অনেক ঘরেই আমিষের মূল উৎস ডিম। প্রতিটি কামড়ে ডিম মানুষের শরীরকে অপরিহার্য পুষ্টি দেয়। অপচয় এড়ানো ও সুস্বাস্থ্যের জন্য সঠিকভাবে ডিম সংরক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি ডিম কিনে মজুত করতে চান, তাহলে ডিম কত দিন পর্যন্ত ফ্রিজে ভালো থাকে, তা জানতে হবে।
ফ্রিজে ডিম কত দিন ভালো থাকে
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দপ্তর (ইউএসডিএ) অনুযায়ী, ফ্রিজে সাধারণত তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত ডিম ভালো থাকে। যদি ডিমগুলো সঠিকভাবে ঠান্ডা রাখা থাকে, তবে সেগুলো সেই তারিখের পরও এক বা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত নিরাপদভাবে খাওয়া যায়।
ফুড সেফটি ও কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের সদস্য এবং ইনস্টিটিউট অব ফুড টেকনোলজিস্টসের ফুড সায়েন্সের প্রধান বিজ্ঞানী জ্যাকরি কার্টরাইট বলেন, ডিমের দীর্ঘদিন ভালো রাখার কিছু উপায় রয়েছে। ডিমগুলো তাদের মূল কার্টনে রাখতে হবে এবং ডিমের সরু দিকটি নিচে রাখুন, যাতে ভালো থাকে। এতে আর্দ্রতা ধীরে হ্রাস পায় এবং ডিমের কুসুম মাঝখানে থাকে।
জ্যাকরি কার্টরাইট বলেন, ডিম ফ্রিজের দরজায় না রেখে বরং সবচেয়ে ঠান্ডা অংশে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দরজার তাপমাত্রা ওঠানামা করে।
ইউএসডিএ অনুযায়ী, রান্না করা বা সেদ্ধ ডিম ফ্রিজে প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে।
বিজ্ঞানী জ্যাকরি কার্টরাইট বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ডিম ফ্রিজে রাখতে হয়। কারণ, ডিম ধোয়ার প্রক্রিয়া ডিমের খোসার প্রাকৃতিক সুরক্ষা স্তরকে সরিয়ে দেয়, যার ফলে তারা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। আবার বিভিন্ন দেশে ডিম ফ্রিজে রাখা হয় না, কারণ, সেগুলো তাদের প্রাকৃতিক সুরক্ষা স্তর বজায় রাখে। তবে একবার যদি ডিম ফ্রিজে রাখা হয়, সেগুলো ফ্রিজেই রাখা উচিত। কারণ, ফ্রিজে রাখা ডিম বাইরে আনা হলে তার পৃষ্ঠে আর্দ্রতা (পানি) জমে, তখন ওই আর্দ্রতা ব্যাকটেরিয়া বাড়ার জন্য উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে।
স্টেট ফুড সেফটি অনুযায়ী, ডিম ধোয়ার মাধ্যমে সালমোনেলা সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। এটি একধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং মানুষের অন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের খাবারজনিত রোগের সৃষ্টি হয়, যার মধ্যে ডায়রিয়া, জ্বর, কোমর ব্যথা ও বমি সাধারণ উপসর্গ।
এদিকে ইউএসডিএ পরামর্শ দেয়, মুরগির ডিম সংগ্রহ করার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেগুলো ফ্রিজে রাখা উচিত।
ডিম ভালো আছে কি না বুঝবেন যেভাবে
যদি ডিম ভাঙার আগে দেখতে চান যে এটি ভালো আছে কি না, তাহলে একটি সহজ পরীক্ষা (ফ্লোট টেস্ট) করতে পারেন। এই পরীক্ষা ডিম ও এক গ্লাস ঠান্ডা পানির সাহায্যে করা হয়।
প্রথমে, একটি বড় গ্লাস ঠান্ডা পানি দিয়ে ভরুন। তারপর ধীরে ধীরে ডিমটি পানিতে ছেড়ে দিন।
- যদি ডিমটি তলিয়ে গিয়ে তার পাশ দিয়ে শুয়ে পড়ে, তবে এটি পুরোপুরি খাওয়ার উপযোগী।
- যদি ডিমটি তলিয়ে যায়, কিন্তু সোজা দাঁড়িয়ে থাকে; এটি পুরোনো ডিম, তবে এটি এখনো খাওয়া যায় এবং শিগগির খাওয়া উচিত।
- যদি ডিমটি পানির ওপরে ভাসতে শুরু করে, তাহলে এটি খারাপ হয়ে গেছে এবং ফেলে দেওয়া উচিত।
এই পরীক্ষা দিয়ে সহজ ও কার্যকরভাবে ডিম ভালো না নষ্ট হয়ে গেছে, তা বোঝা যায়।
ডিম কি ডিপ ফ্রিজে রাখা যায়
ডিম ডিপ ফ্রিজে রাখা সম্ভব। তবে এ জন্য ডিম ভেঙে ভালোভাবে ফেটিয়ে সেগুলো ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে অথবা ডিমের কুসুম ও সাদা অংশ আলাদা রাখতে পারেন।
ইউএসডিএ অনুযায়ী, ডিমের সাদা অংশ ফ্রিজে রাখার জন্য সবচেয়ে উপযোগী। কারণ, এর গঠন তেমন পরিবর্তিত হয় না। তবে যদি কুসুম ফ্রিজে রাখতে চান, তাহলে কুসুমের গুণগত মান ঠিক রাখতে লবণ বা কর্ন সিরাপ বা চিনি যোগ করতে হবে।
একক ডিমগুলো আইস কিউব ট্রে বা মাফিন প্যানে আলাদা রেখে ফ্রিজ করা যেতে পারে এবং সেগুলো এক বছর পর্যন্ত রাখা যায়।
তথ্যসূত্র: সিনেট