরশাদের পতনের সময় নাকে খত দিয়ে রাজনীতি ছেড়েছিলেন। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

২০২৪ এর ফেরেশতাদের শান্তি-শাসনের সরকারে অবশ্য এসব ঠিকুজির কোনো মূল্য নেই, বরং পদোন্নতির প্রবল সম্ভাবনা ও সুযোগ। কারণ তাঁদের স্লোগানই হলো, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’। যেখানে এসে এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান। কেবল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হয়ে গেছেন ব্রাত্য।

এর প্রমাণ পাওয়া গেলো মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুতে। সরকারের শোক বার্তা দূরের কথা, কবরের সাড়ে তিন হাত জায়গাও জোটেনি। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন তো অলীক কল্পনা। সময়ের পার্থক্য থাকায় রাত জেগে দেশের টিভি ও পত্রিকাগুলো দেখছিলাম আর ভাবছিলাম মতিয়া চৌধুরীর মতো ত্যাগী ও সৎ রাজনীতিবিদ দেশে কয়জন আছে? কিন্তু সেই মতিয়া চৌধুরীকেও সরকার অপমান করলো। অবমাননা করলো। তাঁর মতো ভালো মানুষের কোনো মূল্যই নেই বর্তমান সরকারের কাছে। এটাই প্রমাণিত হলো।

সিপিবি-কে দেখলাম সরকারের বিভিন্ন সংলাপে যোগ দিচ্ছে। তারা কী ২০০১ সালের সেই স্লোগান আবার দিবে?

দেশবাসী হুঁশিয়ার, উপদেষ্টা পরিষদে রাজাকার…

#আলিশরিয়তি

https://www.facebook.com/sabbir.khan.3990?locale=en_GB

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত