প্যারেন্টিং মানে শুধু সন্তানকে শাসন করা নয়। বরং তাদের সঠিক পথ দেখানো। যদিও বাবা-মায়েরা চান তাঁদের সন্তানেরা ভালো মানুষ হয়ে উঠুক। কিন্তু অনেক সময় অযথা চাপ দেওয়ার ফলে তারা বিপরীত কাজ করে। সন্তানদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে, সিদ্ধান্ত নিতে দিলে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং তারা আরও আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠে।
এই লেখায় এমন কিছু সাধারণ বিষয় তুলে ধরা হলো, যেগুলো বাবা-মায়ের পক্ষে সন্তানদের ওপর কখনো চাপানো উচিত নয়। চাপানো বিষয়গুলো শুধু সন্তানদের জন্য ভালো নয় তো বটেই, সেগুলো তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করতে পারে।
সবার বন্ধু হতে বলা
বাবা-মা চান তাঁদের সন্তান যেন সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সদয় হয়। কিন্তু সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে বাধ্য করা ঠিক নয়। শিশুদেরও কিছু পছন্দ ও অনীহা থাকে। তারা জানে, কোন মানুষ তাদের ভালো লাগে এবং কিসে তাদের নিরাপদ অনুভূতি হয়। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে বলা হলে শিশুদের মনের অজান্তে নিজের সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়। এ অবস্থা পরবর্তীতে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। বরং তাদের শিখিয়ে দিন যে সবার প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিত। কিন্তু বন্ধুত্ব একটি নিরাপদ সম্পর্ক।
তারা না চাইলেও ‘দুঃখিত’ বলতে বলা
দুঃখিত বলা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ালে তার কোনো মূল্য থাকে না। অনেক সময় শিশুদের দুঃখিত বলতে বলা হয়। অথচ তারা এর অর্থ অনুভব করে না। এটা তখন শুধু একটা শব্দ হয়ে দাঁড়ায়। এর পরিবর্তে তারা যে কাজটি করেছে সেটি কেন ঠিক নয় এবং এর জন্য তাকে দুঃখিত বলার প্রয়োজন কেন, সেগুলোর শিক্ষা দিন। এতে তারা সত্যি ক্ষমা চাওয়ার অনুভূতি শিখবে।
খেতে না চাইলেও জোর করা
বাবা-মায়েরা খুবই চিন্তিত থাকেন তাঁদের সন্তানের পুষ্টি নিয়ে। তাই ক্ষুধা না লাগলে সন্তানদের জোর করে খাওয়ানোর অভ্যাস প্রায় সব বাবা–মায়ের থাকে। এটি তাঁদের স্বাভাবিক খাওয়ার অভ্যাস নষ্ট করে দেয়। এতে করে অনেক সময় খাবারের প্রতি অনীহা, অতিরিক্ত খাওয়া বা বিপরীতভাবে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে। তাই সন্তানকে সময়মতো পুষ্টিকর খাবার দিন। তারা যেন খাওয়ার রুটিন বুঝতে পারে, সেটি অনুভব করান। এতে তাদের মধ্যে খাবারের প্রতি সঠিক মনোভাব গড়ে উঠবে।
সব সময় তাদের জিনিসপত্র ভাগাভাগি করতে বলা
শিশুদের ভাগাভাগি শেখানো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কখনোই তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা উচিত নয় যে সবকিছুই ভাগ করতে হবে। তাদের নিজস্ব জিনিসপত্র নিয়ে কিছুটা অধিকারবোধ থাকে। এতে তাদের স্বাধীনতা বেড়ে যায়। তাই তাদের বুঝিয়ে ভাগাভাগি শেখাতে হবে। চাপ না দিয়ে তাদের মধ্যে সৎ মানসিকতা ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে হবে।
সৃষ্টিশীল কাজে বাধা দেওয়া
প্রত্যেক শিশুর নিজস্ব সৃষ্টিশীল ভাবনা থাকে। সেটি কাজের মাধ্যমে তারা প্রকাশ করতে চায়। অনেক সময় বাবা-মা নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে কোনো কিছু শেখাতে চান না। অথবা শেখালে সেটিও নির্দিষ্ট ভঙ্গিতে। এতে শিশুরা তাদের নিজস্ব ভাবনার প্রয়োগ করতে পারে না। ফলে ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে সৃজনশীল ভাবনাগুলো কমতে থাকে। শিশুদের যেমন পড়াশোনার জন্য নির্দিষ্ট নিয়মে বেঁধে দেওয়া হয়, তেমনি তাদের অন্য কাজেরও স্বাধীনতা দিন। যাতে তারা নিজস্ব পদ্ধতিতে চিন্তা করতে পারে। এটি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং নতুন কিছু শিখতে উৎসাহিত করবে।
সন্তানদের বড় করতে হলে তাদের ওপর চাপ না দিয়ে তাদের স্বাধীনতা, সৃষ্টিশীলতা এবং চিন্তাকে সম্মান করতে হবে। বাবা-মায়ের ভূমিকা হলো সন্তানদের পাশে দাঁড়িয়ে সঠিক পথ দেখানো। তাদের নিজের চিন্তা ও অনুভূতিগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া। এতে সন্তানেরা শুধু ভালো মানুষ হবে না বরং আত্মবিশ্বাসী ও সুখী জীবনযাপন করার পদ্ধতিও শিখে নিতে পারবে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া