Homeলাইফস্টাইলরোমাঞ্চপ্রেমীদের ডাকছে ধুপপানি ঝরনা

রোমাঞ্চপ্রেমীদের ডাকছে ধুপপানি ঝরনা


মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে একের পর এক বিমান। স্বচ্ছ আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভেদ করে সেগুলো যাচ্ছে অজানা গন্তব্যে। এটি আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের রুট।

আকাশের নিচে কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ নীল জলরাশি ভেদ করে চলছে নৌযান। তাতে যাত্রী বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ। চলার পথে ছোট-বড় পাহাড়। যত দূর চোখ যায় সবুজের সমারোহ।

সবুজের মধ্যেই এই মানুষদের বাড়িঘর। এগুলোর কোনোটি মাচাং ঘর, আবার কোনোটি আধা পাকা। ঘরের চারদিকে হরেক রকম ফলদ গাছের বাগান। চারণভূমিতে চড়ছে গরু-ছাগল। রাইংখ্যং নদীর তীরে কিষান-কিষানিরা ব্যস্ত শস্যবীজ বুনতে।

এসব দৃশ্য দেখতে দেখতে পৌঁছে যাওয়া যায় রাঙামাটির বিলাইছড়ির ধুপপানি ঝরনায়। এটি রাঙামাটির অন্যতম বড় ঝরনা। প্রায় ১০০ মিটার ওপর থেকে আছড়ে পড়ে ঝরনার স্বচ্ছ নীল জলরাশি। এর ওপর সূর্যের কিরণ পড়ায় দেখা মেলে রংধনুর। পাহাড়ের নিচে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে প্রাকৃতিক সুইমিংপুল। কোমরপানিতে একসঙ্গে গোসল করা যায় ১৫ থেকে ২৫ জন। বিলাইছড়ির বিখ্যাত ধুপপানি ঝরনা এবং এর প্রকৃতি দেখার উপযুক্ত সময় এখনই।

এখানে আসা পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসন ও জনগোষ্ঠী মিলে গড়ে তুলেছে বিভিন্ন সেবা ও সহায়তা। তেমনি একটি সেবা পর্যটক গাইড সমিতি। এ সমিতিতে আছেন ৪৫ জন।

সমিতির গাইড ছাড়া কোনো পর্যটক ধুপপানি ঝরনায় যান না। প্রত্যেক গাইডের সম্মানী নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০০ টাকা।

ধুপপানি ঝরনা দেখার পর আরও ঝরনা দেখতে চাইলে যেতে হবে নকাটা ঝরনায়। বিলাইছড়ি উপজেলা শহরের পূর্ব দিকে ঝরনাটি দেখতে নিতে হবে পর্যটক গাইডের সহায়তা।

ছবি: লেখক

ছবি: লেখক

ধুপপানি ঝরনায় যাওয়ার রুট

কাপ্তাই ও রাঙামাটি শহর থেকে বোটে যেতে হবে বিলাইছড়ি। সেখান থেকে বোটে রাইংখ্যং নদী হয়ে উলুছড়া। সেখানে নেমে খেয়া পার হয়ে হাঁটতে হবে এক থেকে দেড় ঘণ্টা।

বিলাইছড়ি থেকে ধুপপানি যাওয়ার পথে সেনাবাহিনীর একাধিক চেকপোস্টে নিজের পরিচয় দিতে হবে। সেই চেকপোস্টগুলোতে পরিচয় দেওয়া বাধ্যতামূলক। এনআইডিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা করে ছবি তুলে রাখবে সেনাবাহিনী। এসব যাচাই-বাছাই করতে সময় লেগে যাবে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।

থাকা-খাওয়া

পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার জন্য বিলাইছড়ি শহরে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু রিসোর্ট। এসব রিসোর্টে প্রতি রাত থাকতে সর্বনিম্ন ব্যয় হবে ১ হাজার ২০০ টাকা। পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে বিলাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন নির্মাণ করেছে নীলাদ্রি রিসোর্ট। এ রিসোর্টে রাত্রিকালীন প্রোগ্রাম ক্যাম্প ফায়ার ও বিনোদনের ব্যবস্থা আছে।

এ ছাড়া নিরিবিলি বোর্ডিং এবং জেলা পরিষদ রেস্টহাউস আছে পর্যটকদের থাকার জন্য।

যোগাযোগ: জেলা পরিষদ রেস্টহাউস: ০১৫৫২৮৬০৭৬২

নিরিবিলি বোর্ডিং: ০১৫৫৩১২৮৬৭৩

কীভাবে যাবেন

রাঙামাটির বাইরের পর্যটকদের ধুপপানি ঝরনা দেখতে যেতে হলে অবশ্যই দুই দিন সময় হাতে রাখতে হবে। এক রাত থাকতে হবে বিলাইছড়িতে। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে যেতে হবে রাঙামাটি শহর অথবা কাপ্তাই উপজেলায়। রাঙামাটি শহরের তবলছড়ি থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা ও বেলা ২টায় বোট ছাড়ে বিলাইছড়ির উদ্দেশে। ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা। কাপ্তাই জেটিঘাট থেকে ছাড়ে সকাল ৮টা, ১০টা, দুপুর ১২টা, বেলা ২টা ও বিকেল সাড়ে ৪টায়। ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা। বিলাইছড়ি পৌঁছাতে রাঙামাটি থেকে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা। আর কাপ্তাই থেকে প্রায় ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট।

বোট রিজার্ভ করে গেলে সময় কিছুটা কম লাগবে। স্পিডবোটে সময় লাগে ৪৫ মিনিট। এ ছাড়া পর্যটকবাহী বিশেষ বোটে সময় লাগে ১ ঘণ্টা। স্পিডবোট রিজার্ভ সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা এবং বিশেষ পর্যটকের বোটে ৩ হাজার টাকা।

বিলাইছড়ি সদর থেকে দেড় ঘণ্টার নৌপথ পাড়ি দিয়ে দেড় ঘণ্টা হাঁটার পর দেখা মিলবে ধুপপানি ঝরনার। পথ যত দীর্ঘ হোক, এখানে প্রকৃতি উপভোগ্য।

বিলাইছড়ি থেকে সকাল সকাল ঝরনার উদ্দেশে রওনা হওয়া ভালো। ঝরনা দেখা শেষে ফেরার পথে পাহাড়িদের রান্না করা খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। তবে অর্ডারের আগে অবশ্যই দাম জেনে নিতে হবে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত