Homeলাইফস্টাইলউপকারিতা জেনে বৈশাখে পান্তা খান

উপকারিতা জেনে বৈশাখে পান্তা খান


পান্তা খাওয়ার আমাদের প্রাচীন সংস্কৃতি। তবে বৈশাখের প্রথম দিন সকালে পান্তা খাওয়া শহুরে সংস্কৃতির নতুন সংযোজন। বাংলাদেশে এ খাবারটি প্রায় সারা বছরই খাওয়া হয়। পান্তা শরীরের জন্য উপকারী। এতে ভিটামিন বি থাকে। তবে এর পরিমাণ এবং উৎস ফারমেনটেশন প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে। সাধারণ ভাতে (বিশেষ করে সাদা চালে) ভিটামিন বি কম থাকে। কিন্তু ফারমেনটেশনের সময় ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য অণুজীবের কার্যকলাপের ফলে ভিটামিন বি এর পরিমাণ বাড়তে পারে।

পান্তা ভাতে ভিটামিন বি কোথা থেকে আসে

কাঁচা চালে, বিশেষ করে আঁশযুক্ত চালে থায়ামিন (বি১), নিয়াসিন (বি৩), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) এবং পাইরিডক্সিন (বি৬) থাকে। তবে সাদা চালে প্রক্রিয়াকরণের সময় এগুলোর বেশির ভাগ হারিয়ে যায়। ফারমেনটেশনের সময় ল্যাকটোব্যাসিলাস, পেডিওকোকাস এবং স্যাকারোমাইসিস জাতীয় অণুজীব ভাতের স্টার্চ ও অন্যান্য উপাদান ভেঙে ভিটামিন বি সংশ্লেষণ করে। এই প্রক্রিয়ায় ভিটামিন বি১, বি৬ এবং বিশেষ করে বি১২ উৎপন্ন হতে পারে।

কোন কোন ভিটামিন বি থাকে এবং কতটা

থায়ামিন (বি১): সাধারণ ভাতে প্রতি ১০০ গ্রামে ০.০৭০.৪ মিলিগ্রাম থাকে। তবে এটি সাদা চালে কম, আঁশযুক্ত চালে বেশি থাকে। ফারমেনটেশনে এটি সামান্য বেড়ে হতে পারে ১০ থেকে ২০ শতাংশ।

নিয়াসিন (বি৩): সাধারণ ভাতে ১.৬৪.৩ মিলিগ্রাম থাকে। ফারমেনটেশনে জৈবতার কারণে বাড়ে। তবে নতুন করে উৎপন্ন হয় না।

পাইরিডক্সিন (বি৬): সাধারণ ভাতে থাকে ০.১০.৫ মিলিগ্রাম। ফারমেনটেশনে এটি কিছুটা বাড়ে।

ফোলেট (বি৯): ফারমেনটেশনে অণুজীবের কার্যকলাপে ফোলেট বৃদ্ধি পায়। ফারমেনটেড ভাতে ফোলেট ২ হাজার ৩০ শতাংশ বাড়তে পারে।

ভিটামিন (বি১২): সাধারণ ভাতে বি১২ থাকে না। কারণ এটি প্রাণীজ উৎসে বেশি পাওয়া যায়। তবে ফারমেনটেশনে নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া বি১২ উৎপন্ন করতে পারে। তবে এর পরিমাণ বেশ কম অর্থাৎ প্রতি ১০০ গ্রামে ০.০১০.০৫ মাইক্রোগ্রাম।

পান্তা ভাত ভিটামিন বিএর প্রধান উৎস নয়। তবে ফারমেনটেশনের কারণে সাধারণ ভাতের তুলনায় এর পরিমাণ ও শোষণ ক্ষমতা বাড়ে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণা কী বলে

ফারমেনটেশনের প্রভাব

‘ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন’ (২০২০) জার্নাল জানায়, ফারমেনটেড চালে ভিটামিন বি৯ বা ফোলেট এবং বি১২ সংশ্লেষণ হয়। তবে এটি অণুজীবের প্রকার ও ফারমেনটেশন সময়ের ওপর নির্ভর করে। ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা ফারমেনটেশনে এগুলো সর্বোচ্চ হয়। ‘জার্নাল অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড কেমিস্ট্রি’ (২০১৮) অনুসারে, ফারমেনটেশনে ফাইটিক অ্যাসিড কমে যাওয়ায় ভিটামিন বিএর শোষণ ১ হাজার ৫২৫ শতাংশ বাড়ে। ‘অ্যাপলায়েড মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি’ (২০১৬) এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নির্দিষ্ট ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া ফারমেনটেড খাবারে অল্প পরিমাণে বি১২ তৈরি করতে পারে, যা পান্তা ভাতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

কোন চালে কত সময়ে এবং কীভাবে পান্তা তৈরি করবেন

চালের ধরন: আঁশযুক্ত চালে অর্থাৎ ব্রাউন বা লাল চাল প্রাকৃতিকভাবে বি ভিটামিন বেশি থাকে। তাই পান্তা তৈরিতে এগুলো ব্যবহার করলে উপকার বেশি।

ফারমেনটেশন সময়: ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা সর্বোত্তম। বেশি সময় রাখলে ভিটামিন ভেঙে যেতে পারে।

পরিবেশ: পরিচ্ছন্ন পাত্র ও পানি না হলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পেয়ে ভিটামিন উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।

তাপমাত্রা: ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া ভালো কাজ করে। এতে ভিটামিন বি বেশি তৈরি হয়।

মাটির পাত্রে পান্তা তৈরি করলে তার উপকারিতা বেশি পাওয়া যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাটির পাত্রে পান্তা তৈরি করলে তার উপকারিতা বেশি পাওয়া যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

উপকারিতা

বি১, বি৩ এবং বি৬ কার্বোহাইড্রেটকে শক্তিতে রূপান্তরে সহায়তা করে।

বি৯ বা ফোলেট এবং বি১২ লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে কাজ করে এবং এটি রক্তাল্পতা প্রতিরোধে সহায়ক।

বি৬ এবং বি১২ স্নায়ু স্বাস্থ্য ও মানসিক সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

পেটের অস্বস্তি দূর করতে, পেটের প্রোবায়োটিকস বাড়াতে পান্তা অনন্য।

পান্তা ভাতে ভিটামিন বি থাকে, বিশেষ করে বি১, বি৬, বি৯ এবং অল্প পরিমাণে বি১২। ফারমেনটেশনের কারণে এগুলোর পরিমাণ ও শোষণ ক্ষমতা সাধারণ ভাতের তুলনায় বেশি হয়। তবে এটি ভিটামিন বিএর প্রধান উৎস নয়। এ ভিটামিনের দৈনিক চাহিদা পূরণের জন্য অন্য খাবার, যেমন মাছ, ডিম, ডাল ইত্যাদি প্রয়োজন। আঁশযুক্ত চাল দিয়ে পান্তা ভাত তৈরি করলে এবং সঠিকভাবে ফারমেন্ট করলে ভিটামিন বিএর উপকার বেশি পাওয়া যায়। মাটির পাত্রে পান্তা তৈরি করা আরও বেশি উপকারী। তবে ১০০ থেকে ১৫০ গ্রামের বেশি পান্তা খাওয়া উচিত নয়।

বৈশাখে পান্তা খাবেন, জেনেই খান। এটা শুধু একদিনের খাওয়া নয়। আপনি চাইলে গরমকালে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন সকালের নাশতায় পান্তা খেতে পারেন। সেই সঙ্গে ভিটামিন বি ঘাটতি পূরণে পান্তা হতে পারে আপনার সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ পথ্য।

লেখক: খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত