Homeলাইফস্টাইলবাংলাদেশি শিশুদের সাঁতার শেখালেন অস্ট্রেলিয়ার সর্বাধিক অলিম্পিকজয়ী নারী সাঁতারু

বাংলাদেশি শিশুদের সাঁতার শেখালেন অস্ট্রেলিয়ার সর্বাধিক অলিম্পিকজয়ী নারী সাঁতারু


অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অলিম্পিকে সবচেয়ে বেশি পদক জিতেছেন এমা মেকিওন। তিনি বিশ্বের অন্যতম দ্রুততম সাঁতারু। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাঁর বাংলাদেশ সফরের উদ্দেশ্য ছিল শিশুদের সাঁতার শেখানো এবং শিখতে উদ্বুদ্ধ করা।

এমা মেকিওন সম্প্রতি বাংলাদেশের গাজীপুর সফর করেন। এই শহরটির জনসংখ্যা এমার নিজের শহরের জনসংখ্যার ১০ গুণ। এমা গাজীপুরে এক বাংলাদেশি মায়ের সঙ্গে দেখা করেন, যার ছেলে ডুবে মারা গিয়েছিল। সাক্ষাতের পর এমা অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা এবিসিকে বলেন, ‘সে দুই বছর বয়সী ছিল। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না, বা কল্পনার চেষ্টাও করতে পারবেন না বিষয়টা তার মায়ের জন্য কতটা হৃদয়বিদারক ছিল।’

ক্রীড়া জীবন থেকে অবসর নেওয়ার দুই মাস পর মেকিওন ইউনিসেফের দূত হিসেবে বাংলাদেশে আসেন পাঁচ দিনের সফরে। মূলত বাংলাদেশের শিশুদের সাঁতার শিখতে সাহায্য করা ও উদ্বুদ্ধ করতেই এই সফরের আয়োজন করা হয়। কারণ, বাংলাদেশে প্রতিদিন পানিতে ডুবে মারা যায় প্রায় ৪০টি শিশু।

এমা মেকিওনের জন্মস্থান অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের দক্ষিণ উপকূলের শহর ওলংগং। এমা তাঁর গাজীপুর সফরকে বলেছেন ‘জীবন বদলে দেওয়া’ এক অভিজ্ঞতা।

মেকিওন গাজীপুরের একটি গ্রামে শিশুদের সাঁতার শেখাতে বেশ কয়েক ঘণ্টা ব্যয় করেন। তিনি স্থানীয় শিশুদের বাঁশের কাঠামো ব্যবহার করে কীভাবে সাঁতার শেখা যায়, সে বিষয়ে হাতে কলমে অবহিত করেন। এমা বলেন, ‘নিজের সাঁতারের ক্যারিয়ার এবং আমার সব প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার মধ্যে আমি কখনোই এমন কিছু করতে পারিনি…কিন্তু আমি এমন কিছু করতে প্রচণ্ড আগ্রহী ছিলাম।’

বাংলাদেশে সাঁতার শেখার ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয় সে বিষয়ে আলোকপাত করে এমা মেকিওন বলেন, ‘বাচ্চারা পুকুরে সাঁতার শিখছে, কিন্তু তারা যেভাবে শিখছে তার সঙ্গে আমরা যেভাবে শিখেছি তার কোনো মিলই নেই। এরা সাঁতারের বিভিন্ন স্ট্রোক শিখছে না, কেবল নিজেদের রক্ষা করা এবং পানিতে পড়লে কীভাবে তীরে ফিরে আসা যায় তার উপায় শিখছে।’

এমা মেকিওন শিশুদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকজনকে সাঁতারের জন্য বিশেষ চশমা দিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের জলাশয়ের পানি ঘোলা হওয়ার কারণে তা খুব একটা কাজে আসেনি। এমা বলেন, ‘এটি পরিষ্কার, তাজা পানি নয়। আমি ভেবেছিলাম (চশমাগুলো) হয়তো তাদের পানির নিচে মাথা ডুবিয়ে সাঁতরানোর জন্য কিছুটা সহজ করবে এবং বিষয়টি আরও উপভোগ্য করে তুলবে। কিন্তু তা হয়নি। তবে এটি তাদের অনেক আনন্দ দিয়েছে।’

মেকিওন খুব বেশি সময় নষ্ট করেননি, কিছু সময় পর তিনি নিজেও পানিতে নেমে পড়েন এবং একদল কিশোরীকে হাতে কলমে সাঁতারের কৌশল শেখান। তিনি বলেন, ‘সাংস্কৃতিকভাবেই নারীদের জন্য সাঁতরানো খুব একটা সহজ কাজ নয়।’

সম্প্রতি শিশু-কিশোরীদের সাঁতার শেখাতে বাংলাদেশে এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সবচেয়ে বেশি অলিম্পিক পদকজয়ী নারী সাঁতারু এমা মেকিওন। ছবি: ইউনিসেফ

সম্প্রতি শিশু-কিশোরীদের সাঁতার শেখাতে বাংলাদেশে এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সবচেয়ে বেশি অলিম্পিক পদকজয়ী নারী সাঁতারু এমা মেকিওন। ছবি: ইউনিসেফ

বাংলাদেশ সমৃদ্ধ সংগীত ও নৃত্য ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত হলেও এই দেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এবং দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোর একটি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ইউনিসেফের মতো অনেক মানবিক সহায়তা সংস্থাই ২০ শতকের শুরু থেকেই বাংলাদেশে বিভিন্ন লক্ষ্যভিত্তিক প্রকল্প পরিচালনা করে আসছে।

এমা মেকিওন বলেন, ‘এখানে বাল্য বিয়ের হার অনেক বেশি…এবং এমনকি স্কুলে যাওয়ার হারও খুব একটা ইতিবাচক নয়। আর তাই এখানকার কিশোরীরা নিজেদের সক্ষমতা দেখাতে পারেন না। এই প্রোগ্রামটি তাদের সক্ষমতা দেখানোর একটা সুযোগ ছিল।’

সম্প্রতি শিশু-কিশোরীদের সাঁতার শেখাতে বাংলাদেশে এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সবচেয়ে বেশি অলিম্পিক পদকজয়ী নারী সাঁতারু এমা মেকিওন। ছবি: ইউনিসেফ

সম্প্রতি শিশু-কিশোরীদের সাঁতার শেখাতে বাংলাদেশে এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সবচেয়ে বেশি অলিম্পিক পদকজয়ী নারী সাঁতারু এমা মেকিওন। ছবি: ইউনিসেফ

বিভিন্ন সামাজিক দুর্বলতার কারণে মেকিওন নিজেও ব্যক্তিগতভাবে কিছু প্রভাবিত হয়েছেন। তিনি তাঁর স্বপ্ন পূরণে ওলংগং ছেড়ে ব্রিসবেনে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে অস্ট্রেলিয়ার সমাজে নারী-পুরুষ বৈষম্যহীনতার বিষয়টি আলোকপাত করে তিনি বলেন, ‘আমিও সেই সুযোগগুলো পেয়েছিলাম, যা আমার ভাই পেয়েছিল।’

এমা মেকিওন কিছুদিন আগেই অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে গেছেন। তবে তিনি এখনো বাংলাদেশের জন্য কাজ করে চলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টের বাড়িতে ফিরে মেকিওন বাংলাদেশে ইউনিসেফের কাজ সম্প্রসারিত আড়াই লাখ ডলার তহবিল সংগ্রহে একটি ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ জন্য আমাকে আগামী কয়েক দিন কাজের মধ্যে থাকতে হবে।’

তথ্যসূত্র: এবিসি





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত