Homeলাইফস্টাইলফ্রান্স ও বেলজিয়ামে বিনা মূল্যে মুরগি বিতরণ

ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে বিনা মূল্যে মুরগি বিতরণ


ছবির মতো শহর ফ্রান্সের কোলমার। এই শহরে এখন বিনা মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে মুরগি। শুধু তাই নয়। আজ থেকে প্রায় এগারো বছর এ শহরের এক মেয়র ‘একটি পরিবার, একটি মুরগি’ স্লোগান দিয়ে নির্বাচনে জিতেছিলেন। শুধু কোলমার নয়। বেলজিয়ামের কয়েকটি শহরেও অনেক বছর ধরে বাসিন্দাদের বিনা মূল্যে মুরগি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কী ছিল এর পেছনের কারণ?

শুরু করি নির্বাচন দিয়ে। ফ্রান্সের কোলমার শহরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গিলবার্ট মেয়ার ২০১৪ সালে ‘একটি পরিবার, একটি মুরগি’ স্লোগান দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি প্রতিটি পরিবারকে একটির জায়গায় দুইটি করে মুরগি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ভাবার কোনো কারণ নেই যে গিলবার্ট মেয়ার অযথাই এ ঘোষণা দিয়েছিলেন।

গিলবার্ট শহরের পরিবারকে মুরগি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মূলত খাবারের বর্জ্য কমানো এবং ডিমের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য। সে সময় ২০০টিরও বেশি পরিবার এই প্রকল্পে অংশ নেয়। সে জন্য মেয়রকে বিতরণ করতে হয় ৫ হাজার ২৮২টি মুরগি। আর এ বছর যারা এ সুবিধা নিতে চায় তাদের জুন মাসের মধ্যে আবেদন করতে হবে।

বিতরণ করা এসব মুরগিকে খেতে দেওয়া হতো খাবারের বর্জ্য। ফলে বর্জ্য কমানো যাচ্ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। পাশাপাশি ডিম উৎপাদন বাড়ছিল। এ ছাড়া মুরগি পালতে পালতে শহরের বাসিন্দারা এ বিষয়ে দক্ষ হয়ে ওঠে।

খাবারের বর্জ্য ও পরিবেশ

খাবারের বর্জ্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এটি দ্রুত পচে গিয়ে মিথেন গ্যাস তৈরি করে, যা উষ্ণায়নের অন্যতম কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ খাদ্য নষ্ট হয়। এর পরিমাণ ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন পর্যন্ত হতে পারে। খাবারের বর্জ্য থেকে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন হার বছরে ৮ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত হয়। এই পরিমাণ উড়োজাহাজ থেকে নির্গমন হওয়া গ্রিনহাউস গ্যাসের চেয়েও বেশি। ফলে মুরগি পালনের এই উদ্যোগ পরিবেশ রক্ষার একটি উপায় হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরিক স্ট্রাউমান বলেছেন, ‘একটি মুরগির গড় আয়ু চার বছর। সেগুলো প্রতিদিন ১৫০ গ্রাম জৈব-বর্জ্য খায়। আমরা হিসাব করে দেখেছি যে ২০১৫ সাল থেকে ২৭৩ দশমিক ৩৫ টন জৈব-বর্জ্য কমাতে পেরেছি।’

মুরগিসহ একটি পরিবার। ছবি: কোলমার ডট এফ আর

মুরগিসহ একটি পরিবার। ছবি: কোলমার ডট এফ আর

অন্যান্য শহরগুলোর এমন উদ্যোগ

ফ্রান্সের কোলমার একমাত্র শহর নয় যেখানে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশটির পিন্সে শহরে ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো বিনা মূল্যে মুরগি বিতরণ করা হয়েছিল। তেমন সিরিয়াস পরিকল্পনা থেকে এমন উদ্যোগ না নিলেও এটি ভালো ফল দিয়েছে বলে জানান পিন্সে শহরের মেয়র লিডি পাস্তাউ। ২০২০ সালে বেলজিয়ামের মাউসক্রন, অ্যান্টওয়ার্প এবং লিম্বুর্গ শহরে বিনা মূল্যে মুরগি বিতরণ করা হয়। লিম্বুর্গে এক বছরেই ২ হাজার ৫০০টি পরিবারকে মুরগি দেওয়া হয় এবং মাউসক্রনে দ্বিতীয় দফায় ৫০ জোড়া মুরগি বিতরণ করা হয়েছে। তবে বাসিন্দাদের মুরগি দেওয়ার আগে তাদের একটি চুক্তি করতে হতো। এই চুক্তিতে উল্লেখ ছিল দুই বছর মুরগিগুলো তারা খেতে পারবেন না।

কোলমার হেন। ছবি: কোলমার ডট এফ আর

কোলমার হেন। ছবি: কোলমার ডট এফ আর

খাবারের বর্জ্য কমানো ভালো সমাধান

খাবারের বর্জ্য কমানোর কার্যকর সমাধান হলো খাবার নষ্ট না করা। খাদ্য যদি নষ্ট না হয় তবে তা পরিবেশ এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কিছু গবেষক মনে করেন, খাবারের বর্জ্য কমানোর চেয়ে খাবারের অপচয় কমানোর দিকে নজর দেওয়া উচিত। এতে মানুষ নিজেও পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে মুরগি ভাড়া

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব বাড়ার কারণে ডিমের অভাব দেখা দিয়েছিল। সেই সঙ্গে ডিমের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় বেড়ে গিয়েছিল ৩৬ শতাংশ। ক্যালিফোর্নিয়া বা নিউইয়র্কে সে সময় এক ডজন ডিমের দাম ছিল প্রায় ৯ ডলার। এমন অবস্থায় মুরগি বিতরণের বিষয়টি নিয়ে সেখানেও আলোচনা ওঠে। তবে এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। যদিও এমন পরিকল্পনার আদলে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার রাজ্যের এক দম্পতি ‘রেন্ট দ্য চিকেন’ নামে একটি ব্যবসা শুরু করেছেন। যেখানে গ্রাহকেরা ৬ মাসের জন্য মুরগি, খাবার এবং অন্যান্য সহায়তা ভাড়া নিতে পারেন। এর ফলে গ্রাহকেরা নিজেদের জন্য তাজা এবং সাশ্রয়ী মূল্যে ডিম সংগ্রহ করতে পারেন। ব্যবসাটি নিউ হ্যাম্পশায়ারে খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

ফ্রান্সের কোলমারের মতো শহরের এমন উদ্যোগ সমাজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির উদাহরণ। এর ফলে পরিবেশ, সমাজ এবং খাবারের বর্জ্য কমিয়ে পরিবেশ রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখা যেতে পারে।

সূত্র: বিবিসি





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত