শীতের দাপট কমে উষ্ণতায় ফিরেছে প্রকৃতি। গাছের ডালে ডালে উঁকি দিচ্ছে নতুন কোমল পাতা। শিমুল-পলাশ-অশোকে রঙিন হয়ে উঠেছে পথের বাঁক, জন-প্রান্তর। প্রকৃতির নবজাগরণে জাগে হৃদয়ের আবেগ।
প্রকৃতির রং-রূপ-রসে সিক্ত হয়ে হাতে উঠবে আজ লাল গোলাপ। ফুলের সঙ্গে বেঁধে মনটাকেও প্রিয়জনের হাতে তুলে দেওয়ার দিন আজ। আজ পয়লা ফাল্গুন, আজ ভালোবাসা দিবস।
শীতের বিদায় এবং নতুন ঋতুর সূচনার এই দিন বাঙালির সংস্কৃতিতে মিশে আছে বিশেষভাবে। গত কয়েক বছরে তা পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। বাংলা দিনপঞ্জি সংস্কারের ফলে আগে-পিছের দুটি বিশেষ দিন এখন মিশে গেছে একই দিনে।
পয়লা ফাল্গুনের বসনে প্রাধান্য পায় হলুদ ও বাসন্তী রং। আর ভ্যালেন্টাইনস ডেতে লালের আধিপত্য। একদিকে ফাল্গুনের বর্ণিল প্রকৃতি, অন্যদিকে ভালোবাসার উষ্ণতা।
ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুনের উৎসব ঘিরে জমে উঠেছে ফুলের বিকিকিনি। গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, লিলি, জিপসি, জারবেরা, অর্কিডসহ অসংখ্য ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। উৎসবে যেহেতু বেড়ে যায় ফুলের চাহিদা, তাই এই চাহিদা কাজে লাগিয়ে ফুলের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতারা।
রাজধানীর শাহবাগের ফুল বিক্রেতা আল আমিনও যেমন ভাবছেন, ‘জাতীয় বিভিন্ন দিবস আর ভ্যালেন্টাইনস ডে-বসন্তে আমাদের বিক্রি থাকে বেশি। কিন্তু এবার ১৬ ডিসেম্বর বিক্রি ছিল কম। আজকে সেটা পোষানো যায় কি না দেখি।’
পয়লা ফাল্গুনে সকাল সকাল খোঁপায় গুঁজে বের হবেন বলে অনেকে এক দিন আগেই কিনে রেখেছেন ফুল। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ফুল কিনতে যাওয়া তাসনুভা বহ্নি বলেন, ‘কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফুলের দাম বেড়ে যাবে। তাই একটু আগেই কিনে রাখছি। এখন যেটা ৫০ টাকায় কিনছি, রাতে সেটা ১০০ টাকা দিয়েও পাওয়া যাবে না।’
পয়লা ফাল্গুন উপলক্ষে আজ রাজধানীর চারুকলা ইনস্টিটিউট, রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরসহ দেশের নানা প্রান্তে বসন্তবরণ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। চারুকলা ইনস্টিটিউটে বসন্ত উৎসব শুরু হবে সকাল সাড়ে ৭টায়।
সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের বটতলায় শুরু হবে সমগীত বসন্ত উৎসব ১৪৩১। এবারের আয়োজনে সমগীতের শ্রদ্ধার্ঘ্য গ্রহণ করবেন বাংলাদেশের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ। আলোচক হিসেবে থাকবেন লেখক, সাংবাদিক নূরুল কবীর। গান করবেন কফিল আহমেদ, কৃষ্ণকলি, সায়ানসহ বিভিন্ন গানের দল।