ঈদ উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ খাবার। সকাল থেকে রাত ঘরে ঘরে বাহারি সব খাবারের আয়োজন থাকে। পরিবার, বন্ধু ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে খাবারের মাধ্যমে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া হয় এ সময়। ইসলামিক সংস্কৃতিতে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার জন্য খাবারকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। চলুন একবার দেখে নেওয়া যাক কোন দেশে ঈদ উৎসবে কোন বিশেষ ধরনের খাবারগুলো খাওয়া হয়।
ফিলিস্তিন
ফিলিস্তিনে ঈদের জনপ্রিয় খাবার মাকলুবা এবং মুসাখান। বিশেষ ধরনের চাল দিয়ে তৈরি খাবার মাকলুবা লেয়ার করে তৈরি করা হয়। এর মধ্যে থাকে মাংস, শাকসবজি এবং চাল। মুসাখান হলো মসলাযুক্ত রোস্ট। এতে ভেড়া বা মুরগির মাংস ব্যবহার করা হয়। ঈদ ছাড়াও এটি ফিলিস্তিনে খুব জনপ্রিয় খাবার। সাধারণত, মুসাখান নান রুটির সঙ্গে খাওয়া হয়।
ইরান
ইরান ঐতিহ্যবাহী পার্সিয়ান রাইসের জন্য বিখ্যাত। এটি চেলো কাবাব কুবিদেহ, তাহচিন, সালাদ শিরাজি এবং গরমেহ সাবজির মতো খাবারের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া দেশটিতে আব গোশত এবং বারবেরি রাইস ঈদ উপলক্ষে বিশেষভাবে খাওয়া হয়।
তুরস্ক
তুরস্কের ঈদের খাবারের অন্যতম আকর্ষণ কাবাব। এর মধ্যে ডোনার বা ডনার কাবাব, ইস্কেন্দার কাবাব এবং শিশ কাবাব অন্যতম। এর সঙ্গে রোস্ট করা মাংস এবং অন্যান্য তুর্কি খাবার খাওয়া হয়।
আলজিরিয়া
আলজিরিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর মধ্যে কুসকুস, টাজিন এবং চাখচুখা জনপ্রিয়। চাখচুখা শাকসবজি এবং মাংস দিয়ে তৈরি করা হয়।
দক্ষিণ এশিয়া
বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে ঈদের জনপ্রিয় খাবার বিরিয়ানি। এর সঙ্গে থাকে সেমাই, কোরমা এবং বিভিন্ন ধরনের মাংস রান্না।
উজবেকিস্তান
উজবেকিস্তানে ঈদে জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে আছে ডাম্পলিং, গ্রিলড মাংস এবং প্লোভ। চাল, মাংস এবং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি দিয়ে তৈরি করা হয় প্লোভ।
জর্ডান
ঈদে জর্ডানের জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী খাবার মানসাফ। এটি ভেড়ার মাংসের সঙ্গে দই এবং মসলার সস দিয়ে তৈরি করা হয়। সাধারণত অতিথিদের জন্য এই খাবারটি প্রায় সব ঘরে পরিবেশন করা হয়।
মিশর
মিসরের ঈদ উৎসবে জনপ্রিয় খাবার ফাত্তা বা ফেত্তা। এটি একধরনের ভেজা রুটি, ভেড়ার মাংস এবং মসলা বা টমেটো সস দিয়ে তৈরি হয়।
মালয়েশিয়া
মসলা, নারকেল এবং গরু বা মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি রেনডাং মালয়েশিয়ার ঈদে ঐতিহ্যবাহী খাবার। এটি সাধারণত রাইসের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।
ইয়েমেন
ইয়েমেনের ঐতিহ্যবাহী এবং সুস্বাদু খাবার মন্দি। এটি গর্ত করে মাটির নিচে রান্না করা হয়। মন্দি তৈরিতে মাংস, চাল এবং বিভিন্ন ধরনের মসলা ব্যবহার করা হয়। মাটির নিচে রান্না করার ফলে এই খাবারের স্বাদে এক ধরনের স্মোকি ফ্লেভার আসে, যা এই খাবারের বিশেষত্ব।
ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ায় ঈদে খাবারের তালিকায় তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার অপোর আয়াম বেশি দেখা যায়। ঈদ ছাড়াও বিভিন্ন উৎসবে এই খাবার বেশ জনপ্রিয়। অপোর আয়াম তৈরি হয় মাংস, নারকেল দুধ এবং বিভিন্ন মসলা দিয়ে। এই খাবার সাধারণত চালের তৈরি কেটুপাট এবং গরুর কলিজার সঙ্গে খাওয়া হয়।
সিরিয়া
সিরিয়ার ঈদের খাবারের মধ্যে অন্যতম মুতাবাল, ফাত্তুশ সালাদ এবং হারাক ইসবাও। মুতাবাল একটি বেগুনের রেসিপি। ভাজা বা পোড়া বেগুনের সঙ্গে লেবুর রস, তিলের পেস্ট, রসুন এবং মসলা দিয়ে তৈরি করা হয়। তাজা শাকসবজি দিয়ে তৈরি হয় ফাত্তুশ সালাদ। এ ছাড়া এতে নানা ধরনের মসলা এবং লেবুর রস থাকে। আর হারাক ইসবাও এক ধরনের স্যুপ। ম্যাকারনি পাস্তা দিয়ে এটি তৈরি করা হয়।
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানে ঈদের জনপ্রিয় খাবার কাবুলি পোলাও। এটি মাংস, চাল, কাজুবাদাম এবং মসলা দিয়ে তৈরি খাবার।
জিবুতি
ঈদে জিবুতির ঘরে ঘরে তৈরি হয় ঈদের বিশেষ খাবার স্কুডাখারিস। এটি ভেড়ার মাংস, চাল এবং বিভিন্ন ধরনের মসলা দিয়ে তৈরি খাবার।
লেবানন
লেবাননে ঈদে জনপ্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে কিব্বেহ বিল সানিয়েহ, স্টাফড গ্রেপ লিভস ও হুমাস। মেষ বা গরুর মাংস দিয়ে তৈরি হয় কিব্বেহ বিল সানিয়েহ। আঙুরের পাতায় ভরে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, চাল, মাংস এবং মসলা দিয়ে তৈরি করা হয় স্টাফড গ্রেপ লিভস। এ ছাড়া হুমাস তৈরি হয় মটরশুঁটি, তিলের পেস্ট, রসুন, লেবুর রস এবং তেল দিয়ে।
সুদান
সুদানে ঈদের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে আছে আসিদা পুডিং, মসুর ডাল দিয়ে তৈরি লেন্টিল স্টু এবং গরুর মাংস দিয়ে তৈরি মসলাযুক্ত স্টু।
মরক্কো
মরক্কোর টাজিন ঈদের বিশেষ খাবারের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এটি সাধারণত মাংস, শাকসবজি এবং মসলা দিয়ে তৈরি হয়। টাজিন মরক্কোর রুটি খোবজের সঙ্গে খাওয়া হয়।
ওমান
রোস্ট করা মাংস শুয়া ওমানের অন্যতম খাবার। ঈদের সময় এটি সাধারণত পুরো পরিবার, প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনের জন্য তৈরি করা হয়।
মালদ্বীপ
মালদ্বীপের কেক কুলহি বোকিবা ঈদে বেশ জনপ্রিয় খাবার। এটি মাছ দিয়ে তৈরি একটি নাশতা।
লিবিয়া
ঈদে লিবিয়ার একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার তবেইখাত। এটি মাংস, কুমড়া, মটরশুঁটি এবং মসলা দিয়ে তৈরি করা হয়। কুসকুস নামে এক ধরনের পাস্তার সঙ্গে খাওয়া হয় তবেইখাত।