Homeলাইফস্টাইলসেমাইয়ের ভালোমন্দ

সেমাইয়ের ভালোমন্দ


বাংলাদেশে সেমাই একটি জনপ্রিয় খাবার, বিশেষ করে ঈদ বা উৎসবের সময়। এটি সাধারণত গম থেকে তৈরি ময়দা দিয়ে বানানো হয়। দুধে ভিজিয়ে, ভেজে বা মিষ্টি সিরাপে মিশিয়ে এটি রান্না করা যায়। সেমাই স্বাস্থ্যকর হবে কি না, তা নির্ভর করে এর উপাদান, প্রস্তুত প্রণালি ও পরিমাণের ওপর।

সেমাইয়ের স্বাস্থ্যকর দিক

শর্করার উৎস

সেমাই প্রধানত গম থেকে তৈরি। এটি শরীরের শক্তির একটি ভালো উৎস। এতে থাকা জটিল শর্করা দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি সরবরাহ করতে পারে। পূর্ণ গমের সেমাইয়ে আঁশ থাকে। এই আঁশ হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে কার্যকর।

প্রোটিন ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট

দুধ দিয়ে রান্না করলে সেমাইয়ে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি যোগ হয়। এই ভিটামিন হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তাতে বাদাম বা কিশমিশ যোগ করলে স্বাস্থ্যকর চর্বি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ পদার্থের পরিমাণ বাড়ে।

কম চর্বি

এটি প্রস্তুতের ওপর নির্ভর করে। যদি সেমাই দুধে সেদ্ধ করে খাওয়া হয় এবং তেল বা ঘি কম ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটি তুলনামূলকভাবে কম চর্বিযুক্ত খাবার হতে পারে।

সেমাইয়ের অস্বাস্থ্যকর দিক

উচ্চ শর্করা ও ক্যালরি

বাংলাদেশে সেমাই সাধারণত চিনি বা গুড়ের সিরায় তৈরি করা হয়। ফলে এটি মিষ্টিজাতীয় খাবার হিসেবে পরিচিত। এতে ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যায় বলে এটি ওজন ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত চিনি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে, যা দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিকর।

ট্রান্সফ্যাট ও অস্বাস্থ্যকর চর্বি

অনেকে প্রচুর তেল বা ঘি দিয়ে সেমাই ভেজে খান। আমাদের দেশে ব্যবহৃত সয়াবিন তেলসহ বিভিন্ন তেলে ট্রান্সফ্যাট থাকে, যা হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তথ্য বলছে, বোতলজাত সয়াবিন তেলে ৪ থেকে ৮ শতাংশ ট্রান্সফ্যাট থাকতে পারে।

কম পুষ্টিগুণ

বেশির ভাগ বাণিজ্যিক সেমাই পরিশোধিত ময়দা দিয়ে তৈরি। এতে আঁশ, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ কম থাকে। এটি দ্রুত হজম হয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে।

অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা

উৎসবের সময় সেমাই অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয় বলে হজমে সমস্যা, অ্যাসিডিটি বা পেট ফাঁপার কারণ হতে পারে।

সেমাইয়ে ভেজাল হিসেবে সাধারণত যেসব উপাদান পাওয়া যায়,

কৃত্রিম রং: খাদ্যে অনুমোদিত নয় এমন রাসায়নিক রং ব্যবহার।

নিম্নমানের ময়দা: পুষ্টি গুণহীন বা পচা ময়দা।

দুধ দিয়ে রান্না করলে সেমাইয়ে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি যোগ হয়। ছবি: স্বপ্না মন্ডলস্বপ্না মন্ডল

দুধ দিয়ে রান্না করলে সেমাইয়ে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি যোগ হয়। ছবি: স্বপ্না মন্ডলস্বপ্না মন্ডল

তেলে ট্রান্সফ্যাট: ভাজা সেমাইয়ে ব্যবহৃত তেলে উচ্চমাত্রার ট্রান্সফ্যাট।

অস্বাস্থ্যকর উৎপাদন: ধুলোবালি, পোকামাকড় বা নোংরা পরিবেশে তৈরি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে সেমাইয়ে ভেজালের উপস্থিতি দেখা গেছে। সেই সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর উৎপাদন প্রক্রিয়াও শনাক্ত করা হয়েছে। তবে ভেজালের সুনির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারণের জন্য ব্যাপক পরীক্ষার তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ভোক্তাদের পরিচিত ব্র্যান্ডের সেমাই কেনা ও উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত।

সেমাই স্বাস্থ্যকর হবে কি না, তা নির্ভর করে এর উপাদান, প্রস্তুত প্রণালি ও পরিমাণের ওপর। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেমাই স্বাস্থ্যকর হবে কি না, তা নির্ভর করে এর উপাদান, প্রস্তুত প্রণালি ও পরিমাণের ওপর। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেমাই স্বাস্থ্যকর রাখার উপায়

ঘরে বানানো সেমাই সবচেয়ে ভালো। সেটা করতে না পারলে যা করতে হবে,

পূর্ণ গমের সেমাই ব্যবহার: আঁশ ও পুষ্টিগুণ বাড়াতে পূর্ণ গমের সেমাই বেছে নিন।

কম চিনি বা বিকল্প: রান্নায় চিনির পরিবর্তে মধু বা খেজুরের রস ব্যবহার করা যেতে পারে।

স্বাস্থ্যকর রান্না: ভাজার পরিবর্তে দুধে সেদ্ধ করে খান এবং তেল-ঘি কম ব্যবহার করুন।

পরিমিত খাওয়া: অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

লেখক: খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত