Homeলাইফস্টাইলবাঘের দেশে রিসোর্টে বাস

বাঘের দেশে রিসোর্টে বাস


এখানে শ্বাসমূলের কাঁটায় বাঁধা জলসুরের গান, জোয়ার-ভাটা আর ঢেউয়ের খেলা। মধ্যরাতে নিস্তব্ধতা ভেদ করে দূরে শোনা যায় হরিণের ডাক। আর কখনো কখনো বাঘের গর্জনে রক্ত হিম হয়ে যায়! এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে গেছেন, এই গল্প সুন্দরবনের।

সুন্দরবন মানে শুধু বন নয়, জীববৈচিত্র্যে এ এক গোলকধাঁধাই বটে। এখানে কোথাও কাঁকড়া ছোটাছুটি করছে, কোথাও মাছরাঙা ঝুপ করে মাছ নিয়ে যাচ্ছে জলে ডুবে, নদীতে ভেসে চলেছে বাওয়ালিদের নৌকা। নৌকার নিচেই হয়তো ঘাপটি মেরে বসে আছে কুমির—কে জানে! বিভিন্ন প্রজাতির মাছ খেলা করছে নদীতে। মাথার ওপর হরেক প্রজাতির পাখি। আর সামনে-পেছনে-ডানে-বাঁয়ে উদ্ভিজ্জরাজি।

সুন্দরবন শুধু বন নয়, আশ্রয়ও বটে। এখানে প্রতিটি দিন, প্রতিটি সকাল নতুন বনজীবীদের কাছে। এই যে বনজীবী বলছি; তার মানে, এই বনকে কেন্দ্র করে আছে একদল মানুষের বসবাস, যাদের জীবিকার উৎস এটি। তাদের মধ্যে আছে মৌয়ালেরা। দল বেঁধে বনে যায়, মধু সংগ্রহ করে। তারপর ফিরে আসে। আর আছি আমরা, যারা বন ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই।

সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত সুন্দরবন ভ্রমণের আদর্শ সময়। তবে এখন মোটামুটি সারা বছর পর্যটন হচ্ছে বনে। সে জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে গেছে এই জনপদেও। খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা ইউনিয়নের পশ্চিম ড্যাংমারি গ্রামে তৈরি হয়েছে সুন্দরবন ভ্রমণের নতুন দিগন্ত। সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে এ গ্রামে গড়ে উঠেছে ইকো রিসোর্ট।

প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষের বসবাস পশ্চিম ড্যাংমারি গ্রামে। একসময় তাদের একমাত্র আয়ের মাধ্যম ছিল বনের গাছ ও কাঠ বিক্রি, খালে মাছ ধরা কিংবা পশুপাখি শিকার। তবে সুন্দরবন রক্ষা এবং স্থানীয়দের ইকো ও কমিউনিটি ট্যুরিজমে উৎসাহিত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১৬ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। সেই প্রকল্পের আওতায় গ্রামটিতে প্রথম গোলক কানন নামের একটি কাঠের রিসোর্ট তৈরি করা হয়। এখন দেশীয় অনেক বিনিয়োগকারী সেখানে গড়ে তুলেছেন অসংখ্য রিসোর্ট।

রিসোর্ট আছে যত

ড্যাংমারি গ্রামে বয়ে যাওয়া চাংমারি খালের পাশে বাঁশ-কাঠের এসব রিসোর্টের নাম শুনলেই যেতে ইচ্ছা করবে যে কারও। এখানে আছে গোল কানন, ইরাবতী, বনবিবি, বনলতা, বনবাস, সুন্দরী, পিয়ালি, জঙ্গলবাড়ি, ছায়ালতা, মনমালি, ফরেস্ট রিট্রেট ও ম্যানগ্রোভ হ্যাভেন নামক ১২টি রিসোর্ট। এ ছাড়া ম্যানগ্রোভ ভ্যালি নামক একটি রিসোর্টের নির্মাণকাজ চলছে। এসব রিসোর্ট গড়ে উঠেছে একই রুটে ১১ কিলোমিটারের মধ্যে, চাংমারি খালের তীরে।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

যেভাবে বুকিং করা যায়

রিসোর্টগুলোর নিজস্ব ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট রয়েছে। সেগুলোর মাধ্যমে অগ্রিম বুকিং করতে হবে। রিসোর্টগুলো বিভিন্ন প্যাকেজ দিয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রুপ ট্যুরে ১ দিনের জন্য জনপ্রতি ৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৫০০ টাকার প্যাকেজ। এখানে বিভিন্ন আকৃতি ও সুবিধার কটেজ এবং ডুপ্লেক্স কটেজ রয়েছে। এগুলোর ভাড়া সর্বনিম্ন ২ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এগুলোয় আছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-সংযোগ। আছে নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী। এ ছাড়া কোস্ট গার্ড, ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং বন বিভাগের কর্মকর্তারা সব সময় টহল দেন এসব এলাকায়।

প্যাকেজে যা রয়েছে

এক দিনের প্যাকেজে সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার সংযুক্ত। আগাম বুকিং দিলে নির্দিষ্ট রিসোর্ট মোংলা ঘাট থেকে ট্যুরিস্ট বোটে নিয়ে যাবে। এতে এক ঘণ্টার নদীভ্রমণ হয়ে যাবে।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

এ ভ্রমণে দেখা যাবে মোংলা বন্দর, মাছেদের নাচানাচি, ডলফিনের লাফালাফি। এ ছাড়া কুমিরের বিচরণ তো রয়েছেই। আর থাকবে চোখজুড়ানো বন। দুপুরে লাঞ্চ। বিকেলে পর্যটকদের বইঠা নৌকায় সুন্দরবনের ভেতরে এক ঘণ্টা ক্রুজিং করানো হয়। এ ভ্রমণ জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ধারিত হয়। রাতে রিসোর্টে রাত্রিযাপন। দ্বিতীয় দিন সকালে নাশতা শেষে বেলা ১১টায় চেক আউটের পর বোটে করে নিয়ে যাবে করমজল। সেখানে ঢোকার জন্য জনপ্রতি ৪৬ টাকার টিকিট কাটতে হবে। করমজলে দেখা মিলবে বানর, হরিণ, কুমির ইত্যাদি। ওয়াছি টাওয়ারে উঠে উপভোগ করা যাবে সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য। সেখানে এক ঘণ্টা থেকে আবার ফিরে আসতে হবে মোংলা ফেরিঘাটে।

কীভাবে যেতে পারেন

ঢাকা থেকে সরাসরি মোংলার উদ্দেশে যাওয়া যায় বাসে করে। সেখানে নেমে যাঁরা প্যাকেজে আসবেন, তাঁরা রিসোর্টের নিজস্ব বোটে চলে যাবেন। যাঁরা রুম বুকিং দিয়ে আসবেন, তাঁরা বোট ভাড়া করে রিসোর্টে যেতে পারবেন। এ ছাড়া সেপ্টেম্বর থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত নিজস্ব গাড়ি নিয়েও রিসোর্টে যাওয়া যাবে। সড়কপথে যেতে চাইলে মোংলা যাওয়ার ৩ কিলোমিটার আগে লাউডোব ফেরিঘাটে নেমে যেতে হবে। সেখান থেকে ফেরি পার হওয়ার পর সরাসরি রিসোর্টগুলোয় যাওয়া যাবে। তবে যাওয়ার জন্য ভ্যান ও ইজিবাইক রয়েছে। এ ছাড়া বর্ষাকালে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম নৌকা।

খাবারদাবার

প্যাকেজে গেলে রিসোর্টগুলোর মেনু অনুযায়ী তিন বেলা খাবার পাবেন। চাইলে অর্ডার করেও খাওয়া যাবে। এগুলো অবশ্যই বুকিংয়ের সময় রিসোর্টে জানাতে হবে। এখানে দক্ষিণাঞ্চলের বৈচিত্র্যময় বিভিন্ন মাছ পাওয়া যায়। ঘুরতে এলে সেগুলো খাওয়ার চেষ্টা করুন। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের যেকোনো খাবার খেতে পারেন।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত