Homeলাইফস্টাইলগবেষণা বলছে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব

গবেষণা বলছে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব


সুখের বিষয়ে মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিশ্বাস ছিল, এটি ‘ইউ-আকৃতির’ বক্ররেখার মতো চলে। ছোটবেলায় বেশি থাকে, মধ্যবয়সে কমে যায় এবং পরে আবার বাড়তে থাকে। কিন্তু নতুন এক গবেষণা বলছে, এটি হয়তো আর সত্য নয়। তরুণদের সুখের গ্রাফ আর আগের মতো নেই। ছয়টি ইংরেজিভাষী দেশে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণদের সুখের মাত্রা আগের প্রজন্মের তুলনায় অনেক কম।

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ (এনবিইআর) প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে দেখা গেছে, গত এক দশকে তরুণদের জীবন নিয়ে সন্তুষ্টি ও সুখের মাত্রা ধারাবাহিকভাবে কমেছে। গবেষণাটি করেছেন সান দিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী জিন টোয়েঞ্জ এবং ডার্টমাউথ ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ ডেভিড জি ব্ল্যাঞ্চফ্লাওয়ার। এতে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি সমীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

অন্য দেশগুলোর গবেষণাগুলোও বলছে, বৈশ্বিকভাবে একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ব্ল্যাঞ্চফ্লাওয়ার ও টোয়েঞ্জের গবেষণা সুখের ঐতিহ্যবাহী ‘ইউ-আকৃতির’ বক্ররেখার ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এই পরিবর্তন কতটা গুরুত্বপূর্ণ? কেন তরুণদের মধ্যে অসুখী হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে?

গবেষকেরা বলছেন, ১২ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এই পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট। এই বয়সী অনেকেই উচ্চমাত্রার বিষণ্নতা ও মানসিক চাপের শিকার, যা তাদের তুলনায় সামান্য বড়দের মধ্যে তেমন দেখা যায় না। অন্যদিকে, বয়স্কদের মধ্যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুখের মাত্রা বাড়তে থাকে।

এই নাটকীয় পরিবর্তন গবেষকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। কারণ, তরুণ প্রজন্ম এমন এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে—যেখানে কোভিড-পরবর্তী বিশ্ব, ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তার ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তাদের জন্য নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, সুখ কমে যাওয়ার সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহারের স্পষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তারের কারণে বর্তমান তরুণদের অভিজ্ঞতা আগের প্রজন্মের তুলনায় একেবারে ভিন্ন।

আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গবেষক ব্ল্যাঞ্চফ্লাওয়ার বলেন, ‘ইন্টারনেটই প্রধান কারণ। এই প্রবণতার ব্যাখ্যা দিতে অন্য কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।’

জরিপ প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চের ২০২৪ সালে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ৪ মার্কিন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে ৩ জনই বলেছেন, তারা যখন তাদের স্মার্টফোন ছাড়া থাকেন—তখন বেশি সুখী বা প্রশান্তি অনুভব করেন। ২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রিটিশ কিশোর-কিশোরীরা ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে কম সুখী। গবেষকেরা এটিও দেখেছেন যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই এর অন্যতম প্রধান কারণ।

ব্ল্যাঞ্চফ্লাওয়ারের বক্তব্যের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের গবেষণাগুলোর ফলও মিলে যায়। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় তরুণদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারের বিস্তার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বৃদ্ধির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আফ্রিকান দেশগুলোর তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর করা এনবিইআরের ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, আফ্রিকার বিশাল জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশি মানুষ কখনো ইন্টারনেট ব্যবহার করেননি। তবে যারা ব্যবহার করেছেন, তাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি বেশি দেখা গেছে।

সেই গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘ইন্টারনেট না থাকাটা সম্ভবত ব্যাখ্যা করে, কেন আফ্রিকায় তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য অন্যদের তুলনায় কম খারাপ হয়েছে। তবে সামনে ঝুঁকি আছে, কারণ আফ্রিকায় স্মার্টফোন বিক্রি দ্রুত বাড়ছে।’ গবেষণায় দেখা গেছে, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের তরুণদের মধ্যে এখনো ‘ইউ-আকৃতির’ সুখের বক্ররেখা বিদ্যমান, যা কম ইন্টারনেট ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।

ব্ল্যাঞ্চফ্লাওয়ার বলেন বলেন, ‘এটি স্পষ্টতই একটি বৈশ্বিক প্রবণতা। বিশেষ করে তাদের জন্য, যারা ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত।’ তিনি আরও বলেন, মধ্যবয়সীদের মধ্যেও যারা স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন, তাদের সুখের মাত্রা আগের প্রজন্মের একই বয়সী মানুষের তুলনায় কম।

তবে শুধুমাত্র ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনকেই দায়ী করা যাবে না। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও একাকিত্বও তরুণদের সুখ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। এই বিষয়ে গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘সংস্কৃতিগত বেশ কিছু পরিবর্তন জীবন সম্পর্কে সন্তুষ্টির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যে আছে—মানুষের সঙ্গে কম মেলামেশা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং আয় বৈষম্যের বৃদ্ধি।’

২০২৪ সালের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট অনুযায়ী, ৩০ বছরের কম বয়সী তরুণদের মধ্যে সুখের মাত্রা নাটকীয়ভাবে কমে গেছে, বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির পর। যুক্তরাষ্ট্রে এই অবনতি এতটাই তীব্র যে, দেশটি ২০১২ সাল থেকে প্রকাশিত এই সুখ সূচকের শীর্ষ ২০টি দেশের তালিকা থেকে প্রথমবারের মতো ছিটকে গেছে।

গবেষণার লেখকেরা বলছেন, তরুণদের সুখ কমার কারণ আরও গভীরভাবে বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন, যাতে নীতিনির্ধারকেরা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেন। তবে ব্ল্যাঞ্চফ্লাওয়ার এই প্রবণতা বদলানোর সম্ভাবনা নিয়ে সন্দিহান। তিনি বলেন, ‘সমস্যা হলো, তরুণদের কল্যাণ অব্যাহতভাবে কমছে। এটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে।’ তিনি পরামর্শ দেন, ‘ফোন থেকে দূরে থাকুন এবং সবার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করুন।’

আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

আরও খবর পড়ুন:





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত