Homeলাইফস্টাইলবেকিং সোডা এবং বেকিং পাউডারের মধ্যে পার্থক্য

বেকিং সোডা এবং বেকিং পাউডারের মধ্যে পার্থক্য


বেকিং সোডা এবং বেকিং পাউডার দুটোই রান্নায় ব্যবহৃত একটি অতি পরিচিত রাসায়নিক উপাদান। এই দুই উপকরণ কেকসহ আরও অনেক ধরনের খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু অনেকে মনে করেন, বেকিং পাউডার ও বেকিং সোডা একই উপাদান। অথচ এই দুই উপকরণের মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে।

বেকিং পাউডার এবং বেকিং সোডা উভয়ই খাবারের মধ্যে বুদ্‌বুদভর্তি টেক্সচার এবং স্বাদ তৈরি করতে ভূমিকা পালন করে। এরা সুপার মার্কেটে একই সঙ্গে এবং প্রায় একই ধরনের কাজে ব্যবহৃত হয়। এই দুই উপাদানে পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো—

প্যাকেটের গায়ে যা লেখা থাকে

প্যাকেটের দিকে নজর দিলে এই দুটি পণ্যের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়।

বেকিং সোডাতে একটিই উপাদান থাকে তা হলো সোডিয়াম হাইড্রোজেন কার্বনেট। এই উপাদান সোডিয়াম বাইকার্বনেট বা সাধারণত বাইকার্ব নামেও পরিচিত। বেকিং সোডা পরিষ্কারের কাজে, রান্নায় এবং গন্ধ দূর করার কাজে ব্যবহৃত হয়।

বেকিং পাউডার সাধারণত তিনটি উপাদানের মিশ্রণ—বেকিং সোডা, অ্যাসিড এবং ভুট্টা, চাল বা গম থেকে উদ্ভূত স্টার্চ। স্টার্চের কাজ হলো—বেকিং পাউডারকে মাপার কাজ সহজ করে দেওয়া এবং এটি অ্যাসিড এবং বেকিং সোডা একসঙ্গে মিলে প্রতিক্রিয়া করতে বাধা দেয়। স্টার্চ নিশ্চিত করে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত না রান্নার সময় আসে, ততক্ষণ অ্যাসিড এবং বেকিং সোডা একত্রিত হয়ে কাজ শুরু না করে। অর্থাৎ, শুধু রান্নার সময়েই সেগুলো একসঙ্গে কাজ করে খাবারের অন্যান্য উপাদান ফোলানোর কাজ শুরু করে।

এদিকে বেকিং পাউডার শুধু রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়।

দুই পণ্যের সাধারণ উপাদান হলো বেকিং সোডা। এই লবণটি প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে, অথবা কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত করা যেতে পারে।

অ্যাসিডই হলো মূল বিষয়

বেকিং সোডা একটি লবণ, যার মানে হলো—এটি অ্যাসিডের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করতে পারে। এ রকম বুদ্‌বুদীয় বিক্রিয়ায় কার্বন ডাই-অক্সাইড, পানি এবং নতুন লবণের মিশ্রণ সৃষ্টি হয়। বেকিং সোডা তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসও মুক্ত করতে পারে।

যখন বেকিং সোডা কেকের ব্যাটারে মেশানো হয় তখন অ্যাসিডের জন্য কিছু প্রাথমিক রাসায়নিক কার্যক্রম দেখা যাবে। এই প্রক্রিয়া বুদ্‌বুদ তৈরি করে এবং মিশ্রণটিকে ফুলিয়ে তোলে।

মিশ্রণের অন্যান্য উপাদানের মাধ্যমে অ্যাসিড তৈরি হয়, যেমন—দুধ, দই, মিষ্টি দই (বাটার মিল্ক)। যদি বেশি অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়, তবে অধিকাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস ব্যাটার পর্যায়েই বের হয়ে যাবে, ফলে ফুলানোর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই সব গ্যাস হারিয়ে যাবে।

যখন মিশ্রণটি গরম ওভেনে বা চুলায় রাখেন, তখন উচ্চ তাপমাত্রায় আরও কার্বন ডাই-অক্সাইডের বুদ্‌বুদ তৈরি হয়। এই তাপীয় কার্যক্রমে একটি নতুন লবণ—সোডিয়াম কার্বনেট তৈরি হয়। তবে এটি বেশি পরিমাণে তৈরি হলে খাবারের স্বাদ ভালো হয় না।

বেকিং পাউডার কেকের ব্যাটারে মেশালে একইভাবে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয় এবং বুদ্‌বুদ তৈরি হয়। মিশ্রণে থাকা বেকিং সোডা বেকিং পাউডারের অ্যাসিডের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করবে, পাশাপাশি ব্যাটারে থাকা যেকোনো অ্যাসিডীয় উপাদানের সঙ্গেও এটি প্রতিক্রিয়া করবে।

বেকিং পাউডারে থাকা অ্যাসিডের ধরন বেকিং পাউডারের আচরণে সূক্ষ্মভাবে পরিবর্তন আনতে পারে। যত বেশি অ্যাসিড ব্যাটারের মধ্যে দ্রবণীয় হবে, তত দ্রুত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের বুদ্‌বুদ তৈরি হবে।

যে রেসিপিগুলোতে বেকিং পাউডার এবং বেকিং সোডা উভয়ই ব্যবহার করা হয়, সেগুলোতে এসব উপাদান সাধারণত দুটি কাজ করে—

১. অন্য কোনো উপাদান থেকে অতিরিক্ত খাদ্য অ্যাসিড নিরপেক্ষ করা।

২. সময়মতো, তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে ফোলানোর প্রক্রিয়া শুরু করা।

তবে, অতিরিক্ত বেকিং সোডা ব্যবহারে খাবারের রং পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।

একটির বিপরীতে আরেকটির ব্যবহার

বেকিংয়ের কাজ গবেষণাগারের রাসায়নিক পরীক্ষার মতো। বেকিং পাউডার বা তার বিপরীতে বেকিং সোডার পরিবর্তে ব্যবহার না করাই ভালো। এগুলোর রাসায়নিক প্রভাব সূক্ষ্মভাবে ভিন্ন।

তবে একটির বিপরীতে আরেকটির ব্যবহার করতে চাইলে সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চলা ভালো। এই সাধারণ নিয়ম হলো—বেকিং সোডার পরিমাণের তিন গুণ বেকিং পাউডার ব্যবহার করতে হবে (যেমন—যদি রেসিপিতে এক চা চামচ বেকিং সোডা চাওয়া হয়, তাহলে তিন চা চামচ বেকিং পাউডার ব্যবহার করতে হবে)।

এই নিয়ম বেকিং পাউডারে ইতিমধ্যেই থাকা অ্যাসিডের মূল ভূমিকা বিবেচনা করে না। এটি রেসিপিতে চূড়ান্ত অ্যাসিড-বেকিং পাউডারের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

তবে লেবুর রস বা ভিনেগার যোগ করে এই পার্থক্যটি ঠিক করা যায়। তবে সঠিক পরিমাণে অ্যাসিড এবং লবণ মেলানো কঠিন হতে পারে। এই অ্যাসিডগুলো দ্রুত কার্বন ডাই-অক্সাইড মুক্ত করতে পারে, ফলে ফলে খাবারটি শক্ত হয় এবং কম ফুলতে পারে।

এ ছাড়া, বেকিং সোডার জায়গায় বেকিং পাউডার কখনোই কোনো কিছু পরিষ্কারের জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে অ্যাসিড (যেমন—ফসফেট বা টাইট্রিক অ্যাসিড) এবং স্টার্চ থাকে। এই অ্যাসিড এবং স্টার্চ পরিষ্কারের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। স্টার্চ আঠালো এবং দাগযুক্ত অবস্থা তৈরি করতে পারে, যা পরবর্তীকালে পরিষ্কার করতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত